ভিডিও

চিকিৎসাসেবায় অস্থিরতা

হামলাকারীদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতিতে চিকিৎসকদের শাটডাউন কর্মসূচি আপাতত স্থগিত, নিরাপত্তায় ঢামেকে বিজিবি মোতায়েন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০১, ২০২৪, ১১:১১ রাত
আপডেট: সেপ্টেম্বর ০২, ২০২৪, ১১:২৫ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা অফিস : চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। এ আশ্বাস পেয়ে আগামীকাল সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করেছেন চিকিৎসকরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহেলায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজির (বিইউবিটি) শিক্ষার্থী আহসানুল হক দীপ্তর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেন চিকিৎসকরা।

একই দিন মধ্যরাতে খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকা থেকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহতরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসেন। তখন অন্য আরেক গ্রুপ চাপাতিসহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভেতরে ঢুকে যায়।

এ সময় হাতেনাতে চারজনকে আটক করে সেনাবাহিনীকে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে অন্য আরেক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ওয়ানস্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারে ভাঙচুর চালায় রোগীর স্বজনরা। এতে করে নিরাপত্তা শঙ্কায় জরুরি বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন চিকিৎসকরা। আলটিমেটামের ২৪ ঘণ্টা শেষ  হওয়ার আগেই কর্মবিরতিতে যান তারা।

এদিকে, ঢামেক হাসপাতালের (ঢামেক) নিউরো সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসকের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা হয়। মামলায় বেসরকারি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) শিক্ষকসহ তিন শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে।

এ ছাড়া ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। আজ রোববার (১ সেপ্টেম্বর) ঢামেক হাসপাতালের অফিস সহায়ক আমির হোসেন (৫৩) বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। অন্যদিকে, আজ রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, দোষীদের গ্রেপ্তার ও সেনাবাহিনী মোতায়েন না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা দেশের সব হাসপাতালে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করা হয়। হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন আব্দুল আহাদ এ ঘোষণা দেন।

পরে বিকেলে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা বিধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এরপরও চিকিৎসকরা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে অটল থাকলে বিপাকে পড়েন রোগী ও তাদের স্বজনরা। অনেক গুরুতর রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে থাকেন।

এ পরিস্থিতিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। এ সময় তিনি চিকিৎসকদের শাটডাউন কর্মসূচি উঠিয়ে নেওয়ারও আহ্বান জানান।

এদিকে, বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকে কর্মবিরতিতে থাকা ডাক্তারদের সঙ্গে সভা ডাকা হয়। ওই সভায় চার দফা দাবি জানান চিকিৎসকরা। তাদের দাবিগুলোকে যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। চিকিৎসকদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ারও আশ্বাস দেওয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি।

পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাস পেয়ে কর্মবিরতি স্থগিত করেন চিকিৎসকরা। শুরু জরুরি বিভাগের সব কার্যক্রম : ১০ ঘন্টা পর আজ রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, ক্যাজুয়ালিটি এবং নিউরো সার্জারিতে চিকিৎসাসহ অন্যান্য চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে কর্মরত চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার সদস্যরা সার্বক্ষণিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

আজ রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান। ঢামেক পরিচালক বলেন, চিকিৎসকরা জরুরি চিকিৎসাসেবা চালু করবেন। তাদের নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। চিকিৎসক মারধরের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আটক বা গ্রেপ্তার করার পরপরই তারা সম্পূর্ণভাবে চিকিৎসাসেবা দেবেন। কিন্তু এখন থেকেই জরুরি চিকিৎসাসেবা শুরু হচ্ছে।


দীর্ঘ অপেক্ষার পর ফিরে যান রোগীরা : রুমা আক্তারের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। মায়ের চিকিৎসার জন্য সকাল সকাল এসেছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকদের শাটডাউন কর্মসূচি সম্পর্কে কিছুই জানা ছিল না তাদের। ফলে সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও পেলেন না চিকিৎসাসেবা।

আজ রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় রুমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, মায়ের চিকিৎসার জন্য সকালে ঢামেকে এসেছি। কিন্তু এসে শুনি ডাক্তার নাই। ভাবলাম অপেক্ষা করি ডাক্তার হয়ত আসবে।

কিন্তু বিকেল ৩টা বেজে গেলেও ডাক্তার আসেনি। রুমা আক্তার বলেন, ভেতরের স্টাফরা পরে জানাল আজ আর ডাক্তার আসবেন না। তাহলে এই কথাটা তারা আগে কেন বলতে পারল না। সারাটা দিন অপেক্ষা করে তো আমার মায়ের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে, এর দায়ভার কে নেবে।

হবিগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে ঢামেকে এসেছিলেন ছয় মাসের গর্ভবতী সেলিনা হোসেন (ছদ্মনাম)। হঠাৎ পেটে ব্যথা অনুভব করতে থাকেন তিনি। তাই দ্রুত স্বজনরা তাকে ঢামেকে নিয়ে আসেন। কিন্তু চিকিৎসকদের শাটডাউন কর্মসূচির কারণে তারা পড়েন চরম বিপাকে। সারাদিন অপেক্ষা করেও চিকিৎসা না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফিরে যান তারা।

সেলিনা হোসেনের স্বজনরা বলেন, শনিবার রাতে আমরা তাকে নিয়ে ঢামেকে আসি। ছয় মাসে গর্ভবতী হলেও হঠাৎ করে তার যন্ত্রণা শুরু হয়। প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাই, পরে হবিগঞ্জ থেকে ঢামেকে নিয়ে আসি। কিন্তু আমরা তো আর জানতাম না যে এত ঝামেলা হয়ে গেছে। রাত থেকে চিকিৎসা পাইনি। দিনের প্রায় শেষ, কোনো চিকিৎসার খবর নেই। এদিকে রোগীর অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপ হচ্ছে, কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। তারা আরও বলেন, এখন প্রাইভেট মেডিকেলে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। যদি সেখানেও চিকিৎসা না পাওয়া যায়, তাহলে কি করব জানি না।

‘শাটডাউনে’ চমেক হাসপাতালেও বন্ধ স্বাস্থ্যসেবা, ভোগান্তিতে রোগীরা : হঠাৎ শাটডাউনের ঘোষণায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা। তবে আগে থেকে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে শাটডাউন কর্মসূচির কারণে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কোনো রোগী ভর্তি করানো হচ্ছে না।

গুরুতর আহত রোগীদেরও ফেরত পাঠাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এতে করে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা এবং তাদের স্বজনরা। বাধ্য হয়ে তারা নগরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে যাচ্ছেন। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে চমেক হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. তছলিম উদ্দিন খান। তিনি রোগীর ভোগান্তির কথা চিন্তা করে মানবিক বিবেচনায় কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। যদিও ঢাকা থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না এলে কর্মসূচি প্রত্যাহারের সম্ভাবনা কম বলে জানান চিকিৎসকরা।

ঢামেকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা, আটক ৪ : ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভেতরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে এক গ্রুপের ওপর আরেক গ্রুপের হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় চাপাতিসহ চার জনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। আটকরা হলেন বাপি মিয়া (২৪), আদিব (২৩), নাসির (২৫) ও নাবিল (২৭)। তারা সবাই খিলগাঁও থানার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে শাকিল (২১) ও রনি (২২) নামের দুই যুবক আহত হলে তাদের চিকিৎসার জন্য ঢামেকে নিয়ে আসা হয়। পরে আরেকটি গ্রুপ চাপাতি নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভেতরে ঢুকে যায়। এ সময় চারজনকে আটক করে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।


শাটডাউনের মধ্যেই মুগদা মেডিকেলে চিকিৎসকদের ওপর হামলা : এবার ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর দুই দফায় হামলার খবর এলো। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সারা দেশে চিকিৎসাকেন্দ্রে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি চলার মধ্যেই আজ রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরের পর মুগদা মেডিকেলে এই হামলার ঘটনা ঘটে। মুগদা মেডিকেলের পরিচালক ডা. এস এম হাসিবুল ইসলাম হামলার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।

তবে কেন এই হামলা, তার সঠিক কারণ জানাতে পারেননি তিনি। বিকাল ৫টার দিকে ডা. হাসিবুল বলেন, বেলা সোয়া ৩টার দিকে একদল বহিরাগত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। আমাকে একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন তাদের ওপর হামলা হয়েছে।

তারা দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। কেন এই হামলা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার জানামতে সেখানে কোনো রোগীর স্বজনরা আজ (রোববার) হামলা করেনি। আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাকা কমপ্লিট শাটডাউনের পক্ষে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা একটি ব্যানার টানাতে যান। “তাদের হাসপাতালের গেইট আটকে দেওয়া হয়। এ সময় বাইরের কিছু ‘ছেলেপেলে’ তাদের ওপর হামলা করে, গেট খুলে দেয়।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS