প্রখ্যাত সাংবাদিক ফারুখ ফয়সল আর নেই, শোক

স্টাফ রিপোর্টার : দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক এবং আইন ও শালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল আর নেই। আজ শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি ক্যান্সার রোগে ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। বগুড়া শহরের সেউজগাড়ী পালপাড়ার শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যক্ষ মহসিন আলী দেওয়ানের বড় ছেলে তিনি। তার মেয়ে, এক ভাই, এক বোন, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রয়েছে।
স্বজনরা জানান, আজ শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে তিনি ঢাকায় গ্রীণ রোডে গ্রীণ লাইফ হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। গতকাল রাতে ঢাকা থেকে তার মরদেহ বগুড়া শহরের সেউজগাড়ী পালপাড়ায় নিজ বাসভবন ‘বুলেটিন হাউজে’ আনা হয়।
তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে। এ সময় তাকে এক নজর দেখতে লোকজন তার বাড়িতে ভিড় করে। এরপর বাদ এশা সেউজগাড়ী জামে মসজিদে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিপুল সংখ্যক মুসুল্লি অংশ গ্রহন করেন। এরপর তার মরদেহ তার নানার বাড়িতে আদমদিঘী উপজেলার নশরৎপুর বাজার এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক গোরস্থানে তার মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।
তার শোকাহত ভাই সজল বলেন, বেশ কিছুদিন থেকেই তার বড় ভাই ফারুখ ফয়সলের জীবন প্রদীপ ক্রমশই নিভে আসছিল। কাউকে দেখেও দেখতে পাচ্ছিলেন না তিনি। শুনতেও পারছিলেন না তেমন। দীর্ঘ যন্ত্রনার তীব্র দগ্ধতা নিয়ে দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অবশেষে বগুড়া তথা দেশের এই গর্বিত এবং সৃষ্টিশীল মানুষটি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।
স্বজনরা বলেন, একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মহসিন আলী দেওয়ান এর বড় ছেলে ফারুখ ফয়সল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকাত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও উচ্চত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া নরওয়ের অসলো ইউনিভার্সিটি থেকে সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা করেন তিনি। তার বাবার প্রতিষ্ঠিত সাপ্তাহিক ‘বগুড়া বুলেটিন’ নামে পত্রিকায় হাতে খড়ি নেন তিনি।
আরও পড়ুনস্বাধীনতার পরে যখন উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র ছিলেন তখন তিনি প্রখ্যাত সাংবাদিক আমানুল্লাহ খানের দৈনিক বাংলাদেশ’ পত্রিকায় সর্বকনিষ্ঠ প্রদায়ক ছিলেন। বগুড়ার ‘প্রথম শহীদ রিকশাচালক তোতামিয়া’ শিরোনামে পত্রিকার পেছনের পাতার ছয়কলাম জুড়ে লিখিত তার নিবন্ধ বের হতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় তিনি দৈনিক বাংলা’ পত্রিকায় যোগ দিয়েছিলেন।
সেইসাথে সিনেপত্রিকা ‘চিত্রালী’তেও লিখতেন। পরবর্তীতে তখনকার জনপ্রিয় সাপ্তাহিক বিচিত্রা’ এবং সচিত্র সন্ধানী’তেও নিরলসভাবে লিখে গেছেন। প্রখর বুদ্ধিমত্তার এই কৌতুহলী মানুষটি এরপর দেশ-বিদেশের নানা পত্রপত্রিকায় লিখতে লিখতে আর্টিকেল-নাইনটিন নামের আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থায় লিখতেন। তিনি টাইম ম্যাগাজিন দক্ষিনপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তী আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালকের পদে থাকাবস্থায় মারাত্মক ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হন।
এদিকে, সাংবাদিক ফারুখ ফয়সলের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন সিপিবি বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি মো: আমিনুল ফরিদ, সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী শেখ, সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিন্নাতুল ইসলাম, বগুড়া সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি শাহনিয়াজ কবির খান পাপ্পু, সাধারণ সম্পাদক অখিল পাল।
এছাড়া তার মৃত্যুতে আরও শোক জানিয়েছেন বগুড়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড এর সাবেক কাউন্সিলর মো: এরশাদুল বারী এরশাদ, শহর বিএনপি’র সাগঠনিক সম্পাদক মো: সোলায়মান আলী,সেউজগাড়ী মৌমাছি খেলাঘর আসরের উপদেষ্টা বিশিষ্ট কলামিস্ট আতাউর রহমান মিটন, সংগঠনের সভাপতি মাসুদুর রহমান রানা, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো; আব্দুল জলিল,সাধারণ সম্পাদক অনুপ পাল,সেউজগাড়ী ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: বজলুর রশিদ।
মন্তব্য করুন