মুখ থুবড়ে পড়েছে দিনাজপুর বধির ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম

দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি: বিদ্যালয় ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে শিক্ষকের টেবিল ঘিরে জনাদশেক ক্ষুদে শিক্ষার্থীর জটলা। টেবিলে রাখা একেকটি খাতায় চোখ বুলাচ্ছেন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলছেন, ভুল ধরিয়ে দিচ্ছেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের মুখে আ-উঁ ধ্বনির সাথে ভাব বিনিময় হচ্ছে হাতের ইশারায়। পাশেই কয়েকজন নারী অভিভাবককেও দেখা গেলো।
এ দৃশ্য দিনাজপুর শহরের গুঞ্জাবাড়ি এলাকায় বধির ইনস্টিটিউটে। পাঠদান করা ওই শিক্ষকের নাম রাবেয়া খাতুন (৬৯)। ৩৫ বছর এখানে শিক্ষক কাম হোস্টেল সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের খাওয়া দাওয়া, গোসল, পড়ালেখা, খেলাধূলা, ঘুম সবকিছুই দেখভাল করেন রাবেয়া।
কিন্তু এ কাজে সরকারি কোন বেতন পাননা, স্থানীয়দের অনুদানের টাকায় প্রতিমাসে ভাতা পান ৬০০ টাকা। তাতেও কোন আক্ষেপ নেই তার। রাবেয়া বলেন, ওরা কথা বলতে পারে না, কানেও শুনেনা। ওদেরকে রেখে কই যাবো? মায়ায় আটকে আছি ৩৫টা বছর। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ওদের পাশে থাকতে চাই।
ব্যক্তিজীবনে তিন ছেলের জননী রাবেয়া খাতুন। এরমধ্যে দু’জন বাক প্রতিবন্ধী। একজন ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। এখন ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের আর্ট শেখান। অপরজন অষ্টম শ্রেণি পাশের পর একটি কাপড়ের দোকানের কর্মচারী। রাবেয়ার স্বামী মারা গেছেন ২০১৮ সালে। তিনি বলেন, খুব ইচ্ছে ছিলো ছেলেরা পড়ালেখা শিখবে। কিন্তু বধির হওয়ায় বেশিদূর যেতে পারেনি তারা। নিজের দুই সন্তানের অবস্থা দেখে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মনের অবস্থা আমি বুঝি, বলতে না পারা কথাগুলোও বুঝি।
জানা যায়, ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দিনাজপুর বধির ইনস্টিটিউট। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২০ জন। এরমধ্যে ২৪ জন ছেলেমেয়ে বিদ্যালয়ের আবাসিকে থেকে পড়ালেখা করছেন।
আরও পড়ুনপ্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক ৭ জন, কর্মচারী রয়েছেন ৫ জন। তবে শিক্ষকদের বেতন না হওয়া, শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়নে বরাদ্দ না থাকা সর্বোপরি ইশারা ভাষা শিক্ষার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে এর কার্যক্রম। এরইমধ্যে বিদ্যালয় আসা বন্ধও করেছে এক দ্বিতীয়াংশ শিশু।
এ বিষয়ে দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এসএম হাবিবুল হাসান বলেন, কিছুদিন আগে প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করেছি। প্রতিষ্ঠানটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কমিটির সদস্যদের নিয়ে কাজ করছি। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।
প্রতিষ্ঠানে অনুদানের কিছু টাকা ব্যাংকে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে শিক্ষকদের একটা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আর আবাসিক শিক্ষার্থীদের প্রতিজনের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে মাসিক দুই হাজার টাকা ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন