ভিডিও

জাতীয় চা দিবস মঙ্গলবার, পঞ্চগড়সহ উত্তরের সমতলের চা আবাদের দুই যুগ

  চা আবাদি জমির পরিমাণ বাড়লেও  ভাগ্য বদল হয়নি চা চাষিদের

প্রকাশিত: জুন ০৩, ২০২৪, ০৮:১১ রাত
আপডেট: জুন ০৩, ২০২৪, ০৮:১১ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

সামসউদ্দীন চৌধুরী কালাম, পঞ্চগড় : ২০০০ সাল থেকে ২০২৪। এরই মধ্যে পঞ্চগড়সহ উত্তরের পাঁচ জেলায় সমতলের চা আবাদে কেটে গেছে দুই যুগ। এই সময়ের মধ্যে বেড়েছে চা আবাদি জমির সংখ্যা। প্রতি বছর রেকর্ড হচ্ছে উৎপাদনেও। কিন্তু যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চা উৎপাদন করে যাচ্ছেন ক্রমাগত লোকসানে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন তারা।

এখনও চা বাগান নিয়ে শঙ্কার দোলাচলে চা বাগান মালিকরা। কারখানা মালিকদের সিন্ডিকেটের বলি হয়ে বাগানের চা গাছ উপড়ে ফেলেছেন অনেক চাষি। আর যারা আশায় বাগান বাঁচিয়ে রেখেছেন পরিচর্যার অভাবে তাদের বাগানেরও করুণ দশা।

এরই মধ্যে প্রচন্ড খরায় ঝলসে গেছে চা গাছ। নতুন মৌসুমে নতুন দরে কারখানাগুলো চা পাতা সংগ্রহ শুরু করার পরই পাতার অভাবে বন্ধ হয়েছে অনেক চা কারখানা। নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দাম দিয়েও তারা কাঁচা পাতা সংগ্রহ করতে পারছে না।

নতুন মৌসুমের জন্য নতুন দর নির্ধারণ করা হলেও বাগানে কচি পাতা না থাকায় অধিক মূল্যের চা পাতার মূল্য থেকেও বঞ্চিত চা চাষিরা। বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সমতলে ২০০০ সালের দিকে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে চা চাষে বিপ্লব ঘটে উত্তরের এই জেলায়।

সেই সাথে আশপাশের জেলা ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলায় ছড়িয়ে পড়ে চা চাষ। গড়ে ওঠে সম্ভাবনাময় দেশের তৃতীয় চা অঞ্চল। বর্তমানে উৎপাদনের দিক থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল এই সমতলের চা। পঞ্চগড়সহ উত্তরের পাঁচ জেলায় ৯টি নিবন্ধিত চা বাগান, ২০টি অনিবন্ধিত চা বাগান এবং ৮ হাজার ৩৭১টি ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানসহ মোট ১২ হাজার ১৩২ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে।

২০২৩ সালের চা বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী এই অঞ্চল থেকে ৮ কোটি ৬১ লাখ, ৪৬ হাজার ৭০৪ কেজি সবুজ পাতা থেকে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার ২৮টি চলমান চা কারখানায় এক কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৩০ কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে। জাতীয় চা উৎপাদনে উত্তরাঞ্চলের অবদান ১৭.৪৪% এবং যা অঞ্চলভিত্তিক চা উৎপাদনে দ্বিতীয়।

উত্তরাঞ্চলে বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত চা কারখানার সংখ্যা ৫৮টি। দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পঞ্চগড়ে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত লোকসান গুণে আসছে সমতলের চা চাষিরা। সার, কীটনাশক, সেচে অতিরিক্ত খরচের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও কাঁচা চা পাতার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত চা চাষিরা।

নিলাম মার্কেটে তৈরিকৃত চায়ের ভাল দর না পাওয়ার অজুহাতে নির্ধারিত দরের চেয়ে কম দামে কারখানায় কাঁচা চা পাতা দিতে বাধ্য করে কারখানাগুলো। সেই সাথে বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় অর্ধেক চা পাতা কর্তনের ফলে সর্বস্বান্ত হয়েছে অনেক চা চাষি। লোকসানে আর ক্ষোভে বাগানের চা গাছ উপড়ে ফেলেছেন অনেক চা চাষি। আর যারা বাগান রেখেছেন তারা সঠিক পরিচর্যা না করায় বাগানের অবস্থা পৌঁছেছে অনেক খারাপ অবস্থায়।

এরই মধ্যে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে প্রচন্ড দাবদাহ। দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টি আর দাবদাহে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সমতলের এই চা অঞ্চল। বিবর্ণ হয়ে পড়েছে সবুজ চা গাছ। প্রচন্ড রোদে ঝলসে গিয়ে আক্রমন বেড়েছে লাল মাকড়সা, লুপারসহ বিভিন্ন পোকার।

ক্রমাগত লোকসানের শঙ্কায় চা বাগানে সেচসহ নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে না করায় বাগানের অবস্থা হয়েছে খুবই খারাপ। এরই মধ্যে চলতি বছরের জন্য কাঁচা চা পাতার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ১৭ টাকায়।

নতুন দামে নতুন মৌসুমে চা কারখানাগুলো চালু হলেও পাতার অভাবে একে একে বন্ধ হতে থাকে কারখানাগুলো। বেশি দাম দিয়েও তারা কারখানা চালু রাখার জন্য কাঁচা পাতা পাচ্ছে না। বর্তমানে ২০-২২ টাকা কেজি দরে কাঁচা পাতা নিচ্ছে কারখানাগুলো।

তেঁতুলিয়া উপজেলার শিলাইকুঠি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, তার ৯ একর জমিতে চা বাগান রয়েছে। চলতি মৌসুমে তিনি এখন পর্যন্ত কারখানায় কোন পাতা দিতে পারেননি। কারণ হিসেবে তিনি জানান, ক্রমাগত লোকসানের কারণে গত বছর বাগানোর যত্ন নেয়া হয়নি।

এছাড়া চলতি মৌসুমের শুরুতে প্রচন্ড খরায় বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাগান বাঁচিয়ে রাখতে অতিরিক্ত সেচ ও কীটনাশক ব্যবহার করতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে। গাছ বড় হওয়ায় শ্রমিক দিয়ে ডাল কেটে ফেলতেও অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। বৃষ্টির পর নতুন পাতা হলেও এখন পাতা কাটার শ্রমিক বা মেশিন পাওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমির হোসেন বলেন, টানা এক মাসের তাপদাহের কারণে বাগানে চা উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। প্রচন্ড রোদ, তীব্র গরম এবং দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চা বাগানে পোকামাকড়ের আক্রমন বেড়ে গেছে।

তবে বৃষ্টির পর গাছে নতুন পাতা এসেছে। এবার দামও বেশ ভাল। সর্বনিম্ন দর প্রতি কেজি ১৭ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বর্তমানে কারখানাগুলো মেশিনে কাটা পাতা ২২ টাকা ও হাতে তোলা পাতা ২০ টাকা দরে কিনছে। আশা করছি চা চাষিরা এবার লাভবান হবেন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS