ভিডিও

লালমনিরহাটে চন্ডিমারী বাঁধে ধস

উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

সিরাজগঞ্জে ও গাইবান্ধা পানিবন্দি ৯৩ টি বিদ্যালয়

প্রকাশিত: জুলাই ০৫, ২০২৪, ১০:১২ রাত
আপডেট: জুলাই ০৬, ২০২৪, ০৯:২৮ সকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

করতোয়া ডেস্ক : প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলের পানিতে উত্তরের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। কুড়িগ্রামে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের ২ শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের পাশে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা শহররক্ষা চন্ডিমারী বাঁধে ধস নেমেছে। সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে ৩০টি ও গাইবান্ধার ৬৩টি বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী, নুনখাওয়া ও হাতিয়া পয়েন্ট পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা এবং গ্রামের পর গ্রাম। প্লাবিত হয়েছে নদ-নদী তীরবর্তী ৪১ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ২ শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। তবে জেলা প্রশাসনের হিসেব মতে দুর্যোগ কবলিত মানুষের সংখ্যা ৬২ হাজার ২শ’।

আজ শুক্রবার (৫ জুলাই) সকালে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭২ সেন্টিমিটার ও হাতিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের পানি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে মানুষজন। বানভাসি পরিবারগুলো বসতবাড়িতে বাঁশের মাচান, নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অধিকাংশ পরিবারে ৫দিন ধরে চুলা জ্বলছে না। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে তাদের গৃহপালিত পশুপাখি। চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট।

বানভাসীদের অনেকেই গবাদি পশুসহ বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বন্যা আশ্রযকেন্দ্রে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের কাঁচা -পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বানভাসীদের মাঝে খাদ্য, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবার এবং জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে বন্যা কবলিত মানুষ।

সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের মিলপাড়া এলাকার আব্দুল মতিন বলেন, পানি হু হু করে বাড়ছে। ঘরেও পানি প্রবেশ করেছে। চিন্তা ভাবনা করছি উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়ার। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি আরও ৪৮ ঘন্টা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ব্রহ্মপুত্রের পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যন্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, সরকারের নির্দেশনায় স্থানীয় প্রশাসন বন্যার্তদের পাশে থেকে দুর্ভোগ কমাতে সবধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। শুক্রবার সকাল থেকে উলিপুর ও সদর উপজেলার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন এবং বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ জাকির হোসেন।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের পাশে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা শহর রক্ষার্থে চন্ডিমারী বাঁধে ধস নেমেছে। গত বুধবার সর্ন্ধায় এ ধস দেখতে পায় স্থানীয়রা। দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই বাঁধ মেরামত করা না গেলে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। এতে তিস্তা নদীর গতিপথ উল্টো দিয়ে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ জুলাই) সরেজমিনে গেলে এ দৃশ্য চোখে পড়ে।

জানা গেছে, তিস্তা ব্যারেজের ফ্লাড বাইপাসের পাশে সাধুরবাজার হতে দক্ষিণ দিকে হাতীবান্ধা শহর রক্ষার্থে একটি বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ওই বাঁধটি এলাকায় চন্ডিমারী বাঁধ নামে পরিচিত। সেই বাঁধে ৬০/৭০ ফিট অংশ ধসে যাচ্ছে। কয়েক দিন ধরে ভেসে যাচ্ছে জিও ব্যাগ। পানি কমে যাওয়ার ফলে ভাঙন বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।

তিস্তা পাড়ের লোকজনের অভিযোগ,গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে পরিদর্শন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। কিন্তু এখনো কাজ শুরু না হওয়ার কারণে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এ বাঁধ ভেঙে গেলে তিস্তা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে উল্টো দিকে যাবে। এতে হাতীবান্ধা শহরে তিস্তা নদী ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আক্কাস আলী জানান, তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন। এরপর নির্বাহী প্রকৌশলী পরিদর্শন করেছেন। দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত এর কাজ শুরু হয়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ দৌলা জানান, হঠাৎ করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করা হবে। কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পরিমাপক দপ্তরের হিসেবে গত ২৪ ঘন্টায় যমুনার পানি দুপুর বারোটা পর্যন্ত ২৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে কাজিপুর উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৩০টি বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- কাজিপুর সদর ইউনিয়নের পলাশপুর, শুভগাছা ইউনিয়নের শুভগাছা, বীর শুভগাছা, উত্তর শুভগাছা, আমন মেহার, বয়রাবাড়ি, তেকানি ইউনিয়নের চর আদিত্যপুর, মাইজবাড়ী ইউনিয়নের শ্রীপুর, সুতানারা, বদুয়ারপাড়াসহ, যুক্তিগাছা, চর দোরতা, খিরাইকান্দি, গোয়াল বাথান, চর ডগলাস, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শুভগাছা ও নিশ্চিন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিকল্প স্থানে পাঠদানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কাজিপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান জানান, পানিবন্দী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের সম্ভব হলে বিকল্প স্থানে পাঠদানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর শিক্ষকদের বিদ্যালয় সার্বক্ষণিক দেখভালের বিষয়ে বলা হয়েছে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গাইবান্ধা সদরসহ সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ৬৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গাইবান্ধা সদরে ১৭টি, ফুলছড়িতে ১৪টি, সাঘাটায় ২১টি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বিদ্যালয় বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS