ভিডিও

বগুড়ায় ব্যাপক সহিংসতা, বিজিবি মোতায়েন, সাংবাদিকসহ আহত অর্ধশত মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ

আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাসদ অফিস, পুলিশ বক্স, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ডাক বিভাগ, বঙ্গবন্ধু মঞ্চসহ বঙ্গবন্ধুর মুরালে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৪, ১১:৩৮ রাত
আপডেট: জুলাই ১৭, ২০২৪, ০৩:৩২ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ায় কোটা বিরোধী আন্দোলন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আন্দোলন রূপ নিয়েছে ব্যাপক সহিংসতায়। এই ধারাবাহিকতা আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এ সময় জেলা আওয়ামী লীগ অফিস, জাসদ অফিসসহ বিএনপি অফিস, ডাক বিভাগ, পুলিশ বক্স, মুজিব মঞ্চ, বঙ্গবন্ধু মুর‌্যাল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়, লোটোর বিক্রয় কেন্দ্র, টাউন ক্লাব, আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মাহমুদ খান রনির বাণিজ্যিক কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙ্চুর করে।

এ সময় জেলা আওয়ামী লীগ অফিস ও আওয়ামী লীগ নেতা রনির বাণিজ্যিক কার্যালয় ও পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় পুলিশ বক্সে থাকা ৪টি মোটরসাইকেলসহ ৮টি মোটরসাইকেল। বিকেল পৌনে ৪টার থেকে সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত  তিন ঘণ্টা ধরে এই সহিংসতা চলে।

সহিংসতা চলাকালে দৈনিক করতোয়ার ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম শফিকসহ অন্তত: ৫০ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। তবে সহিংসতা চলাকালে পুলিশ নীরব থাকলেও সন্ধ্যার আগেই এ্যাকশনে যায়। এ সময় ব্যাপক টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে আন্দোলনকারীদের সাতমাথা থেকে হটিয়ে দেয়।

এরপর সন্ধ্যার দিকে হামলার প্রতিবাদে যুবলীগ শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে টেম্পল রোডে শহর বিএনপি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

যেভাবে হামলা হয় : তখন বিকেল তিনটা। বিভিন্নস্থান থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকে বগুড়া জিলা স্কুল মাঠে। আধা ঘণ্টার মধ্যে জড়ো হয় ৫ হাজারের মত শিক্ষার্থীরা। এ সময় ছাত্রলীগ কোটার পক্ষে একটি মিছিল বের করে। তখন জিলা স্কুল মাঠে অবস্থানরত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দিকে ঢিল ছুঁড়ে মারা হয়। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। তারা জিলা স্কুলের প্রধান ফটক খুলে বের হয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করে। ছাত্রলীগও পাল্টাা ধাওয়া করে।

এক পর্যায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়ার মুখে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা সাতমাথা থেকে চলে যায়। এরপরই বিকেল পৌনে ৪টার থেকে পুরো সাতমাথা এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তান্ডব শুরু করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তিন ঘণ্টা ধরে চলে তাদের তান্ডব। একে একে তারা হামলা চালায় টেম্পল রোডে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, জাসদ কার্যালয়, আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সামনে পুলিশ বক্স, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স. প্রধান ডাক বিভাগ, টাউন ক্লাবে।

আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের আসবাব পত্রসহ কম্পিউটার। সেইসাথে পুড়িয়ে দেয়া হয় জাসদ কার্যালয়ের আসবাবপত্র ও পুলিশ বক্সে। পুলিশ বক্সে থাকা পুলিশের মোটরসাইকেলসহ মোট ৮টি সাইকেলেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

সরকারি আজিজুল হক কলেজে ককটেল বিস্ফোরণ : এর আগে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ককটেল হামলা হয়েছে। এতে চার শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে কলেজের নতুন ভবনের ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ি এলাকার মো. বাদশার ছেলে সুমন (২৩), একই উপজেলার আনারপুরের বেলাল হোসেনের ছেলে তাফসির রহমান (২১), চালাপাড়ার মোহাম্মদ আলীর ছেলে মিলন (২২) এবং বেলকুচির গোলাম রব্বানির ছেলে মামুন (২২)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী কলেজের সামনে স্টেশন সড়ক অবরোধ করেন। আধাঘণ্টা অবরোধ করার পর পুলিশ এসে রাস্তা থেকে তাদের সরিয়ে দেয়। এরপর তারা বিক্ষোভ দেখিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকছিলেন।

ঠিক তখন তাদের ওপর একটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে সুমনসহ তিন সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা তাদের লক্ষ্য করে ককটেল হামলা চালিয়েছে।  ককটেল হামলার সময় ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছোটাছুটি করেন।

পরে পুলিশের একাধিক টিম ক্যাম্পাসে এসে অবস্থান নেয়। বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান। এরপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণে নেন। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখনও থমথমে।

শজিমেক শিক্ষার্থীদের অবরোধ : কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের (শজিমেক) শিক্ষার্থীরা। এতে বেলা সোয়া ১১টা থেকে দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের একপাশে আধাঘণ্টা সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

শাহ সুলতান কলেজে হামলা : সকাল থেকেই কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সমর্থনকারী শিক্ষার্থীরা বগুড়া পলিটেকনিকের সামনে সমবেত হতে থাকে। তারা বগুড়া-শেরপুর রোডে বগুড়া পলিটেকনিকের সামনে অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

এক পর্যায়ে বেলা দেড়টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বনানী গোল চত্বরে যাওয়ার জন্য বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। কিন্তু এ সময় বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজ অতিক্রম করাকালে কোটা আরেন্দালনবিরোধী বহিরাগত ও কলেজ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা লাঠি সোটা ও ধারালো অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে তাদের মিছিলে হামলা চালায়।

এ সময় ১০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীকে মারপিট করা হয়। ছাত্রলীগ কর্মীরা ধাওয়া করে বগুড়া পুলিশ লাইনস পর্যন্ত নিয়ে যায়। হামলায়  ছত্রভঙ্গ হলেও পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুনরায় একত্রিত হয়  এবং আন্দোলন আরো বেগবান করে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা বনানী থেকে পলিটেকনিক পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নেয়। এরপর তারা বগুড়া শাহ সুলতান কলেজের সামনে এসে বহিরাগত এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

এরপর কলেজের ভিতরে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের দিকে বৃষ্টির মত ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরাও পাল্টা ঢিল ও  ইট-পাটকেল ছোড়ে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের থামাতে পুলিশ হিমশিম খায়। এ সময় সরকারি শাহ সুলতান কলেজের প্রধান ফটক ভাঙচুর করা হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কলেজের ভিতরে ঢুকে ফটক সংলগ্ন একটি গার্ড রুমের জানালা ও দরজার গ্লাস ভাঙচুর করে।

তখন নিরাপত্তা কর্মী নূর মোহাম্মদকেও মারপিট করা হয়।  এছাড়া আব্দুল মমিন নামে একজন গণমাধ্যম কর্মীর মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। ঘণ্টাকাল এই সহিংসতা চলার পথ পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বনানী গোল চত্তরে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে। প্রায় ৪০ মিনিট সেখানে অবস্থান করে তারা চলে যায়।

জানা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন। সেখানে অবস্থান নিয়ে তারা ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করে। এসময় তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। তাদের অবস্থানের ফলে মহাসড়কের একপাশে আধাঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের বুঝিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেয়। পরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন।


বাম জোট’র মিছিলে ছাত্রলীগের বাধা : কোটা সংস্কার ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বগুড়ায় বাম গণতান্ত্রিক জোট’র মিছিলে বাধা দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় ব্যানার কেড়ে নেয়া ও ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে বগুড়া শহরের সাতমাথায় কোটা সংস্কার ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট বগুড়া জেলা শাখা।

কর্মসূচি অনুযায়ী বিক্ষোভ সমাবেশে জোট নেতৃবৃন্দ বক্তব্য শেষ করে একটি মিছিল নিয়ে নেতৃবৃন্দ সাতমাথা থেকে কাজী নজরুল ইসলাম সড়ক ধরে এগোতে থাকে। মিছিলটি কাজী নজরুল ইসলাম সড়কের মাঝামাঝি পৌঁছলে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ মিছিলটির সমানে গিয়ে বাধা প্রদান করে। বাম নেতৃবৃন্দের সাথে তাদের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি ও ব্যানার কেড়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের বাধার মুখে মিছিল শেষ না করেই বাম নেতারা চলে যান।

আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে হামলা ও আগুন : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও আসবাব পত্রে অগ্নি সংযোগ করেছে। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে প্রবেশ করে সব কিছু তছনছ করে।

এ ঘটনায় জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে হামলাকারীরা কার্যালয়ের চেয়ার টেবিল আসবাবপত্র এসি কম্পিউটার টিভি এবং দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের স্থাপনা সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সাধারণ পথচারী, দলীয় কার্যালয়ের সামনে ৮ থেকে ১০ টি মোটরসাইকেল অগ্নিসংযোগসহ নারকীয় এই তাণ্ডব চালিয়েছে।

বগুড়া শহর ও জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আগুন : সন্ধ্যায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের হটানোর পর রাতে বগুড়া শহর ও জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাংচুর করা হয়েছে। ভাংচুর করে আসবাব পত্র বাইরে বের করে আগুন দেয়।

জাসদ কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন : সাতমাথায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিক্ষোভ চলাকালে বিকেলে বগুড়া জেলা জাসদের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর করে  আসবাসপত্র বের করে আগুন দেয়। আগুনে সব কিছু পুড়িয়ে  দেওয়া হয়। এ সময় দলীয় কার্যালয়ে কোন নেতাকর্মী ছিলেননা। বিক্ষোভকারীরা দলবেঁধে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে হামলা : বগুড়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা শহরের সাতমাথাস্থ  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে হামলা চালিয়েছে। হামলায় ম্যুরালের কোন ক্ষতি না হলেও দাগ লেগেছে। বিক্ষোভকারীরা স্টিলের পাইপ নিয়ে হামলা চালায়। হামলাকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে কয়েকজন বিক্ষোভকারী মূর‌্যারেল সামনে দাঁড়িয়ে হামলা চালাতে বাধা দেয়।

টাউন ক্লাবে হামলা : আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে কোটা সংস্কারকারীরা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ের পাশে বগুড়া টাউন ক্লাবে প্রবেশ করে ভাঙচুর করে। এসময় তারা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া জেলা  জেলা ক্রীড়া সংস্থার  সহ সভাপতি শামীম কামাল শামীমের উপর হামলা চালিয়ে তাকে বেদম মারপিট করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। আহত শামীমকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

মুজিব মঞ্চ ভাঙচুর : কোটা সংস্কারকারীরা বিক্ষোভকালে মুজিব মঞ্চ ভাঙচুর করে। প্রথমে দুই জন তরুণ মুজিব মঞ্চের ছাদে উঠে টিনে লাঠি দিয়ে আঘাতকরতে থাকে। পরে তাদের সাথে আরও কয়েকজন যোগ দেয়। নিচ থেকে এবং উপর থেকে উভয় দিক থেকে ভাঙচুর শুরু করে। তারা মঞ্চের মাইনবোর্ড ছাড়াও ছাদের টিন খুলে ফেলে এবং স্টিলের পাইপ খুলে নেয়। মঞ্চের পিছনের দিকেও ভ্ঙাচুর করে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ভাঙচুর : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ চলাকালে  মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা কমান্ড কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ইট পাটকেল ছুঁড়ে কমান্ড কার্যালয়ের কাঁচ ভেঙে ফেলে। বিভিন্ন দিক থেকে একের পর এক পাটকেল ছুঁড়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা কমান্ড কার্যালয়ের সকল কাঁচ ভেঙে ফেলা হয়। একই সময়ে ওই ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর ও প্রথমতলাস্থ লোটোর শোরুমের কাঁচ ভেঙে ফেলে বিক্ষোভকারীরা। ওই সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদে কেউ না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

সুলতান মাহমুদ খান রনির কার্যালয়ে আগুন : বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনির ব্যক্তিগত কার্যালয় খান এন্টার প্রাইজে হামলা চালিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা।

আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে ৪ টার পর পরই বিক্ষোভকারীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হটিয়ে আওয়ামী লেিগর কার্যালয় সংলগ্ন রনির কার্যালয়ে হামলা চালায়। এসময় বিক্ষোভকারীরা রনির কার্যালয়ের আসবাসপত্র বের করে বাইরে এনে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা ওই কার্যালয়েও আগুন ধরিয়ে দেয়।

দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে অফিসের অন্যান্য জিনিসপত্র। ফায়ার সার্ভিস‘র গাড়ি আসতে না পারায় আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি। ফলে তার পুরো অফিস পুড়ে যায়। এসময় অল্পের জন্য রক্ষা পায় এর দেয়াল ঘেঁষে থাকা সান এন্ড সি হোটেল।

সড়ক বিভাজক ভাঙচুর : সাতমাথায় অবস্থানকালে আন্দোলকারী শিক্ষার্থীরা সাতমাথাকেন্দ্রীক সড়কগুলোত লোহার পাতের সড়ক বিভাজকগুলোতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। আন্দোলনকারীরা প্রতিটি সড়কের এই বিভাজকগুলো ভেঙে মাটিতে ফেলে দেয়।

ককটেল বিস্ফোরণ : আন্দোলকারী শিক্ষার্থীরা সাতমাথায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করলে বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তাদের আন্দোলন বানচাল করতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের কার্যালয়ের সামনে থেকে এই ককটেল বিস্ফোরণ করে।

সাতমাথায় নামাজ আদায় :  কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে এসে শহরের সাতমাথায় আসরের নামাজ আদায় করেন আন্দোলনকারীদের কয়েক জন। তারা আসরের নামাজের পর বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ারের পূর্বপাশে জামাতবদ্ধ হয়ে আসনের নামাজ আদায় করেন। এ সময় কয়েকজন তাদের ঘিরে ছিলো । নামাজের ছবি তুলতে চাইলে তারা ছবি তুলতে দেয়নি।

ছবি তোলা/লাইভ সম্প্রচারে বাধা : বিকেল সাড়ে ৩ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বগুড়া শহরের সাতমাথা ছিলো বিক্ষোভকারীদের দখলে। এ সময় দফায় দফায় বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর চালানো হয়।  স্লোগানে স্লোগানে সাতমাথা প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভকারীরা উৎসুক জনগন ও সাংবাদিকরা সেই ফুটেজ নেওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা তাতে বাধা দেয়। তারা কয়েক জনের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ফুটেজ ডিলিট করে দেয়। ফটো সাংবাদিক আব্দুর রহিমের ক্যামেরা নিয়ে  মেমোরী কার্ড খুলে নিয়ে ক্যামেরা ফেরত দেয়।

সিসি ক্যামেরা ভাংচুর : সাতমাথায় বিক্ষোভ চলাকালে বিক্ষোভকারীরা সাতমাথায় সিসি ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলে। হৈ চৈ উল্লাস করে বাটা শো রুমের দক্ষিণের সিসি ক্যামেরা ভাঙ্গার মধ্যে দিয়ে সাথার সিসি ক্যামেরাগুলো ভাঙচুর শুরু করে।

সাংবাদিক আহত : আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে শহরের সাতমাথায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে দৈনিক করতোয়ার ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম শফিক গুরুতর আহত হয়েছেন। ইটের আঘাতে তার মাথা ফেটে যায়। তার সহকর্মীরা তাকে নিয়ে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাকে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়। তিনি ওই অবস্থায় আবারও ঘটনাস্থলে আসেন।

আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) আরও আহত হয়েছেন দৈনিক ইত্তেফাক বগুড়া অফিসের ফটো সাংবাদিক শাহিনুর রহমান বিমু । এছাড়াও যমুনা টিভির বগুড়া অফিস প্রধান মেহেরুল ইসলাম সুজন ও সাংবাদিক আব্দুল আওয়ালও আহত হয়েছেন।

মোটরসাইকেলে আগুন : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে শহরের সাতমাথায় বিক্ষোভ চলাকালে ৮ টি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে দাঁড় করে রাখা ৪টি এবং এর কাছেরই আরও দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। মোটরসাইকেলগুলো পোড়ার সাথে সাথে পুলিশের অস্থায়ী চৌকিও পুড়িয়ে দেয়। আগুন লাগানোর ঘটনার কিছু সময় পর সাতমাথা আরও দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।

এছাড়াও ফটো সাংবাদিক মোমিন মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে বিক্ষোভকারীরা। তিনি সরকারী শাহ সুলতান কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে মোটরসাইকেল রেখেছিলেন। বিক্ষোভকারীরা সেখানেই তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।

টায়ারে আগুন : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা শহরের সাতমাথাসহ বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে। আগুন দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য তাদের সাথে থাকা লাঠিও পুড়িয়েছে সেই আগুনে।

বগুড়ায় বিজিবি মোতায়েন : শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে বগুড়ায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ৩ প্লাটুন বিজিবি সদস্য রাতে এসে বগুড়ায় পৌছে। রাতে বিজিবি বগুড়ায় পৌছে শক্ত অবস্থান নেয়। শহরের সাতমাথা এবং এর আশে পাশে অবস্থান নেয় বিজিবি।

এ ছাড়াও এপিবিএন সদস্যরা সন্ধ্যায় সাতমাথায় এসে পুলিশ সদস্যদের সাথে যোগ দেয়। বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন সন্ধ্যায় শহরের সাতমাথায় সাংবাদিকদের ৩ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েনের কথা জানান।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS