ভিডিও

রৌদ্রোজ্জ্বল সিলেট-সুনামগঞ্জে স্বস্তি, কমছে পানি 

উত্তরে বন্যার অবনতি

কুড়িগ্রামে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন কাঁচা সড়ক ও সবজি ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসল

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৪, ১০:০৬ রাত
আপডেট: জুন ২২, ২০২৪, ১২:৪৯ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

করতোয়া ডেস্ক : কুড়িগ্রামে তিস্তা, দুধকুমার, ব্র্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীসহ ১৬ নদীর পানি প্রতিদিনই বেড়েই চলছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি হয়েছে। গাইবান্ধায় সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে, ভারীবর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে নাজেহাল সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। পাঁচদিন পর  শুক্রবারের রৌদ্রোজ্জ্বল সকাল স্বস্তি এনেছে মানুষের মনে। বৃহস্পতিবারের চেয়ে এদিন জেলার বেশ কয়েকটি নদ-নদীর পানিও বিভিন্ন পয়েন্টে কমেছে।

বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে-

কুড়িগ্রাম :  কুড়িগ্রামে তিস্তা, দুধকুমার, ব্র্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীসহ ১৬ নদীর পানি প্রতিদিনই বেড়েই চলছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি হয়েছে।  শুক্রবার তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি ফুলবাড়ির শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

শুক্রবার কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাফসান জানি জানান, বিকেল ৩টায় দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে পানি সামান্য কমে এখন বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি ২৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫৫সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ধরলা নদীর পানি ফুলবাড়ি উপজেলার শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সবগুলো নদ-নদীর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে ।

এদিকে নদীর পানি বাড়ার কারণে তিস্তা ও ধরলা নদীসহ অন্যান্য নদনদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন কাঁচা সড়ক। ডুবে গেছে বাদাম, পাটক্ষেত, ভুট্টা, মরিচ ও শাক সবজি ক্ষেতসহ বিভিন্ন উঠতি ফসল। এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষেরা পড়েছেন বিপাকে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, দুর্যোগ কবলিত মানুষের সংখ্যা ৪ হাজার। একই সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ১৪৪ মে. টন জিআর চাল এবং নগদ ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ত্রাণ হিসাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তা বিতরণের প্রস্তুতি চলছে। নতুন করে ঢাকা থেকে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকা, ৯ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার এবং ৫০০ মে. টন চাল।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (ওয়েস্ট রিজিওন) এ কে এম তাহমিদুল ইসলাম উলিপুরের বেগমগঞ্জসহ বিভিন্ন ভঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, একদিকে বন্যা আবার আর একদিকে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। এ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট বড় ১৬টি নদ নদীর সবগুলোই ভাঙন প্রবণ। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার সবচেয়ে বেশি বিধ্বংসী ভাঙন প্রবণ। নদী ভাঙন প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম পরিদর্শনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট নিরসনে কি কি উদ্যোগ নেয়া যায় তা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিবেচনা করবে।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে জেলার ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২১ ঘন্টায় তিস্তা নদীর পানি ৪৩ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে  শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৫৩ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্টোল রুম সূত্রে জানা যায়।

অপরদিকে পানি বৃদ্ধিতে গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লারচর, গিদারি, ঘাগোয়া, কামারজানি, নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে সদরের মোল্লার চর ও ফুলছড়ির ফজলুপুর ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নদী বেষ্টিত যে যেসব ইউনিয়ন রয়েছে। সেসব এলাকায় শুকনা খাবার বিতরণের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রাথমিক সব প্রস্তুতি রয়েছে।

রৌদ্রোজ্জ্বল সিলেট-সুনামগঞ্জে স্বস্তি : ভারীবর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে নাজেহাল সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এদিকে, পাঁচদিন পর  শুক্রবারের রৌদ্রোজ্জ্বল সকাল স্বস্তি এনেছে মানুষের মনে। বৃহস্পতিবারের চেয়ে এদিন জেলার বেশ কয়েকটি নদ-নদীর পানিও বিভিন্ন পয়েন্টে কমেছে।

সিলেট আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, “বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে  শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে  সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত কোথাও বৃষ্টির খবর পাওয়া যায়নি। একইভাবে গত ২৪ ঘণ্টায় কোনো বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া যায়নি ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও।

 শুক্রবার বেলা ১১টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার এই পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার উপরে ছিল। সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে  সকাল ৯টায় প্রবাহিত হচ্ছিল বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। আগের দিন এই পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপরে ছিল।

সুনামগঞ্জের কিছু এলাকায় কমছে পানি, জনমনে ফিরছে স্বস্তি : সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। পানি নামতে শুরু করায় জনমনে ফিরেছে স্বস্তি। পাঁচ দিনের পানিবন্দি অবস্থা থেকে এবার হয়ত মিলবে মুক্তি এমনটাই আশা করছেন বন্যাকবলিত মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল,  যা বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  সরেজমিন দেখা যায় নদীতে পানির প্রবাহ কম থাকায় পানি নামতে শুরু করেছে পৌরশহরের বড়পাড়া, তেঘরিয়া, সাহেববাড়ী এলাকায়। তবে হাছননগর, নতুনপাড়া, বাধনপাড়া, শান্তিবাগ, বুড়িস্থল, ইসলামপুর, ময়নার পয়েন্টের পানি অপরিবর্তিত রয়েছে।

বড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মমিন বলেন, গত রাতেও বাসার সামনে পানি ছিল, পানি নেমে গেছে। পানি নেমে যাওয়ায় আতঙ্ক কমেছে।

মৌলভীবাজারে গতি কমিয়ে ট্রেন চালানোর নির্দেশ : ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় রেলপথের কিছু স্থানে পানি উঠে গেছে। এতে মৌলভীবাজারে জেলায় গতি কমিয়ে ট্রেন চলাচলে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে রেলওয়ে। কুলাউড়া জংশন ও ছকাপন রেলস্টেশনের মাঝখানে রেলপথে পানি ওঠায় ওই অংশে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রেলওয়ের কুলাউড়া জংশনে স্টেশনে দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) মো. মোজাম্মেল হক জানান, কুলাউড়া-সিলেট রেলপথের কুলাউড়া জংশন স্টেশন থেকে ছকাপন রেলস্টেশনে যেতে কিছু অংশ হাওরের কাছে পড়েছে। ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে হাওরের পানি উপচে সেখানে রেলপথ প্লাবিত হয়েছে। ওই স্থানে রেলের স্লিপারে পানি উঠে গেছে, তবে রেললাইন ভেসে রয়েছে।

নেত্রকোণায় বন্যার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু : নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মারা গেছে।  শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রাতকান্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে কলমাকান্দা থানার ওসি লুৎফুল হক জানান।  শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন (১১) ওই গ্রামের আবু কালামের ছেলে। গাজীপুরে একটি মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে পড়াশোনা করত।  ওসি বলেন, “রিফাত তার পরিবারের সঙ্গে গাজীপুরে থাকত। প্রায় ২০ দিন আগে বাবা-মায়ের সঙ্গে সে গ্রামের বাড়িতে আসে। ঈদের আনন্দে প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে গোসল করতে বাড়ি থেকে বের হয় রিফাত। পরে তারা বাড়ির সামনে পালপাড়া-হরিপুর গ্রামীণ পাকা সড়কে যায়। তখন ওই সড়কে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে যায় রিফাত। সাঁতার না জানায় সে পানি থেকে উঠে আসতে পারেনি। পরে অন্য শিশুদের চিৎকারে স্থানীয়রা রিফাতকে উদ্ধার করে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

এর আগে বৃহস্পতিবার মোহনগঞ্জে বন্যার পানিতে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দুইদিনে নেত্রকোণায় দুই শিশুর মৃত্যু হলো।

 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS