ভিডিও

ঐতিহাসিক রায়

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৪, ১১:২০ রাত
আপডেট: অক্টোবর ২৩, ২০২৪, ১১:২০ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত করে যে রায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সাত বছর আগে দিয়েছিলেন। পর্যালোচনার পর সেই সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত। বহুল আলোচিত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহালের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা পুনর্বিবেচনার রিভিউ গত রবিবার নিষ্পত্তি করেছেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির বেঞ্চ। বহাল রেখেছেন বাতিলের রায়। ফলে আট বছর পর বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরে পেল সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। এতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল হলো। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হলে সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গে টানা পোড়েন তৈরি হয়। এরপর এক রিট মামলার রায়ে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। ২০১৭ সালের ওই রায়েই বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলা হয়। তখনকার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চের ওই রায় আওয়ামী সরকারের সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের টানা পোড়নে নতুনমাত্রা দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষ ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলেও পরে আর শুনানির উদ্যোগ নেয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে বিচারপতি অপসারণে কোনো বাধা ছিল না। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং রিভিউ আবেদন ঝুলে থাকায় গত সাত বছরে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আর গঠন হয়নি। ফলে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরও হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত ঝুলে রয়েছে পাঁচ বছর ধরে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের দোসর বিচারকদেরও অপসারণের দাবি তোলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলন। ফলে গত সপ্তাহে ১২ জন বিচারককে আপাতত বেঞ্চ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন প্রধান বিচারপতি। তখনই ষোড়শ সংশোধনী মামলা ফের আলোচনায় আসে। আন্দোলনের সূত্র ধরে ষোড়শ সংশোধনী মামলার রিভিউ আবেদনটি রোববার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসে। রায়ের পর আইনজীবীগণ সাংবাদিকদের বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ২ থেকে ৮ পর্যন্ত ধারা বাতিল করা হয়েছিল।

আপিল বিভাগ সেগুলো পুনর্বহাল করেছে। আর অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, এই রায়ের ফলে এখন থেকে কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এলে সেই অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ দুইজন বিচারপতিকে নিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ওই বিচারপতিকে অপসারণ বা ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

আমরা মনে করি, বিগত সরকারের দীর্ঘ শাসনামলে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানাভাবে দলীয়করণ ও রাজনৈতিক প্রভাব বলয়ভুক্ত করা হয়। অত্যন্ত দু:খজনক যে, এ প্রভাব বলয়ের বাইরে ছিল না বিচার বিভাগের মতো সবচেয়ে স্পর্শকাতর রাষ্ট্রীয় স্তম্ভও।

বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বিভাগ ওই বছর ৩ জুলাই যে রায় দেন, তাতে হাইকোর্টের রায়ের কিছু পর্যবেক্ষণ বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল সর্বসম্মতভাবে খারিজ করে দেওয়া হয়। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের ১ আগস্ট। সেখানে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল এবং ৯৬ অনুচ্ছেদের ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ধারা পুনর্বহাল করা হয়।

তাতেই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান সংবিধানে ফেরে। সেই সঙ্গে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পদ্ধতি কার্যকর করতে বিচারকদের জন্য ৩৯ দফার নতুন একটি আচরণবিধি চূড়ান্ত করে দেয় আপিল বিভাগ। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা যথার্থই বলেছেন, এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অভিযোগ জানাবার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ তৈরি হলো।

বিগত দিনে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকায় রাজনৈতিক প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত হতে পারেনি বিচার বিভাগ। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছায় বিচার বিভাগ ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হতে পারছে। একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে। আমরা এই ঐতিহাসিক রায়কে স্বাগত জানাই।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS