ভিডিও

বগুড়ায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা

নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে উপহারও দেওয়া হচ্ছে স্বজনদের

প্রকাশিত: জুলাই ০৩, ২০২৪, ১১:১৫ রাত
আপডেট: জুলাই ০৪, ২০২৪, ১২:০৪ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপোর্টার : পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল সবজি বাগান গড়ে তোলায় ঝুঁকেছেন বগুড়ার কৃষক ও সাধারণ মানুষ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় অনাবাদী পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় জেলার ১২টি উপজেলায় ইতিমধ্যে দুই হাজারের বেশি পুষ্টি বাগান চালু রয়েছে।

ফলে এসব পুষ্টি বাগানে আবাদ করা সবজি নিজেদের প্রয়োজনীয়তা মিটিয়ে প্রতিবেশী-আত্মীয় স্বজনদের উপহার প্রদানসহ বাজারে বিক্রি করে সংসারে বাড়তি আয় করছেন এসব বাগান মালিকরা।

বগুড়া সদরের গোবরধনপুর গ্রামের আজের উদ্দিনের স্ত্রী রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য পারিবারিক পুষ্টি বাগানের মালিক বিউটি বেগম বলেন, বাজারে প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি। বাজারে শাকসবজির দাম চড়া হলেও আমাদের তা আঁচ করতে হচ্ছে না।

আমরা আমাদের পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান থেকেই তা সংগ্রহ করে রান্না করে খাচ্ছি। প্রয়োজন মেটানোর পর উদ্বৃত্ত থেকে আত্মীয়-স্বজনদের উপহার হিসেবে দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি অবশিষ্ট শাক-শব্জি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। একই ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারি আল আমিনও ইউনিয়ন পরিষদের জমিতে একটি প্রকল্প নিয়ে চাষাবাদ করে আসছেন।

সদরের এরুলিয়া ইউনিয়নের নিলাইল গ্রামের সুনীল চন্দ্র একটি কলেজে চাকুরীর পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ থেকে সহায়তা নিয়ে তার বাড়ির দেড় শতাংশ জমির পাশাপাশি নিজ খরচে মোট ১৫ শতাংশ জমিতে পুষ্টি বাগান করেছেন। প্রথমবার গত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে তিনি তার পুষ্টি বাগানে বেগুন, মূলা, টমেটো, বাঁধাকপি, পুঁইশাক, লাল শাক, করলা, পটল, পাটের শাকসহ বিভিন্ন সব্জির আবাদ করেন।

ওই বাগান থেকে তার পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে প্রতি সপ্তাহে হাটে নিয়ে ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকার শাক-সব্জি বিক্রি করে থাকেন। তিনি বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ প্রকল্প চালু করায় গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষকসহ নিম্ন আয়ের মানুষরা খুবই উপকৃত হচ্ছে।

তিনি দ্বিতীয় পর্যায়ে একটি প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন প্রকারের শাক-সব্জির চাষাবাদ অব্যাহত রেখেছেন। একই এলাকার শ্রী বটেশ্বর চন্দ্র, শ্রী গোবিন্দ চন্দ্র দত্ত, ফটিক চন্দ্রও একটি করে পারিবারিক পুষ্টি বাগানের প্রকল্প নিয়ে চাষাবাদ করে উপকৃত হয়েছেন।

সদরের ফাঁপোড় এলাকার সিএনজি চালিত অটো রিকশা চালক মো: সুজন দ্বিতীয় বার পুষ্টি বাগানের প্রকল্প পেয়েছেন। তিনি ওই বাগানে পালং শাক, পুইশাক, বেগুন, ডাটা, গাজর, সীম, বরবটি, ধনিয়া পাতা আবাদ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। এবারও তিনি নতুন করে প্রকল্প’র জন্য আবেদন করেছেন এবং প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া জেলা কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, দেশের কোথাও এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণার প্রেক্ষিতে এবং মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে অনাবাদী পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় জেলার ১২টি উপজেলায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত মোট ১ হাজার ২৮টি পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হয়েছে।

এরমধ্যে বগুড়া সদর উপজেলায় ৪১৩টি, শাজাহানপুরে ১৭২টি, শেরপুরে ৩২৭টি, ধুনটে ৩৯৯টি, সারিয়াকান্দিতে ৭৫০টি, গাবতলীতে ১৩৫টি, সোনাতলায় ৩৯৩টি, শিবগঞ্জে ৪৪০টি, কাহালুতে ২৮৩টি, দুপচাঁচিয়ায় ৩২৯টি, আদমগিঘীতে ২৫৪টি ও নন্দীগ্রাম উপজেলায় ৪০৪টি পারিবারিক পুষ্টি  বাগান স্থাপন করা হয়েছে।

তা ছাড়াও এ প্রকল্পের আওতায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন এবং পুন:স্থাপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব পুষ্টি বাগানের মালিকের প্রত্যেককে দেড় শতাংশ জমিতে পুষ্টি  বাগানের জন্য সহায়তা হিসেবে ৩ মৌসুমের জন্য বীজ, সার, চারা, পানি দেয়ার জন্য ঝাজরি, ও পাখি সহ প্রাণীদের থেকে পুষ্টি বাগানের ফসল রক্ষা করতে নেট প্রদান করা হয়। যেসব বীজ ও চারা প্রদান করা হয় তারমধ্যে লাল শাক, কলমী শাক, পুঁইশাক, ঢেরস, বেগুন, মূলা, ধনিয়া, বরবটি, টমেটো, পাটশাক, লাউ, ঝিঙ্গা, ডাটা, বাঁধাকপি, মরিচ, লেবু, পেয়ারা ইত্যাদি।

বগুড়া সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার ইসমত জাহান বলেন, কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করণ প্রকল্পের সহযোগিতায় প্রতিটি পরিবারে দেড় শতক জমিতে গড়ে উঠেছে সবজি বাগান।

বাড়ির আঙিনায় যেখানে ছিল আবর্জনার স্তূপ, শুয়ে থাকত কুকুর-বিড়াল সেই উঠোনে এখন সবুজ প্রকৃতি। প্রতি বছর নতুন  ও পুন:স্থাপন হিসেবে প্রকল্প প্রদান করা হয়। এসব পুষ্টি বাগান করার ফলে অনেক প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক উপকার পাচ্ছেন। তারা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাজারে এসব শাক-সবজি বিক্রি করে অনেকটা স্বাবলম্বী হতে পারছেন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS