ভিডিও

ভারতের স্বস্তিদায়ক নির্বাচনি ব্যবস্থা

প্রকাশিত: জুন ০৯, ২০২৪, ০৬:৪৭ বিকাল
আপডেট: জুন ১০, ২০২৪, ০৬:১৪ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

জনগণই যে গণতন্ত্রের মূল চালিকাশক্তি তা ভারতের সদ্য সমাপ্ত পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রমাণিত হলো। ভারতের লোকসভা (পার্লামেন্ট) নির্বাচনে দেখা গেল মোদি ম্যাজিকে ধস নেমেছে। নির্বাচনের আগে মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপির) শ্লোগান ছিল এবার চারশত পার অর্থাৎ বিজেপি ৪শ’ আসন দখল করে একাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল।

এককভাবে সরকার গঠন করতে যে আসন লাগে তা এবার পায়নি বিজেপি। ফলে তাদের অন্যান্য দলগুলোর ওপর নির্ভর করে জোট সরকার গঠন করতে হচ্ছে। বিরোধী দল কংগ্রেস এবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিজেপি এককভাবে পেয়েছে ২৪১ আসন। আর বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পেয়েছে ২৯৬ আসন। ওদিকে, ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ২২৮ আসন।

কংগ্রেস এককভাবে এগিয়ে ১০০ আসনে। ভোটের ফলাফলে দেখা গেছে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনি ফলের বিপরীতে এবার মোদির দল বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে পারেনি। ফলে এবার আর সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি দলটি।

একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে কেন্দ্রে সরকার গড়ার জন্য মোদিকে নির্ভর করতে হয় জোট এনডিএর দুই শরিক তেলেঙ্গানা রাজ্যের চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং বিহারের মূখ্যমন্ত্রী নিতিশ কুমারের জেডিইউসহ আরও কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলের ওপর।

তাই বলা অসঙ্গত হবে না যে, এক দশক ধরে ক্ষমতায় বিজেপির যে একচ্ছত্র প্রাধান্য ছিল, তার অবসান ঘটল। আসলে এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটাই যে, জিত হয়েছে ভারতীয় জনগণের। সব জরিপ- পূর্বাভাস ভুল প্রমাণ করে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিরোধী ইন্ডিয়া জোট আশাতীত ফল করেছে। কংগ্রেস-সমাজবাদী দলের জোট এবার উত্তর প্রদেশে বিজিপিকে ধরাশায়ী করেছে।

এই জোট এবার ভারতের সবচেয়ে বৃহৎ এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদির দলকে হারিয়ে লোকসভায় নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করেছে।এতে শক্তিশালী বিরোধী দলের লোকসভায় সরব উপস্থিতি দেশটির গণতান্ত্রিক-ব্যবস্থা অবনমিত অবস্থা থেকে বলবান হবে। শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের যারা স্বৈরাচার বিরোধী লড়াইয়ে মাঠে ময়দানে লিপ্ত আছেন, তারা দেশটির সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে গভীর দৃষ্টি রেখেছেন।

তাই ভারতের নির্বাচনি ফল বৈশ্বিকভাবে গণতন্ত্রকামীদের সামান্য হলেও আশার সঞ্চার করেছে। পর্যবেক্ষরা বলছেন মোদি সরকারের আমলে সম্পদের বন্টনে সমতা ছিল না। ভারতের গ্রাম ও শহরের মধ্যে অসাম্য ও বেকারত্ব বেড়েছে।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ব্যর্থতার প্রধান কারণ হলো ধর্মীয় ভেদাভেদের রাজনীতি। মুসলিমদের অনুপ্রবেশকারী বলা সহ ধর্মীয় নিপীড়নের কর্মকান্ড ভারতের সাধারণ জনগণ পছন্দ করেনি। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ রামমন্দিরের নামে বিজেপি কট্টরপন্থী রাজনীতি করেছে। সেই রামমন্দিরের অবস্থান যেখানে সেই অযোধ্যায় বিরোধী সমাজবাদী পার্টির কাছে পরাজিত হয়েছে বিজেপি।

এ থেকে মোদির ধর্মীয় রাজনীতি ভুল প্রমাণিত করেছে ভারতের জনগণ। কারণ দিন শেষে চাকরি, দারিদ্রতা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের বিষয়গুলো সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। এর বাইরে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা মোদি সরকার, উত্তর প্রদেশে যোগী সরকার ভিন্ন মতের মানুষকে দমন করতে পুলিশ ও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে যেভাবে ব্যবহার করেছে তাতেও জনগণ ক্ষুব্ধ ছিল।

ভিন্নমতের এসব মানুষের সিংহভাগই দরিদ্র ও প্রান্তিক। বিজেপি এসব জনগোষ্ঠীর সমর্থন হারিয়েছেন। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে বিজেপি নিজস্ব কোন ভিত্তি দাঁড় করাতে পারেনি আজ পর্যন্ত। তাকে আঞ্চলিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়।

আমরা ভারতের এ নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিতে পারি। তারা তাদের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো মজবুত করে গড়ে তুলতে পেরেছে। তাদের নির্বাচনে কেউ ভোট কারচুপির প্রশ্ন তোলে না যদিও ভোট গ্রহণের একমাস পর ভোট গণনা হয় সেখানে।

তারা নির্বাচন ব্যবস্থা এবং আমলাতন্ত্রকে নিরপেক্ষ রাখতে পেরেছে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে। আমরা আমাদের দেশেও ভারতের এ উদাহরণটুকু যেন কার্যকর করতে পারি- সেটাই প্রত্যাশা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS