ভিডিও

 চাকরি ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে ওসি’র স্ট্যাটাস 

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৪, ০১:৩১ দুপুর
আপডেট: আগস্ট ১৩, ২০২৪, ০১:৩১ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

নিউজ ডেস্ক:  ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরের ঘোষণা দিলেন পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. গোলাম সরওয়ার তুহিন। 

ওসি এম ডি তুহিন নামের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া স্ট্যাটাসে লিখেছেন-

’বিদায় বাংলাদেশ পুলিশ ’ বিদায় বেলা কিছু কথা -আমার বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্পোরাল পদে কর্মরত ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে তিনি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে চলে আসেন। আমার মা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষিকা ছিলেন। তখন আমার জন্ম হয়নি। বড় হবার সাথে সাথে জানতে পেরেছি তৎকালীন সেনাবাহিনীর মধ্যে অসন্তোষ থাকায় আমার মায়ের পরামর্শে তিনি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় চলে আসেন। এসে তিনি স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন এবং একটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ধীরে ধীরে তিনি পেশা হিসেবে ব্যবসাকে বেছে নেন। বাউফল উপজেলার বাহেরচর বন্দরে আমাদের একটি টিনের আড়ত, একটি রাইস মিল ও একটি ফার্মেসি ছিল। বেড়ে ওঠাকালীন আমার বাবাকে মাঝেমধ্যে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর লোকজন খুঁজতে আসতো, কিন্তু কেন আসতো তা আমরা জানতাম না। নানান অপবাদ দিয়ে আমার বাবাকে খোঁজা হতো। পুলিশের জন্য আমার বাবা বাড়ি থাকতে না পেরে বিভিন্ন শহরে এসে ক্যানভাসারের কাজ করতেন জীবিকা নির্বাহের জন্য। এভাবে আত্মগোপনে থেকে তাকে অনেকদিন পার করতে হয়েছে। একবার আমাদের স্বনামধন্য এমপি আ স ম ফিরোজ মহোদয় নৌকা মার্কা না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। কিন্তু আমার বাবা নৌকার বিপক্ষে না যেয়ে নৌকা মার্কায় অবিচল থেকে কাজ করেন। কার পক্ষে কাজ করেছেন তাকে আমরা চিনিও না তেমন। নীতিগত কারণে তিনি নৌকা মার্কার প্রার্থীর প্রতি অবিচল ছিলেন। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত ছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত: নৌকা মার্কা হেরে গেল স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হল এবং পুনরায় আওয়ামী লীগে যোগদান করলেন। এরপর আমাদের পরিবারের অবস্থা বিরোধীদলের চেয়েও খারাপ ছিল। এরপর আমার বাবা পুরাদমে ব্যবসায় মনোযোগ দিলেন ও সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। সেই থেকে আমাদের পরিবার সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে আছি। এরপর বেশ ভালোই ছিলাম।

হঠাৎ একদিন (বিএনপি ঘরানার) আমাদের বাড়ির এক মেয়ে আমার বড় ভাইকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিজ দায়িত্বে আমাদের ঘরে চলে আসেন। আমার ভাই তখন বরিশালে ছিল। নানাভাবে মেয়েকে বুঝালাম পরিবারের সাথে কথা বললাম ফিরে যাওয়ার জন্য কিন্তু তিনি অনঢ় ছিলেন তিনি যাবেন না। এলাকার সব লোক মিলে বুঝিয়েও তাকে ফেরাতে পারেন নাই।

হঠাৎ রাতের বেলা পুলিশ আসলো, আমার বাবা মাকে গ্রেফতার করল এবং থানায় নিয়ে মামলা দিয়ে চালান দিল বলল আমরা নাকি ঐ মেয়েকে অপহরণ করেছি। আসলে কি আইনেও  কি অপরাধ ছিল সেটাই আমরা জানতাম না, পরে শুনেছি নারী নির্যাতনের নতুন আইন হয়েছে। যা হোক অনেক কিছুর পরেও সেই মেয়েকে নিয়েই আমার বড়ভাই এখনো সংসার করছেন। আমার বাবা মায়ের জন্য এরচেয়ে বড় অপমান আর কিছু ছিল না।পুলিশ তো জানতো কোনটা সত্যি ছিল কোনটা মিথ্যা ছিল। ছেলের সুখের জন্য আমার বাবা-মা সবকিছু মেনে নিলেন, কিন্তু মৃত্যুর আগপর্যন্ত অপমানের কথা ভুলতে পারলেন না। এরপরও অনেক পুলিশি হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। কারণ আমাদের পিছনে কোন শক্তি ছিল না।  বাবা আমাকে বলেছিলেন যাই হোক কখনো কোন মানুষের ক্ষতি করবে না। সেই নীতিতেই বেঁচে আছি এবং পথ চলছি।

আমার বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তালিকাভুক্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, কারোর দয়ায় বা করুণায় নয়। বীর মুক্তিযোদ্ধার কোটায় আমার চাকরি হয়েছে। যেভাবে ৫ ই আগস্ট দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হলো, যেভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাস্কর্যসহ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে অপমান করা হলো, ভেঙেচুরে চুরমার করা হলো সেখানে কোন নৈতিক অধিকারে আমি এ চাকরি করি। চাকরিকালীন আমি সব কর্মস্থলেই নিরপেক্ষতার সাথে কাজ করতে পেরেছি, তবে রাজনৈতিক কারণে কিছু কাজ করতে হয়েছে যেহেতু আমি সরকারি চাকরি করি। আমি জীবনে কখনো কোন তদবির করি নাই, যেখানে দায়িত্বে দিয়েছে সেখানেই দায়িত্ব পালন করেছি। ‘২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস ’ আমাদের শেষ হয়েছে। এখন হয়ত নতুন স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস শুরু হবে।

আমি নতুন প্রজন্মের কাছে আমার মুক্তিযোদ্ধার কোঠায় থাকা চাকরিটি ছেড়ে দিলাম, তারা নতুন উদ্যমে জায়গা পূরণ করে নিবেন এবং প্রত্যাশিতভাবে দেশকে সাজাবেন এ অনুরোধ রাখলাম।

আমি আমার বাবার দেখানো নীতিতেই বাকিটা পথ হাঁটবো। বাবা বলেছিলেন যেখানে সম্মান নেই সেখান থেকে নিজেকে সরিয়ে নিও। সাধারণ জনগণের কাছে পুলিশ যেভাবে অসম্মানিত হলেন, সেই ইমেজ নিয়ে কিভাবে জনগণকে সেবা করব। আমি আমার বাবার সম্মান রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে বিদায় জানালাম। আমি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের জন্য আবেদনপত্র পাঠিয়ে দিলাম। তবে আইন পেশার সাথেই যুক্ত থাকবো। সকলের জন্য শুভকামনা রইল।
আমিন
জয় বাংলা, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

ওসির দেওয়া এই স্ট্যাটাসটি শেয়ার করে অ্যাডভোকেট আফসানা মিমি লেখেন, আমাদের স্বরুপকাঠী থানার বর্তমান ওসি আপনি দেখিয়ে দিলেন আপনার নীতি আদর্শ, আপনাকে স্যালুট তুহিন ভাই।

এ ব্যাপারে স্বরূপকাঠি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম সরওয়ার তুহিনের অফিসিয়াল মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে (ওসি তদন্ত) এইচ এম শাহিন রিসিভ করেন। তিনি জানান, ওসি সাহেব অফিসে আসেননি। ওসির স্বেচ্ছায় অবসরের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিও শুনেছি ফেসবুকে এমন একটা স্ট্যাটাস তিনি দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত দেন নাই। তার ব্যাক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে পাদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে কোন লিখিত কাগজ পাইনি।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS