ভিডিও

জনবলের অভাবে ভেঙে পড়েছে কাহালু হাসপাতালের চিকিৎসেবা কার্যক্রম

কোন বিভাগেই নেই প্রয়োজনীয় জনবল

প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২৪, ০৯:৩৫ রাত
আপডেট: জুলাই ২৪, ২০২৪, ০৯:৩৫ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

কাহালু (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার কাহালু উপজেলা হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার সংকটে বহির্বিভাগে চিকিৎসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আর মেডিকেল অফিসারের শূন্য পদগুলো উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার দিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ায় কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ উপজেলার মানুষ।

মেডিকেল অফিসার স্বল্পতার কারণে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের একদিকে যেমন টিকেট কাটতে যেমন দীর্ঘ লাইন ধরতে হচ্ছে অপরদিকে তেমনি ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র নিতেও ঘন্টার পর ঘন্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যবস্থাপত্র নেয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এরমধ্যে আবার বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টিটিভগন রোগীদের একেবারে অতিষ্ঠ করে তুলছে।

জানা গেছে ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারসহ মোট ২৯ ডাক্তারের পদ থাকলেও গত মার্চে আটজন মেডিকেল অফিসার বদলি হয়ে যান। বর্তমানে এ হাসপাতালে পাঁচজন মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও এরমধ্যে আবার দু’জন বদলি হওয়ায় বহির্বিভাগে রোগী দেখার জন্য রয়েছে মাত্র তিনজন মেডিকেল অফিসার ও দু’জন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার।

হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পদ রয়েছে ১০ জন। এরমধ্যে চক্ষু, কার্ডিওলজি, যৌন-চর্ম ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। তবে যৌন ও চর্ম বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাহালুতে পোস্টিং দেওয়া হলেও তাকে ডেপুটেশনে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বর্তমানে হাসপাতালে সাতজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হাসপাতালের দোতলায় অপারেশন থিয়েটারের পাশের রুমগুলোতে বসে রোগী দেখছেন। কিন্তু রুমের সামনে ডাক্তারের নাম ও পদবি লেখা না থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা মানুষ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের খুঁজে পান না।

আবার প্রযোজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ রোগীদের ভালোভাবে চিকিৎসা দিতে পারছেন না।
হাসপাতালে স্বাস্থ্য সহকারী ৩৪ জনের পদ থাকলেও রয়েছে ২১ জন, সহকারী স্বাস্থ্য ও পরিদর্শকের সাতটি পদের মধ্য সবগুলো পদ শূন্য, এমএলএসএস সাতটি পদের মধ্য সবগুলো পদ শূন্য, ওয়ার্ড বয়ের পদ তিনটি থাকলেও রয়েছে মাত্র একজন, আয়ার দু’টি পদ থাকলেও তাও শূন্য, পরিচ্ছন্নতা কর্মী পাঁচজনের স্থলে রয়েছে তিনজন। এছাড়াও বাবুর্চি, দু’জন নৈশপ্রহরী ও মালির পদ শূন্য।

এ হাসপাতালে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও জনবলের অভাবে তাও চালানো যাচ্ছে না। ফলে আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি রুমটি অফিস চলাকালীন বন্ধ থাকতে দেখা যায়। এ রুমের দায়িত্বে থাকা দু’জনের মধ্যে একজন সময় মতো অফিস করেন না। আবার হাসপাতালের বহির্বিভাগে সকাল ৮টা থেকে রোগী দেখার নিয়ম থাকলেও সকাল ১০টার সময়ও কোন ডাক্তার হাসপাতালে আসেন না বলে জানা গেছে।

এদিকে হাসপাতালের দীর্ঘদিনের পুরাতন এনালগ এক্স-রে মেশিনটিও এখন আর মানুষের তেমন কোন কাজে আসছে না। হাসপাতালে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন দেওয়া হবে বলে বহুদিন আগে থেকে শোনা গেলেও মেশিনটিও দেওয়া হয়নি। ফলে আলট্রাসনোগ্রাম বা এক্সরের প্রয়োজন হলে তাকে বগুড়া জেলা শহরে যেতে হয়। আবার হাসপাতালে এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ড্রাইভারের পদটিও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।

তবে মাস্টাররোলের একজনকে দিয়ে এ্যাম্বুলেন্স চালানো হচ্ছে। আবার হাসাপাতলে জেনারেটর সচল থাকলেও চালানোর জুনিয়র মেকানিকের পদও শূন্য থাকায় সময়মত চলে না জেনারেটর। এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষেরা লাইন ধরে টিকিট ও চিকিৎসা নেয়ার পর ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের তোপের মুখে পড়েন।

এসব প্রতিনিধিরা প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে রোগী দেখার সময় দাঁড়িয়ে থাকেন এবং রোগী ব্যবস্থাপত্র হাতে নিয়ে ডাক্তারের রুম থেকে বের হওয়ামাত্রই মোবাইল ফোন দিয়ে শুরু হয় ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলার হুড়োহুড়ি। আবার হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে প্রতিদিন দু’জন নার্সের ডিউটি করার কথা থাকলেও বেলা ২টার পর মাঝে মধ্যে একজন নার্স থাকেন বলে জানা যায়।

হাসপাতালের বিভিন্ন সম্যসা সম্পর্কে কাহালু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. নীল রতন দেব বলেন, মেডিকেল অফিসারের বিষয়ে জানানো হয়েছে। ডিজিটাল এক্সরে মেশিন বরাদ্দ দেওয়ার চিঠি পেলেও এখনও মেশিনটি পাওয়া যায়নি। আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন চালানোর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কাউকে দেওয়া হয়নি, ফলে এ সেবা বন্ধ রয়েছে। চক্ষু, কার্ডিওলজি, যৌন ও চর্ম বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সংকটের ব্যাপারে জানানো হয়েছে।

জেনারেটর সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জেনারেটর চালানোর কোন লোক বা তেলের বরাদ্দ দেওয়া হয় না। বিদ্যুৎ চলে গেলে আমি নিজেই মাঝেমধ্যে তেল কিনে জেনারেটর চালাই।’



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS