ভিডিও

দুধকুমার-তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে

সিলেটাঞ্চলে বন্যা, উত্তরে বাড়ছে পানি

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৪, ১০:০০ রাত
আপডেট: জুন ২০, ২০২৪, ১০:৩৬ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

করতোয়া ডেস্ক : অতি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট অঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে প্রায় পঞ্চশ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এদিকে, লালমনিরহাটে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তিস্তা ও সানিয়াজান নদী পাড়ের বাসিন্দারা বন্যার আশঙ্কা করছেন। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। 
অপর দিকে, বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্ট ও দুধকুমার নদের ভুরুঙ্গামারী পাটেশ্বরী (সোনাহাট সেতু) পয়েন্টে। এছাড়াও কুড়িগ্রামের প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিচু বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে প্লাবিত হতে পারে বলে শঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্ককরণ কেন্দ্র। এদিকে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। বেশ কিছু এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। 
সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হলেও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার পানি দু-একটি পয়েন্টে ওঠানামা করলেও সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নদনদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে। এরই মধ্যে বুধবার সিলেট অঞ্চলে ফের ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। 
বুধবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সিলেট বিভাগে বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। একই সময়ে রংপুর, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের সম্ভবনা রয়েছে। সেইসঙ্গে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এদিকে, মঙ্গলবার থেকে সিলেটের সব বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মৌলভীবাজারে দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি : অতি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের মনু, ধলাই ও কুশিয়ারাসহ সবকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে হাকালুকি, হাইল হাওড়ে অস্বাভাবিক পানি বেড়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি খরস্রোতা ধলাই নদী বড়চেক-দেওড়াছড়া এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধের নতুন ও পুরাতন ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকে রহিমপুর ইউনিয়নের অন্তত ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার সকাল নয়টায় ড়চেক-দেওড়াছড়া এলাকার আশপাশ জুড়ে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। প্রায় সাড়ে ৩০০ ফুট এলাকায় ভাঙন দিয়ে তীব্র গতিতে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এতে এ এলাকার চৈত্রঘাট, বড়চেক, ছয়কুটসহ প্রায় ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। 
মৌলভীবাজার জেলার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম জানিয়েছেন, জেলার অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদনদী ও হাওড়ে পানি বৃদ্ধির ফলে এক লাখ ৯৩ হাজার ৯৯০ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও ৯৮ টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫৭১ জন পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। পানিবন্দিদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। 
সুনামগঞ্জে বন্যায় মোমবাতি ও শুকনা খাবারের আকাশছোঁয়া দাম : পাহাড়ি ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তলিয়ে গেছে সাত উপজেলার নিম্নাঞ্চল। সেইসঙ্গে পানি ঢুকেছে পৌর শহরেও। বন্যার পানিতে যখন জেলাবাসী দিশেহারা তখন সুনামগঞ্জের বাজারগুলোতে ঘণ্টা খানিকের ব্যবধানে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে মোমবাতিসহ শুকনা খাবারের দাম। এতে চরম বিপাকে পড়েছে মানুষ। বানের পানিতে বিধ্বস্ত হয়েছে বসতঘর, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, গবাদিপশু, গোলার ধান-চাল। এমন দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা জেলায় অসংখ্য। যা বানের পানি নেমে গেলে নির্ধারণ করা যাবে। 
এদিকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে যত বেশি বৃষ্টি হবে তত বেশি বন্যা তার রূপ বদলাবে। তবে এরইমধ্যে দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলায় বন্যায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের মানুষ। পাশাপাশি বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, মধ্যনগর, ধর্মপাশা ও সবশেষে সুনামগঞ্জ পৌর শহরেও বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলে গ্রামীণ রাস্তাঘাট। সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন জেলা সদরের সঙ্গে তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলা। এমনকি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওরসহ জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। 
এদিকে বন্যার পানি শহরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে সুনামগঞ্জের হাটবাজারগুলোর চিত্র। নিমিষেই বাজারগুলো থেকে উধাও হয়ে গেছে মোমবাতি, চিড়া ও সিলিন্ডার গ্যাস। সেইসঙ্গে ঘণ্টা খানিকের ব্যবধানে দামও যেন হয়ে উঠেছে আকাশছোঁয়া। 
বন্যাকবলিত মানুষরা বলেন, বাজারে মোমবাতি, চিড়া ও সিলিন্ডারের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। মামুন নামে এক ব্যক্তি বলেন, মানুষের যখন খারাপ অবস্থা তখন সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে শুকনা খাবার ও মোমবাতির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, এটা সত্যি দুঃখজনক। তাহিরপুরের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, ঢলের পানিতে ঘরের সকল আসবাবপত্র তলিয়ে গেছে। কোনো রকম ছেলে মেয়েকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি। 
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক বলেন, বন্যা মোকাবিলার জন্য এরইমধ্যে আমরা সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। সেইসঙ্গে জেলায় ৫১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিচ্ছেন। 
টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা : সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এ অবস্থায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জেলার তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওর, নিলাদ্রী লেকসহ সব পর্যটনকেন্দ্র। মঙ্গলবার রাতে তাহিরপুর উপজেলার এসব পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। 
তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভিন বলেন, পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে টাঙ্গুয়ার হাওর, নিলাদ্রী লেক, বারেকটিলা, শিমুল বাগানসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব পর্যটন স্পট বন্ধ থাকবে। 
হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর বাঁধে ভাঙন : হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বুধবার দুপুরে শহরতলীর জালালাবাদে নদীর বাঁধে হঠাৎ ভাঙন দেখা দেয়। ফলে প্রবল বেগে নদীর পানি জালালাবাদসহ আশপাশের এলাকায় প্রবেশ করছে।
এদিকে সকাল থেকেই খোয়াই, কুশিয়ারা, কালনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ জানান, দুপুর ১টার দিকে খোয়াই নদীর বাল্লা পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করেছে। খুব দ্রুতই পানি নিচে নেমে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যে জানা গেছে, দু’দিনের টানা বর্ষণ এবং উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বুধবার সকাল থেকে খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে চলে যায়। সকাল ১০টায় নদীর চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা সীমান্তে খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩১ সেন্টিমিটার এবং শহরের মাছুলিয়া পয়েন্টে ৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। 
বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই তিস্তায় বন্যার শঙ্কা : উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। বুধবার সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৯২ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। এর আগে সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে ৫১ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার পানি ছিল, যা বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তা ও সানিয়াজান নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এতে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারে ঘরবাড়িতে পানি উঠে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। 
অন্যদিকে মঙ্গলবার রাত থেকে সানিয়াজানে পানি বৃদ্ধিতে হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডে পানি প্রবেশ করে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। 
দুধকুমার-তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে : বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্ট ও দুধকুমার নদের ভুরুঙ্গামারী পাটেশ্বরী (সোনাহাট সেতু) পয়েন্টে। এছাড়াও কুড়িগ্রামের প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। 
অন্য নদনদীগুলোর পানিও বিপৎসীমার কাছাকাছি। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিচু বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে প্লাবিত হতে পারে বলে শঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্ককরণ কেন্দ্র। এদিকে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। বেশ কিছু এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। 
স্থানীয় পাউবোর তথ্য বলছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা হতে বুধবার সকাল ৬টায় দুধকুমারের পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৩১ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। একই সময়ে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে বেড়েছে ৩৮ সেন্টিমিটার পানি। এ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। বিপৎসীমার নিচে থাকলেও ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার ও ধরলার সেতু পয়েন্টে ওই সময়ের মধ্যে ৪৭ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিচু এলাকার বাড়িঘরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকা। বেশ কিছু সবজি ক্ষেত ও বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। নদী পাড়ের মানুষরা বলছেন, যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে অল্প সময়ের ভেতর ঘরে পানি ঢুকতে পারে। এতে ভোগান্তিতে পড়বে মানুষ। 
পানির গতি বাড়ায় ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে বেশ কিছু এলাকায়। জেলার রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় ভাঙছে তিস্তা। এদিকে দুধকুমার ভাঙছে চরভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরীর রায়গঞ্জ, বামনডাঙ্গা, বল্লভেরখাসসহ একাধিক ইউনিয়নে। রৌমারী উপজেলার হবিগঞ্জ বাজার, সোনাপুর, ফলুয়ারচর ঘাট, রাজীবপুরের কোদালকাটিতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে সোনাপুরে ভাঙনরোধে জরুরী ভিত্তিতে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। 
পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, নদনদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় স্বল্প মেয়াদি বন্যা সৃষ্ট হতে পারে। ভাঙনপ্রবণ সাতটি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। ভাঙনরোধে একটিতে জরুরি কাজ চলছে। ভাঙনপ্রবণ অন্য এলাকাগুলোতে কাজ করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। 
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যা মোকাবিলায় সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। ত্রাণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্যা কবলিতদের উদ্ধারের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। 
টেকনাফে প্রবল বৃষ্টিতে অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি : কক্সবাজারের টেকনাফে রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি বুধবার (১৯ জুন) দুপুর ১২টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকায় ৪টি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। 
জানা যায়, অতিবৃষ্টির ফলে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কানজর পাড়া, উলুবুনিয়া, উংচিপ্রাং, সাতঘড়িয়া পাড়া, হারাংখালী হ্নীলা ইউনিয়নের ছৈয়দ নুর পাড়া, সুলিশ পাড়া, পূর্ব সিকদার পাড়া, মৌলভী বাজার, ওয়াব্রাং, চৌধুরী পাড়া, রঙ্গিখালী লামার পাড়া, বাহারছড়া শামলাপুর ইউনিয়নের উত্তর শিলখালী, নতুন বাজার, পশ্চিম পাড়া, টেকনাফ পৌরসভার এলাকার বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি খাল দখলের কারণে বৃষ্টির পানি সরতে না পারায় তাদের বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে। 
হোয়াইক্ষং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আনোয়ারী বলেন, আমার ইউনিয়নের উনছিপ্রাং, রইক্ষং, কানজর পাড়া, উলুবুনিয়া, সাতঘড়িয়া পাড়াও হারাংখালী এলাকা অতিবৃষ্টির ফলে পানিতে তলিয়ে গেছে। এ সময় অনেক ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। আমি এসব এলাকা পরিদর্শন করেছি। 
নেত্রকোণায় তিন নদীর পানি বাড়ছে : নেত্রকোণায় টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে গত ২৪ ঘণ্টায় উব্ধাখালি, কংশ ও ধনু নদীর পানি বেড়েছে। তবে সোমেশ্বরীর পানি কিছুটা কমেছে। এর মধ্যে উব্ধাখালি নদীর পানি বেড়ে কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। এতে করে বন্যার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় তা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বুধবার সকাল ৯টা নাগাদ উব্ধাখালি নদীর পানি বাড়ার কথা জানিয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, কংশ নদের পানিও জারিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি মাত্র ৩ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে বইছে।
এ ছাড়া জেলার হাওরাঞ্চলের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ধনু নদের পানি খালিয়াজুরী পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আর সোমেশ্বরীর পানি কমে দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৫০ মিটার এবং বিজয়পুর পয়েন্টে ২ দশমিক ৯৯ মিটার নীচ দিয়ে বইছে।
জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, জেলায় এখনও বন্যা না হলেও আশঙ্কা রয়েছে। তা মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS