ভিডিও

টিএসসিতে মানবতার ফেরিওয়ালারা

নিজের জমানো ও সাইকেল কেনার টাকা দিল ছোট্ট ইহান ও মিম

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৪, ১১:১৭ রাত
আপডেট: আগস্ট ২৪, ২০২৪, ০১:১৭ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা অফিস : কিছুক্ষণ পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) প্রবেশপথে এসে দাঁড়াচ্ছে ট্রাক, প্রাইভেট কার, সিএনজি, ঠেলাগাড়ি, ভ্যান ও রিকশা। যানবাহনগুলো থেকে নামানো হচ্ছে বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবার, কাপড় ও বিশুদ্ধ পানিসহ জরুরি দ্রবাদি।

আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দ্বিতীয় দিনের মতো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে টিএসসির প্রবেশপথে গণত্রাণ সংগ্রহ চলছে। রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের বন্যার্ত মানুষের জন্য ত্রাণ নিয়ে জড়ো হচ্ছেন সেখানে।

কেউ কেউ নিয়ে এসেছেন নগদ অর্থ। টিএসসির বুথ থেকে দায়িত্বরত আশরেফা খাতুন জানান, টিএসসিতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৩৯ লাখ ৩৫ হাজার ২৭২ টাকা নগদ অর্থ সংগ্রহ হয়েছে। এছাড়া মানুষ বিপুল পরিমাণে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো কাপড় জমা দিচ্ছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার সারা দিনে ১৪ লাখ ৭৬৫ হাজার ১৭৩ টাকা নগদ অর্থ এবং সর্বমোট ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা জমা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, টিএসসির জনতা ব্যাংক গেট দিয়ে প্রবেশ করে মূল ফটকে ত্রাণ জমা শেষে যানবাহনগুলো পূর্ব গেট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী হ্যান্ডমাইক দিয়ে এই পথের শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন। টিএসসির সামনে বুথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা নগদ অর্থ তালিকাভুক্ত করছেন। একদল শিক্ষার্থী জমা ত্রাণ টিএসসির ভেতরে নিয়ে যাচ্ছেন। জমা দেওয়া ত্রাণের মধ্যে মুড়ি, চিড়া, বিস্কুটসহ শুকনা খাবার, স্যালাইন, স্যানিটারি প্যাডসহ জরুরি ওষুধ, 

মোমবাতি, দেশলাই, গুড়, চানাচুর, চাল-ডাল, খই, নানারকম পোশাক, বিশুদ্ধ পানি এবং পানি শুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ অন্যান্য জরুরি দ্রব্যাদি রয়েছে। এর মধ্যে শুকনো কাপড়সহ ব্যবহার্য জিনিসপত্র এবং শুকনো খাবার টিএসসি ক্যাফিটেরিয়ায় স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। খেজুর-গুড়সহ অন্যান্য কয়েকটি দ্রব্য অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া কক্ষে রাখা হচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমম্বয়ক মহিউদ্দিন বলেন, মানুষের দেওয়া ত্রাণ নিয়ে গতকাল পাঁচটি ট্রাক টিএসসি থেকে বন্যাদুর্গতদের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। আজ (শুক্রবার) ১০টি ট্রাক যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে যে পরিমাণ ত্রাণ আসছে, তাতে আরও ট্রাক প্রয়োজন হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরমান হোসেন জানান, টিএসসিতে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রমে সেচ্ছসেবক হিসেবে কাজ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের অনেক শিক্ষার্থীও সেচ্ছাসেবায় যুক্ত রয়েছেন।

টিএসসিতে সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আল নাশেখ। তিনি বলেন, এত মানুষ টিএসসিতে ত্রাণ নিয়ে আসছে। একটি অভূতপূর্ব ব্যাপার। দেশের মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। বৃত্তবান থেকে নিম্নবৃত্ত সবাই নিজের সামর্থ অনুযায়ী ত্রাণ জমা দিচ্ছেন। এই টিএসসি দেশপ্রেমের আইকনে পরিণত হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও হলের উদ্যোগে শিক্ষার্থীরা নগদ অর্থ ও শুকনো কাপড় সংগ্রহ করছেন। শিক্ষার্থীদের অনেকগুলো দল ইতোমধ্যে ফেনী ও নোয়াখালীতে উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়েছে।

৩ বছরের জমানো টাকা বন্যার্তদের দিল ছোট্ট ইহান : ছোট্ট ইহান, বয়স ছয় বা সাত বছর। এই বয়সেই প্লাস্টিকের ব্যাংকে তিন বছর ধরে জমানো সব টাকা বন্যার্তদের জন্য দান করে ভালোবাসা কুড়াচ্ছে ছোট্ট এ শিশু।

আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিতে ইহান তার জমানো সব টাকা বন্যার্তদের জন্য দান করে দেয়।  তবে ইহানের টাকার পরিমাণ কত, তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কালেকশন বুথ থেকে প্রকাশ করা হয়নি।

ঢাবির লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ইবরাহীম মাহমুদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপে এক পোস্টে লেখেন, ‘ছয়/সাত বছরের পিচ্চি ইহান। গত ৩ বছরে জমানো তার সব টাকা প্লাস্টিকের ব্যাংকসহ টিএসসির ত্রাণ সংগ্রহ বুথে দিয়ে দিচ্ছে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াবে বলে! এই বাংলাদেশটা মনে হয় জিতে গেছে। এমন বাংলাদেশ কেউ আর কখনোই দেখেনি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক এ বি জুবায়ের ছোট ইহানের ছবি ফেসবুক পোস্টে দিয়ে লেখেন, ‘যা কিছু সুন্দর। তিন বছর ধরে প্লাস্টিকের ব্যাংকে জমানো সব টাকা নিয়ে টিএসসিতে হাজির ৭ বছরের ইহান। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ত্রাণ সংগ্রহ বুথের মাধ্যমে এ টাকা সে পৌঁছে দিতে চায় বন্যার্তদের সাহায্যে।’ মন্তব্যের ঘরে আশরাফুল ইসলাম লিখেন, ‘সাবাস বেটা! মানবতার কান্ডারি হবি বড় হয়ে। দুর্নীতি আর বৈষম্যের সঙ্গে আপস করবি না কখনো। তোর দেশ তুই তোর মতো করে গড়ে নিবি; পেছনে আছি আমরা লাখো পিতা।’

সাইকেল কেনার জন্য জমানো টাকা বন্যার্তদের দিল ছোট্ট মিম : তিন বছর ধরে প্লাস্টিকের ব্যাংকটিতে টাকা জমাচ্ছিল মিম। সেই টাকা দিয়ে কিনবে শখের সাইকেল। তবে দেশপ্রেম যেন শখপূরণের চেয়েও বড়। তাই সেই ব্যাংকভর্তি টাকা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) হাজির হয়েছে ছোট্ট মিম। দীর্ঘদিনের সঞ্চয়ের টাকা দান করে প্রমাণ করল ‘মানুষ মানুষের জন্য’।

মিমের সঙ্গে তোলা একটি ছবি নিজের ফেসবুক ওয়ালে প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আশরেফা। ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘আবারও তিন বছরের সঞ্চয় নিয়ে আসলো আরেক বাচ্চা। ওর নাম মিম। সাইকেল কেনার জন্য সঞ্চয় করছিল।’

লাল রঙের ব্যাংকটা দিয়ে গেল অন্য আরেক বাচ্চা। ওর মায়ের ওমরাহ করার জন্য জমানো টাকা। এন্ট্রি করার জন্য জিজ্ঞেস করলাম কত টাকা আছে। দুইজনই উত্তর দিলো যে জানেন না। আসলে পরিমাণটা আমাদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ না। যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো এই এগিয়ে আসা এবং এগিয়ে দেওয়ার বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশকে ঠেকিয়ে রাখার সাধ্য কারো নাই। ‘নতুন প্রজন্ম, নতুন বাংলাদেশ।’

ঢাবিতে একদিনে ৮৬ লাখ টাকা গণত্রাণ সংগ্রহ : বন্যার্তদের জন্য গণত্রাণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ঢাবির ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) মোট ৮৬ লাখ টাকা ত্রাণ সংগ্রহ করা হয়েছে।

ফেসবুকে এক পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, টিএসসি গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ছিয়াশি লক্ষ বাইশ হাজার একশো বাহাত্তর টাকা নগদ সংগ্রহ করা হয়েছে। শেষ এক ঘন্টায় সংগ্রহ ১৫ লক্ষ টাকা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS