ভিডিও

বগুড়ার হাটগুলো প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে

কোরবানীর হাটে ইচ্ছেমত হাসিল আদায়ের অভিযোগ

প্রকাশিত: জুন ০৯, ২০২৪, ১১:৪৭ রাত
আপডেট: জুন ১০, ২০২৪, ০৩:০৭ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ার কোরবানীর পশুহাটগুলো প্রভাবশালীদের দখলে। সংসদ সদস্য, সরকারি দলের নেতার পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতারা ইজারাদারের নেপথ্যে থাকায় সরকার নির্ধারিত হাসিলের চেয়ে বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে ক্রেতা বিক্রেতাদের কাছ থেকে।

পবিত্র ঈদ উল আযহা বা কোরবানীর ঈদ এলেই হাটের খুটিনাটি বিষয়গুলো সামনে চলে আসে। কোন্ বার কোন্ হাট, আবার কোন্ হাটে গরু ছাগল বিক্রিতে বেশি হাসিল আদায় করা হচ্ছে, তা নিয়ে চলে জোর আলোচনা।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি বছর হাটের হাসিল যাতে কোন ভাবেই বেশি না নেওয়া হয়, এনিয়ে আলোচনা সভা এবং নির্দেশনা থাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপর। প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশনা থাকার পরও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হাটগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়।

আগে থেকে প্রস্তুতি না থাকা এবং হাটের ইজারাদারদের পিছনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থাকায় প্রশাসন তৎপর হতে কিছুটা হলেও বাধাপ্রাপ্ত হন। তবে মাঝে দুই একটা হাটে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হলেও তা খুবই নগন্য বলে ইজারাদারেরা এর তোয়াক্কা করে না।

মূলত জিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখার পরই শুরু হয় পশু হাটের মৌসুম। গত শুক্রবার বাংলাদেশে জিলহজ¦ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় কোরবানীদাতারা পশুহাট যাচাই করেতে শুরু করেছেন। অনেকে খোঁজ নিচ্ছেন কোন্ হাট কোন্ বারে।

বগুড়ার উল্লেখযোগ্য হাটগুলো হলো বগুড়া পৌরসভার এলাকার মধ্যে সুলতানগঞ্জ হাট এবং কালীতলা হাট, বগুড়া সদরে সাবগ্রাম হাট এবং ঘোড়াধাপ হাট (শনি ও মঙ্গলবার), চাঁদমুহা ও জয়বাংলা হাট (শুক্রবার ও সোমবার), কালীতলাহাট (রোববার ও বৃহস্পতিবার), সোনাতলা উপজেলার বালুয়াহাট (মঙ্গল ও শুক্রবার), চুকাইনগর কাচারী হাট (সোমবার ও শুক্রবার), সৈয়দ আহম্মেদ কলেজ হাট (রোববার ও বৃহস্পতিবার), পাকুল্লাহ হাট ও সোনাতলা স্টেডিয়াম হাট (শনিবার ও বুধবার) এবং হরিখালি হাট  (রোববার ও বৃহস্পতিবার), সারিয়াকান্দি উপজেলার রামচন্দ্রপুর হাট ও পাকেরদহ, চরাঞ্চল (সোমবার ও শুক্রবার), ফুলবাড়ি হাট (রোববার ও বৃহস্পতিবার), মথুরাপাড়া হাট (রোববার ও বুধবার), জোড়গাছা হাট (মঙ্গলবার ও শুক্রবার), শিবগঞ্জ উপজেলার বুড়িগঞ্জ (শুক্র ও সোমবার), মহাস্থান (শনিবার ও বুধবার) দাড়িদহ হাট (শনিবার ও মঙ্গলবার), শিবগঞ্জ সদর হাট (রোববার, বুধবার ও শুক্রবার), মোকামতলা (সোমবার ও বুধবার), ভায়েরপুকুর হাট (মঙ্গল ও শুক্রবার) এবং পিরব-সিহালী হাট (রোববার ও বৃহস্পতিবার), আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার রাধাকান্ত হাট ও আদমদীঘি হাট (শনি ও মঙ্গলবার), নশরৎপুর হাট (শুক্র ও সোমবার) শাওইল হাট (রোববার ও বুধবার), চাঁপাপুর হাট (বুধবার ও শুক্রবার), নওগাঁর আবাদপুকুর যা আদমদীঘির হাট হিসেবে পরিচিত (বুধ ও রোববার), দুপচাঁচিয়ার জিয়ানগর হাট (শনি ও বুধবার),  ধাপের হাট ও তালুচ হাট (রোববার ও বৃহস্পতিবার), চৌমুহনী ও জয়পুরহাটের গোপীনাথপুর হাট (শুক্রবার ও সোমবার), কাহালু উপজেলার মধ্যে তিনদিঘী, বিবির পুকুর ও দুর্গাপুরহাট (শুক্র ও সোমবার), মালঞ্চা হাট ও কাহালু মাদ্রাসা হাট (শনি ও মঙ্গলবার) এবং জামগ্রামহাট (রোববার ও শুক্রবার)।

নন্দীগ্রামের রনবাঘা ও ওমরপুর হাট (শুক্রবার) পন্ডিতপুকুর হাট (সোমবার ও বৃহস্পতিবার), শেরপুর উপজেলার বারোদুয়ারি হাট (সোমবার ও বৃহস্পতিবার), ছনকা বাজারহাট (রোববার ও বুধবার), জামাইল (শুক্রবার ও মঙ্গলবার), বেলঘরিয়া বাজার হাট (শনিবার ও বুধবার) এছাড়াও খামারকান্দি বেলতলা হাট হয় কোরবানীর এক সপ্তাহ আগে।

ধুনট উপজেলার হাটগুলোর মধ্যে ধুনট সদর হাট (শনি ও মঙ্গলবার), হাঁসখালী সোনামুয়া হাট ও মথুরাপুর হাট (শুক্রবার), গোসাইবাড়ি হাট (বুধবার), জোড় শিমুল হাট (সোমবার ও বৃহস্পতিবার)। এছাড়াও গোসাইবাড়ি, সোনামুয়া, মথুরাপুর হাট কোরবানী ঈদের আগে অতিরিক্ত একদিন হয়।

গাবতলী উপজেলার হাটগুলোর মধ্যে নাড়ুয়ামালা হাট, নাংলু হাট  (সোম ও শুক্রবার), ডাকুমারা হাট ও কাগইল হাট (রোববার ও বৃহস্পতিবার), পেরির হাট (বুধবার ও রোববার, দাড়াইল হাট (শুক্রবার ও সোমবার), বাগবাড়ি হাট (শুক্রবার ও মঙ্গলবার), তরুণী হাট, মহিষাবান হাট (শনিবার ও মঙ্গলবার)। শাজাহানপুর উপজেলার রানীর হাট (রোববার ও বুধবার), নয়মাইল হাট (সোমবার ও বৃহস্পতিবার) এবং দুবলাগাড়ি হাট (শনিবার ও মঙ্গলবার) বসে।

হাটগুলোতে কঠোর নজরদারির অভাবে প্রতিনিয়ত গরু ছাগল বিক্রিতে অতিরিক্ত হাসিল আদায় করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি গরুতে ৫শ’ টাকা এবং ছাগল বিক্রিতে ১৫০ টাকা হাসিল আদায় করার কথা থাকলেও  প্রায় প্রতিটি হাটে ৮শ থেকে হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে।

গরু ছাগল বিক্রিতে যে রশিদ দেওয়া হচ্ছে তাতে হাসিল আদায় করার টাকার পরিমান লেখা হচ্ছেনা বা রশিদে হাসিলেও টাকার পরিমান উল্লেখ করা হচ্ছেনা। এতে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ে ঠকছেন। বগুড়ার প্রায় প্রতিটি হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে হাসিল আদায় করা হচ্ছে। এটি অনিয়ম হলেও প্রতিকার পাচ্ছেননা ক্রেতা বিক্রেতারা।

বগুড়ার শিবগঞ্জের মহাস্থান হাটে ক্রেতার কাছ থেকে ৭৫০ এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ১৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এদিকে বগুড়া পৌরসভার নিয়ন্ত্রানাধীন সুলতানগঞ্জ হাট এবার ইজারা না হওয়ায় খাস আদায় করা হচ্ছে। এই হাট থেকে খাস আদায় করা হলেও গরু প্রতি এক হাজার এবং ছাগল প্রতি ৫শ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। খাস আদায়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আদায় করা হলেও নজর দিচ্ছেনা পৌরসভা কর্তপক্ষ।

অতিরিক্ত হাসিল আদায় প্রসঙ্গে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আফসানা ইয়াসমিন জানান, সরকার নির্ধারিত হাসিলের চেয়ে যাতে বেশি আদায় না করা হয় সেজন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।

বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পিএন ইমরুল কায়েস বলেন, কোরবানীর হাটের হাসিল আদায় নিয়ে আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা অতিরিক্ত হাসিল আদায় প্রসঙ্গে বলেন, কয়েক দিন আগে জেলা প্রশাসকের সাথে হাসিলের টাকার পরিমাণ বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। তিনি বাড়াতে চেয়েছেন। তবে কত বাড়াবেন তা বলা হয়নি। এ কারণে কিছু বেশি আদায় করা হচ্ছে। তবে দুইবার যাতে আদায় না করা হয় সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS