ভিডিও

রঙিন ফুলকপি চাষে কৃষকের চোখে নানা স্বপ্ন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৪, ০৭:৩২ বিকাল
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৪, ০৭:৩২ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

নাটোর প্রতিনিধি: উচ্চ মূল্য প্রাপ্তি ও নিরাপদ পুষ্টি চাহিদা মেটাতে নাটোরের গুরুদাসপুরে প্রথমবারের মত পরীক্ষামূলকভাবে রঙিন ফুলকপি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন স্থানীয় বিলকাঠোর গ্রামের কৃষক মোঃ আব্দুল আলিম। মাত্র ১০ কাঠা জমিতে ২২০০ চারা রোপণ করে প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার টাকার ফসল উৎপাদন করে নজির স্থাপন করেছেন তিনি।

অথচ চারা রোপণ থেকে উত্তোলন পর্যন্ত পরিচর্যা, জৈবসারসহ মোট খরচ হয়েছিল মাত্র ৬ হাজার টাকা। আর চারা রোপণের দুই মাস পর অর্থাৎ ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে জমি থেকে ফসল উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করে খরচ বাদে তার লাভ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার মত। প্রথম বারেই কৃষক আব্দুল আলিমের এমন সফলতা দেখে এখন উৎসাহ পাচ্ছেন এলাকার অন্য কৃষকরাও।

অন্যদিকে স্থানীয় বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই রঙিন ফুলকপি। পাশাপাশি বাজারেও সাদা ফুল কপির চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এই রঙিন ফুলকপি, অনেকেই কৌতুহলবশত: কিনছেন এই সবজি। সবজি বিক্রেতা থেকে শুরু করে পাইকারী বিক্রেতারাও হন্যে হয়ে খুঁজছেন এই রঙিন ফুলকপি। ফলে এই ফুলকপি চাষাবাদ নিয়ে এখন রঙিন স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা।

অপরদিকে স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছেন, ভালো ফলন আর ভালো দামও পাওয়ায় রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। রঙিন ফুলকপির সাফল্যে স্থানীয় কৃষি বিভাগও তাই অনেক খুশি। আগামীতে জেলাজুড়ে এ ফসল চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে কাজ করবেন কৃষি বিভাগ এমনটি দাবি কৃষি বিভাগের।
কৃষক মোঃ আব্দুল আলিম জানান, প্রথম দিকে এই ফুলকপি চাষাবাদ নিয়ে তিনি একটু শঙ্কিত ছিলেন।

কেননা এ ফসল চাষাবাদ নিয়ে তার কোন ধারনা ছিল না। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার প্রথম সাহস করে মাত্র ১০ কাঠা জমিতে ২২০০ চারা রোপন করেছিলেন তিনি। কোন প্রকার রাসায়নিক সার ও কীটনাশ ব্যবহার ছাড়াই এ ফসল চাষাবাদ করেছেন।

তবে জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করেছেন তিনি। সাদা ফুলকপির মতই চাষাবাদ খরচ হলেও তুলনামুলক ভাবে এই ফসলে জৈব সার বেশি প্রয়োগ করতে হয়েছে। ১০ কাঠা জমিতে চারা রোপন, পরিচর্যা, জৈব সার, জৈব বালাইনাশক ব্যবহার সহ মোট খরচ হয়েছে মাত্র ৬ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, চারা রোপন থেকে দুই মাসের মধ্যে ফসল তোলা শুরু করেন। তার জমিতে বেগুনী ও হলুদ রংয়ের ফুলকপি ছিল। প্রথম দিকে প্রতি কেজি ফুল কপি ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। পরে গড়ে ৬০ টাকা কেজি হিসাবে এই ফুলকপি বিক্রি হয়েছে। বেগুনী রঙের কপি প্রতিটা ২ থেকে আড়াই কেজি এবং হলুদ রংয়ের কপির ওজন হয়েছে পৌনে দুই কেজি থেকে আড়াই কেজি।

বাজারে এই ফুল কপির চাহিদাও অনেক বেশি। সাদা কপির চেয়ে এই কপির দাম বেশি হলেও মানুষ এই কপি কিনতে বেশি আগ্রহী। অনেকে জমি থেকেই কিনেছেন আর স্থানীয় হাট-বাজারে তোলার পর সবজি বিক্রেতাদেরও চাহিদা ছিল বেশি।

স্থানীয় কাছিকাটা বাজারের সবজি বিক্রেতা রঞ্জু ও রাজিব হোসেন বলেন, বাজারে সাদা ফুল কপি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে। সেখানে রঙিন ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। সাধারণ ফুলকপির চেয়ে দাম ও চাহিদা দু’টোই বেশি। তারা বলেন, ক্রেতাদের মতে অন্য ফুলকপির চেয়ে এই ফুলকপির স্বাদ বেশি ও মজাদার। তাই বার বার রঙিন ফুলকপি কিনতে আসছেন ক্রেতারা।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ হারুনুর রশীদ জানান, রঙিন ফুলকপি চাষে জৈব সার ব্যবহার করায় রাসায়নিক সারের ব্যবহার অনেকাংশে কম লাগে। রঙিন ফুলকপি সাধারণ ফুলকপির তুলনায় পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। পুষ্টিগুণ আর ভিন্ন রঙের কারণে স্থানীয় বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এজন্য কৃষক দামও কিছুটা বেশি পাচ্ছেন।

প্রথমবার কৃষক আব্দুল আলিম একটু হতাশাবোধ করেছিলেন, তবে চাষাবাদ ভাল ও দাম বেশি পাওয়ায় তিনি খুব খুশি। পাশাপাশি কৃষি বিভাগও সন্তুষ্ট এবং আশাবাদি। কেননা এ সবজি চাষাবাদ নিয়ে যে হতাশা ছিল তা দুর হয়ে গেছে। তাই আগামিতে এর প্রসার ঘটাতে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, জেলার মধ্যে এটাই প্রথম রঙ্গিন ফুলকপি চাষ। এই ফসল চাষাবাদে রাসায়নিক সার ও কোন প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। কেবলমাত্র জৈব সার ব্যবহার করে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।

এছাড়া সাদা ফুলকপির থেকে রঙিন ফুলকপি এক মাস আগে হারভেস্ট (ফসল কাটা) করাও সম্ভব। গুরুদাসপুরের কৃষক আব্দুল আলিম নিজের প্রচেষ্টা আর কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রথমবার রঙিন ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS