ভিডিও

পোরশায় একটি ‘মিনি পুকুর’ বদলে দিয়েছে শিক্ষিত বেকার যুবকের ভাগ্য

প্রকাশিত: এপ্রিল ০২, ২০২৪, ১০:৩৩ রাত
আপডেট: এপ্রিল ০২, ২০২৪, ১০:৫৯ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

ডিএম রাশেদ, পোরশা (নওগাঁ) : এইচএসসি পাস করে নওগাঁর পোরশা সরকারি কলেজে অনার্স ৩য় বর্ষে পড়াশোনা করছিলেন নাইমুল ইসলাম নাঈম। তবে গত করোনা মহামারির সময় পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। পরে বাড়িতে ফিরে কৃষি কাজ শুরু করেন। বরেন্দ্র অঞ্চল আমের জন্য বিখ্যাত হওয়ায় তিনি আম চাষের পরিকল্পনা করেন।

গত বছর গ্রামের পাশের মাঠে এক ব্যক্তির কাছে থেকে ১২বছরের জন্য সোয়া ২বিঘা জমি লিজ নিয়ে তৈরি করেন আম্রপালী জাতের আম বাগান। সেই বাগানের মধ্যে থাকা ছোট গর্তকে একটি বেসরকারি সংস্থার আর্থিক সহযোগিতায় পুন:খনন করে তৈরি করেন একটি মিনি পুকুর। ঐ পুকুরের পানি ব্যবহার করে, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করে বদলে যাচ্ছে শিক্ষিত এই বেকার যুবকের ভাগ্য।

নাইমুল ইসলাম নাঈম নওগাঁর পোরশা উপজেলার ছাওড় ইউনিয়নের ছাওড় দক্ষিণপাড়া গ্রামের শফিকুর রহমানের ছেলে, তার এই বাগানটি ছাওড়ের বরেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন। তরুণ চাষি নাইমুল ইসলাম নাঈম জানান, তীব্র খরা প্রবণ এলাকা হওয়ায় জমিতে আম বাগান তৈরির পরে পানির অভাবে গাছগুলো মরতে শুরু করে। মরা গাছগুলি এলাকার বেসরকারি সংস্থা সিসিডিবি’র কর্মকর্তাদের নজরে আসে।

সংস্থার পক্ষ থেকে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে বাগানে থাকা একটি ছোট গর্তকে পুন:খনন করে আনুমানিক ১শতাংশ জমির উপর একটি মিনি পুকুর তৈরি করা হয়। পুকুরটি মূলত বৃষ্টির পানি ধরে রেখে প্রয়োজন ও পরিমাণমতো গাছে পানি সেচ দেওয়ার কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছে।

এছাড়াও সিসিডিবি’র সহযোগিতায় পুকুর পাড়ে বেগুন, লাউ, টমেটো, সিম, করলা, পটল, গাজরসহ বিভিন্ন জাতের শাকসবজি চাষ করেন নাঈম। এরপরেও মিনি পুকুরে পানি অবশিষ্ট থাকায় আম বাগানের সাথি ফসল হিসেবে চাষ করেন মিষ্টি কুমড়া। বিনামূল্যে উন্নতমানের মিষ্টি কুমড়ার বীজ, ফেরোমেন ফাঁদ, হলুদ আঠাঁলো ফাঁদ, ২/৩জি কাটিং পদ্ধত্তি, কেঁচো সারের ব্যবহার, মালচিং ইত্যাদি জৈব পদ্ধত্তি চর্চা করার জন্য সহায়তা করে আসছে সিসিডিবি।

তিনি জানান, আম বাগান বাদে শুধু মিষ্টি কুমড়া পরিচর্যায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১০হাজার টাকা। বাগানে মিষ্টি কুমড়ার গাছ রয়েছে ৮৫০টি, প্রতি গাছে ফল পর্যায়ক্রমে ফল ধরা চলমান রয়েছে। স্থানীয় বাজারে সাইজ ভেদে বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৫০-৬০ টাকা। শুধু মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে দেড় লক্ষাধিক টাকা আয় করবেন বলে আশা করছেন তিনি। এছাড়াও পুকুরপাড় থেকে বিভিন্ন শাকসবজি বিক্রি করে প্রতি মাসে ২-৩ হাজার টাকা আয় করছেন।

বেসরকারি সংস্থা খ্রিস্টিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিবি) এর প্রোমোটিং ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট কমিউনিটিস ইন বাংলাদেশ-২ প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী স্টিভ রায় রুপন বলেন, তীব্র খরা প্রবণ এলাকা হওয়ায় খরা মৌসুমে এই এলাকার অনেক পুকুরই পানিশূন্য হয়ে যায়। আমরা ঐ মিনি পুকুরে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য ত্রিপল বিছিয়ে দিয়েছি, এখানে পানিতে কচুরিপানা এবং তালপাতা রাখা হয়েছে যাতে পানি কম বাষ্প হয় এবং বেশি দিন পানি ব্যবহার করা সম্ভব হয়।

তিনি আরও জানান, নতুন ফল বাগানগুলোতে এমন মিনি পুকুর খনন করলে কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বেশ অবদান রাখা যাবে। একইসাথে বৃষ্টির পানি ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে ভূমিকা রাখবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, আম চাষি কৃষকদের আম বাগানে সাথি ফসল হিসেবে শাকসবজি ও মসলার মধ্যে পেঁয়াজ রসুন চাষ করতে বলছি। এতে আম গাছের পরিচর্যায় যে খরচ হবে তা এখান থেকেই উঠে আসবে।

সিসিডিবির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এমন মিনি পুকুর এলাকার বাগানগুলোতে তৈরি করতে পারলে জমিতে সেচের পানির সংকট নিরসনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS