ভিডিও

অর্থপাচার থামছে না

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৪, ০৬:১০ বিকাল
আপডেট: জুন ২৫, ২০২৪, ০৬:১০ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ও কৃষিবিদ শামসুল আলম বলেছেন, বছরে ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বা ৮১ থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। টাকা পাচার থেকেই ডলার সংকটের শুরু। তাই জরুরি ভিত্তিতে এটি রোধ করার পদক্ষেপ দরকার। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে একটি সেমিনারে এ কথা বলেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ থেকে প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার হয়-যা সাবেক প্রতিমন্ত্রীর কথায় প্রতিধ্বনিত হলো। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও সংস্থার প্রচুর প্রতিবেদন রয়েছে এ বিষয়ে। বিদেশে অর্থ পাচার দেশের অর্থনীতির অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এটা বন্ধ হওয়া জরুরি। আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হতে থাকলে তা সম্ভব হবে না। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আংকটাডের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ৪৭টি স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের হার তুলনামূলক বেশি। ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিনানশিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে শুধু ২০১৫ সালেই পাচার হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে ১৩৪টি উন্নয়নশীল দেশের ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তথ্য উঠে এসেছে। জিএফআই বলেছে, উন্নয়নশীল দেশ থেকে বেশি অর্থ পাচার হয় আমদানি-রপ্তানি পণ্যের প্রকৃত নাম গোপন করে।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ২০১৫ সালে বিদেশে পণ্য কেনাবেচার যে খতিয়ান দিয়েছেন তার ১০ শতাংশই ভুয়া। আমদানিতে বেশি আর রপ্তানিতে কম দেখিয়ে ওই বছর গায়েব করা হয়েছে ১ হাজার ১৮৭ কোটি ডলার যা, ১ লাখ কোটি টাকার বেশি।

পাচারের অর্থের সংখ্যাটি বড়। এসব অর্থের উৎস মূলত দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত হয়। তবে পাচারের ক্ষেত্রে দেশের সার্বিক অবস্থা বিশেষ করে নিজের নিরাপত্তা, পরবর্তী প্রজন্মের নিরাপত্তা, সম্পদের নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন কেউ মনে করেন এসব নিরাপত্তা নেই কিংবা থাকলেও ভবিষ্যতে না থাকার অনিশ্চয়তা থাকে, তখন অনেকে বিদেশে অর্থ পাচার করেন।

আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ প্রায় সবার ছেলেমেয়ে বিদেশে থাকে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তারা টাকা সরানোর ব্যবস্থা করেন। তাদের মধ্যে এ দেশে বিনিয়োগ বা টাকা রাখায় আস্থা নেই। এসব দুর্নীতির টাকা সাধারণত হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়।

প্রতিবছরই নানা কায়দায় অর্থ পাচার বাড়ছে। যারা অর্থ পাচার করছেন তারা আর্থিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

এছাড়া জোঁক যেমন মানুষের অজান্তেই তার রক্ত চুষে নেয়, তেমন মানি লন্ডারিং চুষে নিচ্ছে দেশের অর্থনীতির রক্ত। দেশ থেকে লাগামহীনভাবে অর্থ পাচারের কারণে অর্থনীতির বিকাশ কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারছে না।

বাংলাদেশ থেকে যে বিপুলভাবে অর্থ পাচার হচ্ছে সেটি উঠে এসেছে সুইজারল্যান্ডের স্ইুস ফাউন্ডেশন পরিচালিত গবেষণা সংস্থা ব্যাসেল ইনস্টিটিউট অন গভর্ন্যান্সের জরিপ প্রতিবেদনে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানি লন্ডারিং নিয়ে কাজ করা এ সংস্থাটি প্রকাশিত জরিপ প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি বেড়েছে।

এক দিকে অর্থ পাচারের মতো অপরাধ কেন রোধ হচ্ছে না, সেটি যেমন আমলে নিতে হবে; তেমনি অর্থ পাচার বন্ধ করতে সবধরনের পদক্ষেপও গ্রহণ করতে হবে।

সংশ্লিষ্টদের এটা মনে রাখা দরকার, এর আগে এমন বিষয়ও পত্রপত্রিকায় উঠে এসেছিল, বিভিন্ন সময়ে অনেকেই মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাড়ি-ফ্ল্যাট ক্রয় ছাড়াও নানা ব্যবসা-বাণিজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

এছাড়াও বহুল আলোচিত পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সেও অনেক বাংলাদেশির নাম এসেছিল। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে মানি লন্ডারিং বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। গ্রহণ করতে হবে জিরো টলারেন্স নীতি।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS