ভিডিও

চাকরির প্রবেশ ও অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি কেন জরুরি

রবিঊল ইসলাম (রবীন)

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৪, ১০:৫৮ রাত
আপডেট: অক্টোবর ২২, ২০২৪, ১০:৫৮ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

বর্তমান সময়ে দেশে একটি আলোচিত বিষয় হলো চাকরির প্রবেশ সীমা বৃদ্ধি। পাশাপাশি চর্চা হচ্ছে অবসরের বয়স সীমা নিয়েও। এ দেশে চট করে  বা খুব সহজে সববিছু হয়না। অনেক আন্দোলন হয়েছে চাকরির বয়স সীমা ৩৫ করা নিয়ে।

বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনটি করেছে। চাকরিতে বয়সসীমা এবার হয়তো বাড়বে। বিষয়টি কয়েকটি ধাপ পার করেছে। বর্তমান বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলে আছে। অচিরেই আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে পারবো । চাকুরীর বয়স সীমা ৩০ থেকে আরো বৃদ্ধি হোক, এটা সব মহলই বর্তমানে চাচ্ছে।

প্রবেশের এবং অবসরের দুটির মেয়াদ বাড়ছে। যদিও সরকার গঠিত একটি অনুসন্ধান কমিটি অবসরের বয়স সীমা নিয়ে কোন সুপারিশ করেনি। তাঁরা শুধু প্রবেশের সীমা  পুরুষের ক্ষেত্রে ৩৫ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৩৭ করার সুপারিশ করেছে।

এত বড় একটা বিষয় তাই হয়তো সরকার গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে। এ ক্ষেত্রে প্রবেশের বয়স সীমা বিষয়ে যুক্তি কি বলছে । দেশে একজন শিক্ষার্থীর মাষ্টার্স  শেষ করতে বয়স ২৫ এর বেশি হয়ে যায়। এ সময় একাডেমিক পড়াশুনার কারণে অধিকাংশ জনের পক্ষে চাকুরীর জন্য বড় ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে উঠে না। তাই সঠিক চাকরির জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে আরো ২ বছর চলে যায়।

সুতরাং চাকরির বাজারে পৌছাতে ২৭ বছর লেগে যায়। পড়াশুনা শুরু ৫ বছর থেকে শেষ বছরে ২৫ বছর+ প্রস্তুতি ২ বছর ২২ বছরের দীর্ঘ পড়াশোনা ও প্রস্তুতি শেষে মাত্র ৩ বছর আপনার অর্জিত সনদের মেয়াদ একবার ভাবুন তো, বিষয়টা এমন হবে কেন? পাশাপাশি আমরা যদি ৬০ বছর শারীরিক সক্ষমতা অটুট থাকে তাহলে চাকুরির প্রবেশের ক্ষেত্রে ৩০ বছর বয়সেই অযোগ্য হব? আমার যোগ্যতা থাকলে আমি  ৫৯ বছর ৩৬৪ দিন পর্যন্ত চাকরির চেষ্টা করবো।

উন্নত দেশগুলিতে চাকরির বয়স সীমা ৩০এর চেয়ে বেশি। আপনে শুনলে অবাক হবেন যে সারা বিশ্বে  ১৬২ টি দেশে চাকরির বয়স সীমা ৩৫ চেয়ে উর্ধ্বে। কোন দেশে উন্মুক্ত।  প্রতিবেশি দেশে ৩৫-৪০ পর্যন্ত। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র,ভারতের মত দেশে চাকুরির বয়স সীমা ৪০ থেকে ৫৯ বছর। তাহলে কোন যুক্তিতে আমাদের বয়স ৩০ করা হয়েছিল? আমরা কি অন্ধের দেশে বসবাস করি?

দেশে গড় আয়ু, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি হয়েছে। শুধু বোকার মত আমরা ৩০ পড়ে রইলাম বছরের পর। আর এটা নিয়ে শুধু বছরের পর বছর গবেষণা করে গেলাম। এবার আসি অবসরের প্রসঙ্গে। আমাদের অধিকাংশের প্রাথমিকে বয়স দিয়েছে কিছু না বুঝে সেই সময়ের শিক্ষকরা বা কেরানীরা।  আমাদের  অভিভাবকরা তখন বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখেন নি।

তাই আমরা শৈশবে বয়স নিয়ে  চূড়ান্ত একট ঠকা ঠকেছি। কিন্তু সেই আবেগ তো সরকার বা কেউ বুঝবে না। কিন্তু একটা বিষয় মাথায় রাখতেই হবে, তাহলো আপনার চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পুর্ণ না হলে পেনশন জুটবে না কপালে। আবার মানুষের গড়আয়ু বর্তমানে ৭৪ হয়েছে। তাই অবসরেরও মেয়াদ ২/৪ পর্যন্ত বাড়ানো উচিত। চাকরির অবসরের বয়স সীমা ৬২ করা উচিত।

বেসরকারী কলেজে চাকরি করি। আমার কয়েকজন সহকর্মী অবসরে গেছেন। কেউ ৩ বছর আবার কেউ ২  বছর আগে। কিন্তু আমার অধিকাংশ সহকর্মী অবসরের পর  অবসর  বা কল্যাণের টাকা পায়নি। তাদের মুখের দিকে তাকানো যায়না। এ রকম অনেক বেসরকারি কলেজের শিক্ষকরা অবসরে গিয়ে বছরের পর বছর পরেও কোন অবসর পরবর্তি সরকারি টাকা পায়নি।

অথচ এই শিক্ষকরা চাকরি করার সময় প্রতিমাসে তাদের বেতন থেকে মূল বেতনের ১০%  কেটে নেওয়া হয়েছে। সেই টাকা তাহলে কোথায় গেল? অদ্ভুত এক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতি মাসে শিক্ষকরা ১০% করে টাকা দিচ্ছে,অথচ তারা কোনদিন জানতে পারে না এই খাতে তার  কত টাকা দেওয়া হল। বর্তমান সরকার বিষয়টি দেখবেন আশা করি।

বর্তমান সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আলোচনা সমাজে চলছে তা হলো, চাকরির প্রবেশ ও অবসরের বয়স সীমা বৃদ্ধি বিষয়ে। এই ইস্যু নিয়ে চাকরির বয়স সীমা ৩৫ প্রত্যাশিরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু ফল তারা পাচ্ছিল না। এইবার হয়তো একটা ভাল ফল তারা পাবে। ইতিপূর্বে যতবার চাকুরীর বয়স সীমা বৃদ্ধি হয়েছে, প্রায় সব বার অবসরের বয়স সীমা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিষয়টি এটার সাথে অপরটি অনেকটা পরিপূরক।


লেখক : সহকারী অধ্যাপক-কলামিষ্ট

01725-045105



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS