ভিডিও

জাতিসংঘে ড. মুহাম্মদ ইউনূস

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪, ১১:১৪ রাত
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪, ১১:১৪ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘জনগণের কাক্সিক্ষত রাষ্ট্র ব্যবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অতীতের ভুলগুলোকে সংশোধন করে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং ন্যায় ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য। শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ড. ইউনূস এ কথা বলেন।

গত জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে যুগান্তকারী পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই আজ আমি বিশ্ব সম্প্রদায়ের এ মহান সংসদে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমাদের গণমানুষের বিশেষ করে তরুণ সমাজের অফুরান শক্তি আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল রূপান্তরের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

আমাদের ছাত্র ও যুব সমাজের আন্দোলন প্রথম দিকে মূলত ছিল বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন। পর্যায়ক্রমে তা গণআন্দোলনে রূপ নেয়। এরপর সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখেছে কীভাবে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ এক নায়কতন্ত্র, নিপীড়ন বৈষম্য, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজপথ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল। ছাত্র-জনতা তাদের অদম্য সংকল্প ও প্রত্যয়ের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা থেকে মুক্তি এনে দিয়েছে বলে বিশ্ব দরবারে জানান ড. ইউনূস।

তিনি বলেন, তাদের এই সম্মিলিত সংকর্ল্পে মধ্যেই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নিহিত, যা এ দেশটিকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাঝে একটি দায়িত্বশীল জাতির মর্যাদায় উন্নীত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এই গণআন্দোলন রাজনৈতিক অধিকার ও উন্নয়নের সুবিধাবঞ্চিত বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করেছে বলে উল্লেখ করেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়ন কর্মকান্ডে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশীদারত্ব চেয়েছিল। আমাদের জনগণ একটি ন্যায্য, অন্তর্ভূক্তিমূলক ও কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে, যার জন্য আমাদের নতুন প্রজন্ম জীবন উৎসর্গ করেছিল। আন্দোলনকারীদের প্রজ্ঞা, সাহস ও প্রত্যয়ে ভূয়সী প্রশংসা করে ড. ইউনূস বলেন, বন্দুকের গুলি উপেক্ষা করে বুক পেতে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রবলভাবে সোচ্চার হয়েছিল আমাদের তরুণীরা। স্কুল পড়ুয়া কিশোর-কিশোরীরা নি:শঙ্কচিত্তে উৎসর্গ করেছিল তাদের জীবন। শত শত মানুষ চিরতরে হারিয়েছে তাদের দৃষ্টিশক্তি। আমাদের মায়েরা, দিনমজুরেরা ও শহরের অগণিত মানুষ তাদের সন্তানদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমেছিল রাজপথে।

তপ্ত রোদ, বৃষ্টি, মৃত্যুভয়কে তোয়াক্কা না করে তারা সত্য ও ন্যায় সঙ্গত আকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে দীর্ঘকালব্যাপী রাষ্ট্রযন্ত্রকে পরিচালনা করার অশুভ ষড়যন্ত্রকে পরাভূত করেছিল। উদারনীতি, বহুত্ববাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর মানুষের গভীর বিশ্বাস থেকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয় বলে উল্লেখ করেন প্রফেসর ইউনূস। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যে মূল্যবোধকে বুকে ধারণ করে আমাদের গণমানুষ যুদ্ধ করেছিল, সেই মূল্যবোধকে বহু বছর পরে আমাদের ‘জেনারেশন জি’ (প্রজন্ম জি) নতুন ভাবে দেখতে শিখিয়েছে।

এ রকমটি আমরা দেখেছিলাম ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার সময়ে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এই গণঅভ্যূত্থান আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষকে মুক্তি ও ন্যায় বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে প্রেরণা যোগাবে। আমাদের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে আমি তাই বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমাদের নতুন বাংলাদেশের সাথে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার উদাত্ত আহবান জানাই। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সমতা ও সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে একটি ন্যায় ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক সমাজ হিসেবে আত্মপ্রকাশের অভিপ্রায় বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহযোগিতা ব্যাপকতর ও গভীরতর করার আহবান জানান।

প্রধান উপদেষ্টার দীর্ঘ ভাষণে কতিপয় সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা আমরা পাই। তিনি তার ভাষণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান গ্রহণের বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতার কথা বলেছেন। আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকার মাত্র এক মাসের মধ্যে যে সংস্কারমূলক কর্মকান্ডে হাত দিয়েছে, তা প্রশংসনীয় এবং অবশ্যই সফল হতে হবে এবং এর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দিতে হবে।

এই সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য সবার সহযোগিতা দরকার। দেশকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে সরকারের পাশাপাশি দেশের আপামর জনসাধারণকে সহযোগিতার জন্য হাত বাড়াতে হবে। জাতিসংঘে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরব ভূমিকা বাংলাদেশকে আরও গৌরবোজ্জ্বল করেছে, বিশ্ব দরবারে দেশকে আরও মাথা উঁচু করতে শিখিয়েছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS