ভিডিও

ডিবির হেফাজত থেকে মুক্ত হয়েই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন সমন্বয়করা

প্রকাশিত: আগস্ট ০১, ২০২৪, ০৮:১৩ রাত
আপডেট: আগস্ট ০২, ২০২৪, ০১:৩৮ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

গত মাসের ২৭ তারিখে রাজধানীর একটি হাসপাতাল থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার কে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন সন্ধ্যায় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দিতে আরো দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ কেও নেওয়া হয় ডিবি হেফাজতে। পরদিন দিবাগত রাতে নুসরাত তাবাসসুম নামে আরো এক সমন্বয়ককে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। 

জানা যায়, চার-পাঁচ দিন ধরে তাঁদের সেখানে আটকে রাখা হয়। এর মধ্যে গত ৩২ ঘণ্টা যাবৎ তাঁরা অনশনে ছিলেন বলে জানিয়েছেন অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সমন্বয়ক নাহিদের বাবা বদরুল ইসলাম। এরপর আজ আজ বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার পর ছয় সমন্বয়কের স্বজনদের উপস্থিতিতে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা নিজেদের গাড়িতে করে তাঁদের বাসায় পৌঁছে দেন। 

ডিবি হেফাজত থেকে মুক্ত হয়েই তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে স্ট্যাটাস দেন। 

সারজিস আলম লিখেছেন, 'কথা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের থেকে কাউকে গ্রেফতার করবেন না, মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না। আপনারা কথা রাখেননি। আপনারা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর আঘাত করেছেন। সারা দেশে আমার স্কুল কলেজের ভাইবোনদের ওপর লাঠিচার্জ করেছেন। যাকে ইচ্ছা তাকে জেলে পাঠিয়েছেন। আন্দোলনকারীকে খুঁজে না পেলে বাসা থেকে ভাইকে তুলে নিয়েছেন, বাবাকে হুমকি দিয়েছেন। মাশরুর তার উদাহরণ।

সারজিস আরও লিখেছেন, যারা একটিবারের জন্যও এ আন্দোলনে এসেছেন তারা শান্তিতে ঘুমাতে পারেন না, গ্রেফতারের ভয়ে থাকে। এমন অনেকে আছে যাদের পরিবার এখনো তাদের খোঁজ পায়নি। এমন তো হওয়া উচিত ছিল না! কোথায় মহাখালীর সেতু ভবন আর কোথায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়! অথচ আপনারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে মহাখালীর সেতুভবনে হামলার জন্য গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলেন। সঙ্গে আছেন আসিফ মাহতাব স্যার, মাশরুরসহ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অসংখ্য শিক্ষার্থী।'

সারজিসের স্ট্যাটাসে লেখা হয়েছে, রিকশা থেকে নামিয়ে প্রিজনভ্যানে তুলছেন, বাসা থেকে তুলে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আমার বোনদের রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছেন। কী ভাবছেন? এভাবেই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে? ৬ দিনের ডিবি হেফাজত দিয়ে ছয়জনকে আটকে রাখা যায় কিন্তু এই বাংলাদেশের পুরো তরুণ প্রজন্মকে কিভাবে আটকে রাখবেন? দূর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছেন প্রতিনিয়ত সেগুলো কিভাবে নিবৃত করবেন। 

‘পুলিশ ভাইদের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলি। এ দেশের মানুষের ক্ষোভ আপনাদের উপর নয়, পুলিশের উপর নয়। এই ক্ষোভ আপনার গায়ের ওই পোশাকটার উপর। যে পোশাকটাকে ইউজ করে বছরের পর বছর আপনাদের দিয়ে এ দেশের অসংখ্য মানুষকে দমন-পীড়ন করা হয়েছে, অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, জেল আর আদালতের প্রাঙ্গনে চক্কর কাটানো হয়েছে, সেই পোশাকটার উপর। ওই পোশাকটা ছেড়ে আসুন আমাদের সাথে, বুকে টেনে নিব।’

‘এ পথ যেহেতু সত্যের পথ, ন্যায়ের পথ, তাই যেকোনো কিছু মোকাবেলা করতে আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত নই ৷ যতদিন না এ বাংলাদেশ আন্দোলনকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে ; গণগ্রেপ্তার, জুলুম, নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে ; ততদিন এ লড়াই চলবে৷’

একইভাবে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহও ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার। তিনি লিখেছেন, এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া শেষ ব্যক্তিটি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই মুক্ত নই। এই গণগ্রেপ্তার গণঘৃণার নামান্তর। 
আমাদের এই আন্দোলন শুধু ব্যক্তির মুক্তির জন্য নয়; বরং বৈষম্য, নিপীড়ন, গণগ্রেপ্তার এবং ছাত্র নির্যাতনের বিরুদ্ধে। এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া শেষ ব্যক্তিটি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’

তাদের এই ঘোষণার মাধ্যমে আন্দোলন আরো জোরদার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, আগামীকাল "প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল" কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS