আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু

পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামে আগুনের ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে ১৬ জন নিহত হয়েছে। রাত ৮টা ৩০ মিনিটে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সে ১৬ লাখ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে নেয়া হয়। ১৬ লাশের মধ্যে অধিকাংশই আগুনে পোড়া। মৃতদের মধ্যে সাতজন নারী ও নয়জন পুরুষ।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, গার্মেন্টস ভবনে সবগুলো মরদেহ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আনোয়ার ফ্যাশন নামের ওই পোশাক কারখানায় আগুন লাগে। সেখান থেকে আগুন পার্শ্ববর্তী রাসায়নিক গুদামে ছড়িয়ে পড়ে।
পোশাক কারখানাটি চারতলা ভবনে, আর রাসায়নিক গুদাম টিনশেড ঘরে। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনতলা পোশাক কারখানার নিচতলায় ‘ওয়াশ ইউনিট’ রয়েছে, সেখানেই প্রথম আগুন লাগে, সেই আগুন পাশের রাসায়নিক গুদামে ছড়িয়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।
এরপর আগুন তিনতলা পোশাক কারখানার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ১৬ মরদেহ উদ্ধার হলেও আরও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। অগ্নিকান্ডের মতো ঘটনা কতটা ভয়াবহ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যখন একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে এবং মানুষ চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে- তখন সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার বিকল্প থাকতে পারে না। স্মর্তব্য যে, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে হৃদয়বিদারক এবং ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, নানা কারণেই বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এটাও এড়ানোর সুযোগ নেই যে, গত কয়েক বছরে শুধু কেমিক্যালের কারণে অনেকগুলো অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আমরা বলতে চাই, আবাসিক এলাকায় কারখানা, গোডাউন, নানাক্ষেত্রে অনিয়ম সহ বিভিন্ন অভিযোগ সামনে এসেছে বিভিন্ন সময়। লক্ষ্যণীয় কারখানা, বস্তি, বহুতল ভবন, শপিং মল সহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে ঘটে যাওয়া বড় বড় অগ্নি দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ ও সতর্ক না হওয়ায় অগ্নি দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিতে হবে। করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বলতে চাই, যখন একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে তখন এই ভয়াবহতাকে সামনে রেখে উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। পোশাক কারখানার বৈদ্যুতিক লাইনের ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।
আরও পড়ুনআবাসিক এলাকায় গোডাউন, নানা ক্ষেত্রে অনিয়ম সহ বিভিন্ন অভিযোগ সামনে আসে বিভিন্ন সময়ে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে ঘটে যাওয়া বড় বড় অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ ও সতর্ক না হওয়ায় অগ্নি দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোকে আমলে নিতে হবে। করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। রাজধানীসহ সারা দেশে আগুনের ঘটনা নেহাতই কম নয়। আগুনে প্রাণহানির ঘটনাও আঁতকে ওঠার মতো। বিপুল সম্পদ হানি তো রয়েছেই।
যখন গ্রাম থেকে শহর, বস্তি থেকে শুরু করে আবাসিক ও বাণিজ্যিক বহুতল ভবন, দোকানপাট, গুদাম, মার্কেট কোনো কিছুই আগুনের লেলিহান গ্রাস থেকে মুক্ত নয়-তখন এই প্রশ্নও অযৌক্তিক নয় যে, অগ্নিকান্ডের পুনরাবৃত্তি রোধ করা যাচ্ছে না কেন?
রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় একই ধরনের অসুবিধা, পুরনো ঢাকার ঘিঞ্জি গলিপথ যেমন বিপজ্জনক, তেমনি নতুন ঢাকাতেও বেশির ভাগ পোশাক কারখানা ও বহুতল ভবনে আগুন লেগে গেলে নির্গমনের পথ নেই। এ ছাড়া অনেক ভবনেই তাৎক্ষণিকভাবে অগ্নি নির্বাপনের কোন ব্যবস্থা নেই। বেশির ভাগ ফায়ার ব্রিগেড ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই অগ্নিকান্ডে জীবন ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ঢাকা শহরে যেহেতু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অগ্নিকান্ডের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি, সে কারণে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি, যানজট এড়িয়ে আর সরু গলির কারণে দমকল বাহিনীর গাড়ি এগোতে পারে না। আবার আশে পাশে পানির কোনো ব্যবস্থাও পাওয়া যায় না, তাই রাজধানীর প্রতিটি মহল্লায় স্থানীয়ভাবে কার্যকর অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। সেই সঙ্গে নিতে হবে দমকল বাহিনীর আধুনিকায়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ।
মন্তব্য করুন