ভিডিও

সড়কে মৃত্যুর মিছিল, অধিকাংশই বাইক দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৪, ১২:৩৪ দুপুর
আপডেট: অক্টোবর ১৯, ২০২৪, ১২:৩৪ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

দেশে গত সাড়ে ৫ বছরে ৩২ হাজারের বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে, আর এসব দুর্ঘটনায় প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে হিসাব দিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ সংগঠন বলেছে, এসব মৃত্যুর অধিকাংশই ঘটেছে বাইক দুর্ঘটনায়। ২০১৯ সাল থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত সারা দেশের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করেছে সংগঠনটি।

সংগঠনটি বলছে, এ সময় ৩২ হাজার ৭৩৩ সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫ হাজার ৩৮৪ জন নিহত হয়, আহত হন ৫৩ হাজার ১৯৬ জন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে - এসব মৃত্যৃর অধিকাংশই ঘটেছে বাইক দুর্ঘটনায়। সবচেয়ে বেশি ১১ হাজার ৬৬৯ দুর্ঘটনার সঙ্গে মোটরসাইকেল জড়িত, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১১ ৫৯৩ জন। সাধারণত মোটরসাইকেল চালায় তরুণরা।

তাদের বড় অংশই  যথাযথ প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা ছাড়াই লাইসেন্স নিয়ে বা না নিয়ে রাস্তায় নামছেন। তারুণ্যের প্রভাবে অনেকেই বেপরোয়া গতিতে চালানোর ইচ্ছা দমন করতে পারে না। এ ছাড়া তাদের বেশির ভাগেরই  মহাসড়কে চালানোর অভিজ্ঞতা কম, এর নিয়ম-কানুন সম্পর্কে তারা অসচেতন এবং বড় ও ফাঁকা সড়ক পেলে গতির ঝড় তোলার প্রলোভন সামলাতে পারেন না।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন তথ্য নিয়েছে ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর থেকে। পাশাপাশি নিজস্বভাবে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলেও জানা যায়।

এ ছাড়া দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির হিসাব নিয়ে ফাউন্ডেশন বলেছে, যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য অপ্রকাশিত থাকে, সে জন্য এই হিসেবের সঙ্গে আরও ৩০ শতাংশ অর্থ যোগ করতে হবে। দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ যানবাহনের ক্ষতি হয়েছে, তার তথ্য না পাওয়ায় সম্পদের আর্থিক পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি বলে সংগঠনের ভাষ্য।

এটা সত্য, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণ কিশোর-যুবকদের বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানো; অতি উচ্চগতির মোটরসাইকেল ক্রয়ে সহজলভ্যতা ও চালনায় বাধাহীন সংস্কৃতি; মোটরযান চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা: দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির শিথিলতা; বাস-ট্রাক-পিকআপ - প্রাইভেটকার মাইক্রোবাস সহ দ্রুতগতির যানবাহনের বেপরোয়া গতি; চালকদের অদক্ষতা ও অস্থিরতা; ইজিবাইক-সিএনজি-নসিমন-ভটভটি ইত্যাদি স্বল্পগতির যানবাহন অদক্ষ হাতে চালানো; সড়ক-মহাসড়কে ডিভাইডার না থাকা; কিশোর-যুবকদের ভাষা-ভঙ্গি; সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা না থাকা; পারিবারিকভাবে সন্তানদের বেপরোয়া আচরণকে প্রশ্রয় দেওয়া বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর সংস্কৃতি গড়ে ওঠা ইত্যাদি।

তারা এতটাই বেপরোয়া যে, রাস্তায় যানজট থাকলে ফুটপাতে মোটর সাইকেল উঠিয়ে দেয়। ফলে জনচলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে যাতায়াতজনিত দুর্ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা নেই এ দেশের মানুষের।

কিন্তু ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাগুলো কেন হচ্ছে, কারা এর জন্য দায়ী তা শনাক্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ ও তৎপরতা চোখে পড়ছে না। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণেই এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই এ দেশের মানুষ আপনজন হারিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে আর নি:স্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার।

আমরা মনে করি সড়কে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মোটর সাইকেল আরোহীরা খুবই বেপরোয়া। তারা সুযোগ পেলেই দ্রুত বেগে মোটরসাইকেল চালান। ফলে যত্রতত্র দুর্ঘটনা ঘটছে এবং মানুষ মারা যাচ্ছে। 
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের পরামর্শ ও সুপারিশ করা হলেও তা যে অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত হচ্ছে, দেশে প্রতিদিন ঘটা সড়ক দুর্ঘটনাগুলোই এর বড় প্রমাণ।

সড়ক দুর্ঘটনারোধে আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়েও যথাযথ নজর দিতে হবে। এটা সত্যি যে, শহরে রাস্তার চেয়ে যানবাহন বহুগুণ বেশি। যানবাহন কমানো যাবে না। তাহলে একটাই করণীয় আগে শহরে নতুন নতুন রাস্তা বের করুন। সরু রাস্তাগুলো প্রশস্ত করুন- এটা সময় সাপেক্ষ কাজ হলেও এর কোনো বিকল্প নেই।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS