ভিডিও

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি : কারণ ও প্রতিকার

আনোয়ার হোসেন সোহাগ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৪, ১১:০৯ রাত
আপডেট: অক্টোবর ২৩, ২০২৪, ১১:০৯ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যে বিষয়টি কয়েকদিন পরপর আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় সেটি হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। বাজারে হঠাৎ করেই এমন অস্থিতিশীলতা খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষের জরাজীর্ণ জীবনকে ক্রমশ নাভিশ্বাস করে তোলে। অবশ্য কেবল খেটে খাওয়া নিম্ন -আয়ের মানুষেরা নয় বরং মধ্যবিত্ত পরিবারের সিংহভাগ মানুষেরাই চরম পর্যায়ের ভোগান্তির শিকার হন। বাজারে হঠাৎ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি মানুষের ক্রয়সীমার নাগালের বাইরে চলে যাওয়াকে অনেকেই অস্বাভাবিক ব্যাপার বলে দাবি করেন এবং এর মূল কারণ হিসেবে বাজার সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন।

কিন্তু ব্যবসায়ীদের অনেকেই নতুন করে দ্রব্যপণ্যের বিশেষ করে শাক-সবজি, মাছ, ডিমের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উজানের ঢলে বাংলাদেশের বেশকয়েকটি জেলা ক্রমানুসারে প্লাবিত হওয়াকেই দায়ী করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি নতুন কোন সমস্যা নয় বরং দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা মোকাবেলা করে আসতে হচ্ছে যার পেছনে কলকাঠি নাড়াচ্ছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী এবং বাজার সিন্ডিকেট। বিগত দিনগুলোতে যে ডিম হালি প্রতি ৪০টাকা থেকে ৫০ টাকার মধ্যে ছিল সেই ডিমের হালি বর্তমান বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০টাকা থেকে ৭০ টাকা ধরে, আলু বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৬০ টাকা ধরে, লাউ পিস প্রতি ৯০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, বরবরটি ৭০টাকার ঊর্ধ্বে।

অথচ বাজারে এমন মূল্যে বর্তমানে এসব পণ্য কেনার কোন কথা নয়।  মৌসুমী শাক-সবজির মূল্য বৃদ্ধির পেছনে বন্যার প্রভাব যথেষ্ট পরিমাণে থাকলেও আলু কিংবা ডিমের মূল্য বৃদ্ধি কখনোই কাম্য নয়। আর এই ডিমের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি স্পষ্টভাবেই বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজিকে সামনে নিয়ে আসছে। বিশেষ করে এদেশের  কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিকে পুঁজি করে নিজেদের  অধিক মুনাফা লাভের আশায় বাজারকে অস্বাভাবিক করে তুলছেন।

যার প্রমাণ পাওয়া যাবে অবৈধভাবে ডিম মজুদ নিয়ে খবরের পাতায় চোখ মেলে তাকালে। তবে এভাবে বাজারের অবস্থা চলতে থাকলে সাপ্তাহখানেক পরে এই অবস্থা আরো বেশি বেগতিক পর্যায়ে মোড় নেবে। তাই এখনই যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। যে বিষয়গুলোর দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে হবে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদী টাস্কফোর্স গঠন করে কোন ব্যবসায়ীর কাছে কতোটুকু পণ্য মজুদ আছে তার স্বচ্ছতা নিশ্চিতের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের নীলনকশার মূলোৎপাটন করতে হবে।

নিয়মিত বাজার তদারকির ব্যবস্থার পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ী, কালোবাজারিদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ডিম, পেঁয়াজসহ বিশেষ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে শুল্ক-কর কমাতে হবে। টিসিবির পণ্য মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দিতে হবে এবং এর পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।  তবে পূর্বে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি বারবার আলোচনায় চলে আসে। আর তাই এর সুষ্ঠু সমাধানের জন্যে ব্যক্তিপর্যায়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।

কেননা, আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোকই কোন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির খবর শোনা মাত্রই সেই পণ্যটি অধিকহারে মজুদের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন ফলে যোগানের চেয়ে চাহিদার বৃদ্ধি ঘটে এবং স্বাভাবিকভাবেই বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

তাই এই বিষয়টির দিকে বিশেষভাবে আলোকপাতের পাশাপাশি ব্যক্তিপর্যায়ে মাঠ কৃষি কিংবা ছাদ কৃষির অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষকদের স্বল্পমূল্যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও মজুদের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

সনাতন পদ্ধতির চাষাবাদ ও মজুদের বদলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও মজুদের ব্যাপারে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি এইসব স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় তাহলে  বাংলাদেশের কৃষিজ পণ্যের ঘাটতি মেটানোর পাশাপাশি বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।


লেখক : শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

01602-198256



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS