ভিডিও

বছরের পর বছর চিঠি চালাচালি করেও বগুড়া পৌরসভার জন্য মাস্টারপ্লান প্রণয়ন হচ্ছে না

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৪, ১০:৩৪ রাত
আপডেট: অক্টোবর ১৭, ২০২৪, ১১:২৯ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

রাহাত রিটু : বগুড়া পৌরসভার মাস্টারপ্লান (মহাপরিকল্পনা) প্রণয়নের  জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে বছরের পর বছর আবেদন করেও সারা মিলছেনা। ফলে প্রায় ৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভা দিন দিন বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে উঠছে। একদিকে বাড়ছে যানজট অন্যদিকে বসতি এবং কলকারখানা স্থাপন নিয়েও হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে।

পৌরসভার সাবেক মেয়র রেজাউল করিম বাদশা তার মেয়াদে ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবরে বগুড়া পৌরসভার জন্য মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য আবেদন করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, বগুড়া পৌরসভা বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং জনবহুল একটি পৌরসভা। ১৮৭৬ সালে ১.২৫ বর্গ মাইল আয়তন এবং মাত্র ৭ হাজার জনসংখ্যা নিয়ে বগুড়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়।

বর্তমানে বগুড়া পৌরসভার আয়তন ৬৯.৫৬ বর্গ কিলোমিটার। ওয়ার্ড সংখ্যা ২১টি এবং জনসংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ। বগুড়া উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার এবং উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির শহর হিসাবে বিবেচিত। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় এই যে ১৩৯ বছরের গৌরবান্বিত বগুড়া পৌরসভার আজ অবধি কোন মহাপরিকল্পনা নেই, যার ফলে বগুড়া শহর তথা নগর উন্নয়ন হচ্ছে এলোমেলো ভাবে, যা ভবিষ্যতের জন্য বিরাট হুমকি স্বরুপ।

দেশের সকল জেলার সাথে সুন্দর-সাবলীল যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উচু মানের প্রাথমিক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা হইতে স্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য মাইগ্রেশন করে মানুষ বগুড়ায় আসছে।

রিয়েল এস্টেট এবং ডেভলপার কোম্পানির প্রতিষ্ঠিত এ্যপাটমেন্ট ব্যবসা (বর্তমানে প্রায় ১০০০ এ্যপার্টমেন্ট রয়েছে) এবং বর্তমানে বগুড়া পৌরসভায় প্রতি বছর ১০০০ এর অধিক ইমারত নির্মাণ নকশা অনুমোদন হয়, এই পরিসংখ্যান থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে বগুড়া পৌরসভার নগর উন্নয়ন হচ্ছে অত্যন্ত ত্বরান্বিত ভাবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন একটি শহরকে বাস যোগ্য পরিবেশ বান্ধব শহর হিসাবে গড়ে তুলতে চাই সঠিক মহাপরিকল্পনা, একজন নগরপিতা হিসাবে বগুড়াকে একটি পরিকল্পিত শহর হিসাবে গড়ে তোলা আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন কিন্তু পৌরসভার কারিগরী জনবল স্বল্পতা (মাত্র একজন শহর পরিকল্পনাবিদ) এবং আর্থিক সংকটের কারণে নিজস্ব উদ্যেগে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন একটি অসম্ভব কাজ।

বাংলাদেশের সকল জেলার মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য একমাত্র নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আপনার নিয়ন্ত্রনাধীন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য যে ধরনের কারিগরী জনবল প্রয়োজন তা উক্ত প্রতিষ্ঠানের রয়েছে বলে আমি জানি।

এমতাবস্থায় বগুড়াকে একটি দুর্যোগ ঝুঁকি মুক্ত পরিকল্পিত আধুনিক মডেল শহর হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্তৃক জরুরী ভিত্তিতে বগুড়া পৌরসভার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করার জন্য অনুরোধ জানান। এই পত্র দেওয়ার পরও স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে কোন সারা মেলেনি।

একই বিষয়ে ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তৎকালীন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের বরাবরে আবার আবেদন করেন তৎকালীন মেয়র রেজাউল করিম বাদশা। চলতি বছরের১৮ জুলাই তিনি আরও একটি পত্র দেন সচিব বরাবরে। ওই আবেদনেও একই কথা উল্লেখ করা হয়। এরপর পৌরসভা থেকে মেয়রদের অপসারণ করার পর সর্বশেষ বগুড়া পৌরসভার প্রশাসক মাসুম আলী বেগ গত ১৫ অক্টোবর ব:পৌ:সা:/২০২৪-২০২৫/২৬৩ স্মারকে আবেদন করেন।  তিনি তার পত্রে আগে করা আবেদন গুলোর স্বারক নাম্বার উল্লেখ করেন।

এই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন বিগত ১৪৮ বছরের পুরনো বগুড়া পৌরসভার আজ অবধি কোন মাস্টারপ্ল্যান নেই যার দরুন বগুড়া শহর উন্নয়ন হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে যা ভবিষ্যতের জন্য বিরাট হুমকি স্বরুপ। বর্তমানে বগুড়া পৌরসভায় যানজট, জলাবদ্ধতা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মাস্টারপ্ল্যান ব্যতীত বগুড়া পৌরসভার রাস্তা, ড্রেন, জলাবদ্ধতা, যানজট, অবকাঠামো উন্নয়ন, মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও অন্যান্য সমস্যা সমাধান সঠিক উপায়ে করা সম্ভব নয়। পৌরসভার স্বল্প জনবল দিয়ে এবং আর্থিক সংকটের কারণে বগুড়া পৌরসভার নিজস্ব উদ্যেগে মাস্টার প্ল্যান করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের সকল পৌরসভার মাষ্টারপ্ল্যান প্রণয়ণের জন্য একমাত্র নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এমতাবস্থায় বগুড়াকে একটি দুর্যোগ ঝুকি মুক্ত পরিকল্পিত আধুনিক মডেল শহর হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্তৃক জরুরী ভিত্তিতে বগুড়া পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ণ করার জরুরী বলে উল্লেখ করেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক ও পৌরসভার প্রশাসক মো. মাসুম আলী বেগ জানান, বগুড়ার মত একটি বড় শহরে মাস্টারপ্লান থাকা প্রয়োজন। মাস্টারপ্লান ছাড়া বোঝা যায়না কোনটা আবাসিক এলাকা কোনটা বানিজ্যিক এলাকা। বা খোনটা খেলার মাঠ।

যত্র তত্র বাড়ি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। রাস্তা কোথাও সরু আবার কোথাও রিকসা চলাচলের মত জায়গা নেই। মাস্টার প্লান হলে এটা আর হবে না। তিনি বলেন বগুড়ার উন্নয়নের জন্য মাস্টার প্লান হওয়া প্রয়োজন এ কারণে তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে মাস্টারপ্লান করার জন্য আহবান জানিয়েছেন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS