দিনাজপুরের বীরগঞ্জে
নিখোঁজের ১৭ বছর পর ভারত থেকে দেশে ফিরলেন সাদেকুল, বাড়িতে আনন্দের বন্যা
বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : নিখোঁজের ১৭ বছর পর নিজ বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের দলুয়া গ্রামে ফিরে এসেছেন সাদেকুল ইসলাম (৪২)। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী এবং বন্ধু-বান্ধবদের কাছে পেয়ে খোশগল্পে মেতে ওঠেন, খুজে ফিরেন হারানো স্মৃতি। এসময় পুরনো স্মৃতি মনে করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
২০০৭ সালে নিখোঁজ হন তিনি। এরপর ২০১৫সালের ১১জুলাই হতে ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় বছর ভারতের কোলকাতার একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ২৪ ডিসেম্বর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসেন তিনি।
১৭ বছর ধরে তার কোন সন্ধান না পেয়ে পরিবার ধরে নিয়েছিল সে আর জীবিত নেই। কিন্তু চলতি বছরের ৮ মাস পূর্বে বীরগঞ্জ থানার মাধ্যমে জানতে পারে সাদেকুল ইসলাম ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরপর থেকেই নিখোঁজ সাদেকুলের বাড়িতে বইতে শুরু করে আনন্দের ঢেউ।
অবশেষে দুই দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রচেষ্টার ফলে গত ২৫ডিসেম্বর সাদেকুল ইসলাম তার নিজ জন্মভূমি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের দলুয়া গ্রামে ফিরে আসেন। ফিরে আসার সংবাদে তার বাড়িতে বাড়তে থাকে আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশীসহ গণমাধ্যম কর্মীদের ভিড়।
সাদেকুল ইসলামের বাবা মোঃ আকবর আলী একজন কৃষক এবং মা মোছাঃ সিদ্দিকা বেগম গৃহিণী। চার ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড় সাদেকুল ইসলাম। ২০০০সালে পার্শ্ববর্তী জেলার ঠাকুরগাঁও বেগুনবাড়ি কোটাপাড়া গ্রামে বিয়ে করেন সাদেকুল। বিয়ের পর বাড়ি আলোকিত করে একটি পুত্র সন্তানের বাবা হন।
স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পরিবারের সাথে বেশ সুখেই কাটছিল তাদের দিন। কিন্তু হঠাৎ করে ২০০১ সালে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। দিন দিন বাড়তে থাকে তার এই সমস্যা। এই পরিস্থিতিতে স্ত্রী দুই বছরের সন্তানকে সাথে নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যান বাবার বাড়ি। এ সময় তার পাশে এসে দাঁড়ান পরিবারের লোকজন। তাকে সারিয়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যান তারা।
আরও পড়ুনএভাবে চলতে থাকার এক পর্যায়ে ২০০৭ সালে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন সাদেকুল ইসলাম। এরপর সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ করেও সাদেকুলের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এরপর মাস বছর পেরিয়ে যুগ গড়িয়ে যায়। অপেক্ষা করতে করতে আর জীবিত নেই এমনটি ধরে নিয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। অবশেষে ১৭ বছর পর সবাইকে অবাক করে বাড়ি ফিরে আসায় পরিবারসহ এলাকার মানুষের কাছে স্বপ্নের মত মনে হয়েছে।
সাদেকুল ইসলাম জানান, নিখোঁজ হয়ে ভারতে যাওয়ার বিষয়টি তার মনে পড়ে না। তবে তিনি যখন কিছুটা সুস্থ হন তখন জানতে পারেন তিনি কলকাতায় একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর সুস্থ হলে বাড়ির ঠিকানা মনে পড়ে তার। এ সময় শুক্লা নামে হাসপাতালের এক কর্মকর্তার সাথে তার বেশ সখ্যতা করে ওঠে। তাকে বাংলাদেশে বাড়ির ঠিকানা জানালে তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে দেন।
সাদেকুলের বাবা মোঃ আকবর আলী জানান, ছেলে খুব একটা মেধাবী না থাকায় চতুর্থ শ্রেণিতে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে তার সাথে সংসারের কাজে যোগ দেয়। এরপর বিয়ে করে সংসারে বেশ ভালোই দিন কাটছিল তার। কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ার পর সে নিখোঁজ হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও তার কোন কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম সে আর বেঁচে নেই।
তাকে আজ সুস্থ অবস্তায় ফিরে পাওয়ায় এই পৃথিবীটা আমার কাছে নতুন মনে হয়েছে। এ ব্যাপারে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তাদের মঙ্গলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছি। উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ তরিকুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন পেলে বিধি মোতাবেক সরকারি সকল সুযোগ সুবিধার জন্য পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হবে।
মন্তব্য করুন