ভিডিও

সংকটে একতা দেখাচ্ছে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৪, ১১:৪১ রাত
আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২৪, ১০:৩১ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপোর্টার,  ঢাকা অফিস : প্রবাদ বাক্য রয়েছে- ‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’। একজনের পক্ষে যে কাজ করা কঠিন তা সমবেত প্রচেষ্টায় করলে খুব সহজে সমাধান করা যায়। এই প্রবাদটির যথার্তথা আরেকবার প্রমাণ করলেন এদেশের ছাত্র-জনতা।

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন এবং প্রমান করে চলেছেন শুধু আন্দোলন বা দাবি নয়, যে কোনো বিপদে তারা ঐক্যবদ্ধ। তাদের এই ‘অটুট ঐক্য’ অনেকটাই কষ্ট লাঘব করছে বন্যার্তদের। এই ঐক্যের ছাতাতলে বানবাসিদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে পুরো দেশ।  আর তাতেই এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন অনেকে।

গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে নদীর পানি বৃদ্ধি ও তার জেরে সৃষ্ট বন্যায় তলিয়ে গেছে বাংলাদেশের ফেনী, নোয়াখালি, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়িসহ মোট ১১টি জেলা। বন্যার পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ জন এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪৫ লাখেরও বেশি মানুষ। বানবাসি এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার-পানিসহ নানান সমস্যা। এই অবস্থায় আবারও রাস্তায় নেমে পড়েন শিক্ষার্থীরা। বুথ খুলে, হাতে বাক্স নিয়ে সাহায্য তুলছেন তারা। আর তাদের এই আবেদনে মানবতার ফেরিওয়ালারা ছাপিয়ে পড়েছেন। যে যা পারছেন সাহায্য করছেন। খাবার-অর্থ-কাপড় নিয়ে এগিয়ে এসেছেন সব শ্রেণীর মানুষ।

বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) যেন হয়ে উঠেছে মানবতা ফেরিওয়ালাদের বিশ্বস্তস্থল। শুধু এই একটি শিক্ষাপিঠ নয়, সারাদেশের শিক্ষালয়ে চলছে গণত্রাণ সংগ্রহের কার্যক্রম। আর তাতে  ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। শিক্ষার্থী ছাড়াও তরুণ-যুবরাও ত্রাণ সংগ্রহে নিরলস প্রচেষ্টা করছেন।

ঢাবির টিএসসি প্রাঙ্গণ সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ট্রাক, সিএনজি, ভ্যান ও রিক্সায় বন্যার্তদের জন্য খাবার, জামা-কাপড়, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে আসা হচ্ছে। অসংখ্য মানুষ তাদের ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারে করে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে আসছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেওয়া তথ্য মতে, গতকাল বিকেল পর্যন্ত সাহায্য পাওয়া মোট নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দেড় কোটি।

ঢাবি শিক্ষার্থী সাইফুল কাজী বলেন, আমার মনে হচ্ছে যেকোনো দুর্যোগের মুখে বাংলাদেশের সবাই ঐক্যবদ্ধ। তাছাড়া যেকোনো জাতীয় স্বার্থে দল, মত, নির্বিশেষে সকল মানুষ যে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে আজকের টিএসসিই তা প্রমাণ করেছে। এই ছাত্র-জনতা যদি এমন থাকে আমার মনে হয় যেকোনো সমস্যা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারবে।

ঢাবির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হাসান ইনাম বলেন, আমি মনে করি এই ছাত্র-জনতাই আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়বে এবং ৫ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করবে। এই বন্যা, যাকে আমরা রাজনৈতিক বলছি তা আমাদের বিভিন্ন মতে ভাগ হয়ে যাওয়া ছাত্র-জনতাকে পুনরায় একত্রিত করেছে।

নগদ অর্থ সংগ্রহ বুথে থাকা একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেন, আমি কল্পনাও করিনি যে সর্বস্তরের মানুষ টিএসসির মতো জায়গার ওপর আস্থা রেখে, বিশ্বাস করে এত বেশি ত্রাণ সামগ্রী ও নগদ অর্থ সহায়তা দেবেন। আমি মনে করি আগামীর বাংলাদেশ হবে একতাবদ্ধ বাংলাদেশ, যা পূর্বে ছিল না এবং সেটা গড়বে আজকের ছাত্র-জনতা। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েই দেশের সকল সমস্যা ও দুর্যোগ কাটিয়ে উঠবে।

বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সংগ্রহে শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীকে বিরামহীন কাজ করতে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে ত্রাণের বহর খালি করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কদের তদারকি করতে দেখা যায়।

বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী আসায় টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া ও গেমস রুম পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় বারান্দায় ত্রাণ সামগ্রী স্তুপ করে রাখতে হয়। স্বেচ্ছাসেবকরা মানব লাইন তৈরি করে টিএসসি গেট থেকে ভেতরে ত্রাণ পৌঁছে দেন। ত্রাণ পরিস্থিতি নিয়ে হাসান ইনাম বলেন, ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছাতে এত চাপ হচ্ছিল যে, আমি টিএসসিতে ঢুকতে পারছিলাম না।

টাকা তোলার বুথে মিনিটে মিনিটে নগদ অর্থ দিয়ে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছেন। এখানে সাধারণ রিকশাচালক থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত গাড়িতে এসেও মানুষ ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। বন্যার্ত মানুষের সহায়তায় গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি চলমান রেখেছি।

সর্বসাধারণ তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে সাহায্য করছেন। একজন রিকশাচালক, দিনমজুরও আমাদের সাহায্যের জন্য আসছেন আবার একজন উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য এসে আমাদের সাহায্য করছেন। এই বন্যায় দেশের মানুষ দেখিয়েছে যে তারা যেকোনো জাতীয় সমস্যা ঐক্যবদ্ধ হয়েই মোকাবেলা করবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS