ভিডিও

রোকেয়ার জীবন রস, গুড় ও পাটালিতে বন্দি

প্রকাশিত: মার্চ ০১, ২০২৪, ০৩:৩০ দুপুর
আপডেট: মার্চ ০১, ২০২৪, ০৩:৩০ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

নিজের আলোয় ডেস্ক ঃ ‘বউ ঠিলা ধুয়ে দে, গাছ কাটতি যাবো/ সন্ধি রস পাড়ে আইনে জাউ রান্দে খাবো’ প্রচলিত এ গানে গাছিবউকে শুধু ঠিলা ধুয়ে দেওয়ার কথা বলা হলেও গাছ কাটা ছাড়া প্রায় সব কাজ করেন রোকেয়া খাতুন। এখনো শীতকালে নলেন পাটালির খুশবুতে ভরে যায় তাঁর বাড়ির আঙিনা।

১৯৭৫ সালে বিয়ের পর থেকে রস জ্বাল দিয়ে গুড় বানানো শুরু করেন রোকেয়া খাতুন। এই রস থেকে নালি ও পাটালি গুড় তৈরি করে তাকে স্বাদে, ঘ্রাণে অনন্য করে তোলেন তিনি। বৈবাহিক জীবনের ৪৮ বছর কেটেছে তার রস-গুড়-পাটালির ঘ্রাণে। খেজুরগাছ থেকে রস নামিয়ে আনার পর কাজ শুরু হয় গাছিবউ রোকেয়ার। টাটকা রস তাতালে ঢেলে জ্বাল দিয়ে গুড়-পাটালি তৈরি করেন তিনি। যশোরের ঝিকরগাছা পৌরসভার কীর্তিপুর গ্রামের মাঠপাড়ার আলতাফ হোসেনের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন।

পাটালি বানানোর জন্য চুলায় তাতালে রস জ্বাল দিয়ে কিছু সময় পরপর তাতাল পরিষ্কার করে দেন রোকেয়া। গুড়-পাটালির জন্য চুলা থেকে নামানোর আগে তা ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নেন। এরপর কাঠের চামচ দিয়ে বেশ কিছু সময় ঘষে ঘষে আটার খামির মতো সাদা করেন।

এটাকে স্থানীয় ভাষায় বিচমারা বলা হয়। অভিজ্ঞতা থেকে রোকেয়া জানান, যত বেশি বিচমারা যাবে, গুড় তত বেশি সাদা হবে। বলতে বলতে মাটির সরায় গরম তরল গুড় ঢালছিলেন তিনি। কয়েক মিনিটের মধ্যে সে নরম গুড় শক্ত হয়ে পাটালিতে রূপ নিল।

যখন যশোরের খেজুরের রস-গুড়-পাটালি হারিয়ে যেতে বসেছে, রোকেয়া খাতুন সে ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখছেন এবং চিরচেনা সেই স্বাদ নেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। কীর্তিপুরের ঝিকরগাছা গ্রামের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. একরামুল হক খোকন জানান, ১৯৭৫ সালের পৌষ মাসে রোকেয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পর বউ বাড়িতে এনে স্বামী আলতাফ হোসেন খেজুরগাছ কাটতে গিয়েছিলেন। পরদিন সকালে সে রস জ্বাল দিয়ে গুড় বানিয়েছিলেন রোকেয়া। সেই শুরু। আজও রস-গুড় আর পাটালি তার জীবনের সঙ্গে লেগে রয়েছে।

প্রায় ৫ দশকে রস থেকে গুড় বানাতে দারুণ অভিজ্ঞ হয়ে গেছে রোকেয়া। তিনি জানালেন, সাধারণত জিরেন রস বা গাছের প্রথম দিনের রস দিয়ে পাটালি তৈরি করতে হয়। পৌষ, মাঘ, ফাগুন এই তিন মাস ভালো পাটালি হয়। কিন্তু গরম পড়লে পাটালি জমে না। এটি বানানোর অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। জিরেন রস না হলে পাটালি হবে না। আর এই পাটালি তৈরির জন্য অনেক ধৈর্য দরকার।

গুড় তৈরির জন্য মাটির ঠিলা পরিষ্কার করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে এরপর ধানের নাড়া দিয়ে আগুনে পোড়ানো, তা মাঠে নিয়ে যাওয়া, মাঠ থেকে রস বাড়ি এনে জ্বাল দেওয়াসহ সব কাজ করেন রোকেয়া। বয়সের কারণে স্বামী আলতাফ হোসেন এখন আর গাছ কাটতে যান না। ছেলে শরিফুল ইসলাম জাহাঙ্গীর গাছ কাটেন। পুত্রবধূ আরজিনা খাতুন তাকে গুড়-পাটালি বানানোর সব কাজে সহায়তা করেন।

ঝিকরগাছা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের (কীর্তিপুর) কাউন্সিলর মো. একরামুল হক খোকন বলেন, ‘যখন যশোরের খেজুরের রস-গুড়-পাটালি হারিয়ে যেতে বসেছে, রোকেয়া খাতুন সে ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখছেন এবং আমাদের চিরচেনা সেই স্বাদ নেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।’



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS