ভিডিও

পড়াশোনা ছেড়ে অভাব মোচনে ঢাকায় চাকরিতে গিয়ে গুলিতে প্রাণ হারান রহমত

প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৪, ১১:০৩ রাত
আপডেট: আগস্ট ১৯, ২০২৪, ১১:০৩ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চরাঞ্চলের  রহমত আলী নামের এক ব্যক্তি। দুর্গম চরাঞ্চলে বাড়ি হওয়ায় অনেকেই তার কথা জানেন না। তার মায়ের আহাজারি থামছে না এখনও। তাকে হারিয়ে অতি দরিদ্র এই পরিবারটি মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

রহমত আলী বগুড়া সারিয়াকান্দির কাজলা ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চল জামথলের বাসিন্দা। তার বাবার মুনজু মিয়া একজন দিনমজুর। অভাবের কারণে  রহমত আলী জামথল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন।

বেশ কয়েকবার যমুনা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে ভিটেমাটি কৃষিজমি সবকিছু হারিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের একটি জমিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তার বাবা। ছেলে রহমতকে তাই বেশিদূর পড়াশোনা করাতে পারেননি। ২০২০ সংসারের হাল ধরতে ঢাকার গাজিপুর এলাকায় একটি গার্মেন্টস এ চাকরি নিয়েছিলেন।

সারাদিন পরিশ্রম করে যে সামান্য বেতন পেতেন তা নিজের ব্যয় নির্বাহের পর সবটুকু বাড়িতে পাঠাতেন। তার টাকায় এবং বাবার দিনমজুরিতে তাদের সংসার চলতো। নিজে পড়াশোনা ছেড়ে দিলেও তার ছোটভাই আল আমিনকে ঢাকায় নিয়ে এসে পড়াশোনা করাতেন। রহমতের ছোটভাই আল আমিন গ্রামেই এইচএসসি পাশ করে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন।

আল আমিন জানান, বড়ভাই তাকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করে বাসাতেই থাকতে বললেও তার ভাই রহমত আন্দোলনে যোগ দিতে গত ৫ আগস্ট বিকেলে বাসা থেকে বের হন। এরপর রাত ৮ টার পর থেকেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করার পর রাত ১০ টার দিকে গাজীপুর শ্রীপুর মাওনা চৌরাস্তা প্রশিকা মোড় এলাকার আল হেরা মেডিকেল সেন্টারে রহমতের লাশ শনাক্ত করা হয়।  সংঘর্ষে পুলিশের গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় রহমত। অ্যাম্বুলেন্সএ রহমতের মরদেহ৪ তার গ্রামের বাড়ি জামথল নিয়ে আসা হয়। নিজের জায়গাজমি না থাকায় রহমতকে জামথল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে দাফন করা হয়েছে।

রহমতের বড়ভাই আব্দুস সোবহান একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছোট বোন বন্যার বিয়ে হয়েছে। রহমতের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। রহমতের দাদী রহমতের রক্তমাখাটি শার্ট বুকে নিয়ে সবসময়ই বিলাপ করছেন। রহমতের মা সুফিয়া বেগম বারবার ছুটে যাচ্ছেন কবরের কাছে। আহাজারি করে বলছেন ‘হামার সংসারের আয় রোজগারের পথ বন্ধ হয়া গেল। হামরা একন কী খামু, কুন্টি যামু, হামার বাবাক আর কুন্টি পামু?’

জামথল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম রিপন বলেন, নিহত রহমতের পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতই খারাপ যে, অভাবের তাড়নায় তাকে পড়াশোনা ছেড়ে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করতে হয়েছে। বাবার দিনমজুরের আয় আর গ্রামবাসীর সহায়তায় তার সংসার চলছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুর রহমান  এ  ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন রহমতের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS