ভিডিও

চট্টগ্রামে নেচে-গেয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩ 

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪, ০২:৫৭ দুপুর
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪, ০২:৫৭ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা এলাকায় নেচে-গেয়ে এবং উল্লাস করতে করতে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৩ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।তাঁরা তিনজনই নিহত শাহাদাতের বন্ধু বলে জানা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে রাত ১২টার দিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানাজানি হলেও পুলিশ গ্রেপ্তারকৃতদের নাম বলতে রাজি হয়নি। 

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিং করে এ তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানান নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ ফয়সাল আহম্মেদ (অতিরিক্ত ডিআইজি)।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী (৪২), মো. সালমান (১৬) ও আনিসুর রহমান ইফাত (১৯)।

অতিরিক্ত ডিআইজি জানান, গত ১৩ আগস্ট রাত আনুমানিক ১০টা থেকে ১৪ আগস্ট রাত দেড় টার মধ্যবর্তী সময়ে পাঁচলাইশ থানাধীন ২নং গেইটের ট্রাফিক চত্বরে গান গেয়ে গেয়ে হাত-পা বেঁধে এবং ট্রাফিক পোস্টের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারপিট করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় মো. শাহাদাত হোসেন (২৪) নামে এক যুবককে। হত্যার পর অপকর্ম গোপন করার জন্য রাতের অন্ধকারে মৃত শাহাদাতকে পাঁচলাইশ মডেল থানাধীন বদনাশাহ মাজার সংলগ্ন রাস্তার সামনে অজ্ঞাতনামা লোকজন ফেলে চলে যায়। পাঁচলাইশ মডেল থানা পুলিশ ওইদিন সন্ধ্যা ৭টায় লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ২১ আগস্ট থেকে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে প্রচারিত হলে তা ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওর সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ‘চট্টগ্রাম ছাত্র-জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ শনাক্ত করে পুলিস। সেই সূত্র ধরে গ্রুপটির অ্যাডমিন ও হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ফরহাদ আহমেদ চৌধুরীকে শনাক্ত করা হয়। 

পরে ২৪ আগস্ট সন্ধ্যায় ২নং গেইট সংলগ্ন বিপ্লব উদ্যান এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফরহাদ আহমেদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে। এর কিছুসময় পর চকবাজার থানাধীন শিল্পকলা একাডেমীর সামনে থেকে মো. সালমান নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়াও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে একই রাতে ২নং গেইট সংলগ্ন মসজিদ গলি থেকে আনিসুর রহমান ইফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের যাবতীয় বিবরণসহ নিজেদের সক্রিয় থাকার কথা স্বীকার করেছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

তথ্যমতে, শাহাদাত নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়াজান ভুঁইয়াবাড়ির মৃত মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। তবে পরিবার নিয়ে শাহাদাত নগরীর কোতোয়ালি থানার বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে থাকতেন। গত ১৪ আগস্ট নগরের প্রবর্তক মোড়ের পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে থেকে পুলিশ শাহাদাতের মরদেহটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট ভুক্তভোগী শাহাদাতের চাচা মোহাম্মদ হারুন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

‘মধু হই হই’ গান গেয়ে উল্লাস করে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, ভিডিও ভাইরাল‘মধু হই হই’ গান গেয়ে উল্লাস করে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, ভিডিও ভাইরাল
মামলার এজাহারে দেওয়া তথ্যমতে, গত ১৩ আগস্ট বেলা ২টার দিকে কাজের জন্য বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সন্ধ্যার দিকে তাঁর স্ত্রী শারমিন ফোন করলে তিনি জানান, কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় যাবেন। রাত বেশি হওয়ার পরেও শাহাদাত বাসায় না ফেরায় তাঁকে ফোন করেন শারমিন। কিন্তু তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এর পরদিন শাহাদাতের চাচা সকাল ৯টার দিকে ফেসবুকে দেখেন, নগরীর প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনা শাহ মিয়া (রহ.) মাজারের বিপরীতে সড়কের পাশে তাঁর ভাতিজার মরদেহ পড়ে আছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় শাহাদাতকে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকায় দেশজুড়ে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়। জড়িত কয়েকজনের মধ্যে তিনজন লালখান বাজার এলাকার সোর্স দুলালের ছেলে সাগর, ২ নম্বর গেটের ইয়াছিন ও শান্ত চিহ্নিত হয়েছে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত সাগর নিহত শাহাদাতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সাগরের কাছে শাহাদাতের ৫ হাজার পাওনা টাকা নিয়ে হত্যাকাণ্ডের আগে বিরোধ হয়। শাহাদাত পাওনা টাকা চায় সাগরের কাছে। এ কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহাদাতের পরিবারের সদস্যরা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS