ভিডিও

অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স

ইয়াছিন আরাফাত বিজয়

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪, ০৮:০২ রাত
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪, ০৮:০২ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি বৈদেশিক রেমিট্যান্স। যার বারো আনাই আসে প্রবাসী আয় থেকে। বাংলাদেশে বৈদেশিক আয়ের ক্ষেত্রে অভিবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স সরাসরি রিজার্ভে যোগ হচ্ছে। গত ডিসেম্বর মাসেই প্রবাসী যোদ্ধারা সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব হতে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন যথাক্রমে ৪৪২.৮৮, ২৮০.৩৭, ১৬৫.৪৮ মিলিয়ন ডলার। অথচ তাদের ক্ষেত্রেই আমাদের যত কারসাজি। আমাদের দেশের শ্রমিকরা ধরেই নেন, বৈধভাবে বিদেশে যাওয়া সম্ভব নয়।

যে কারণে তাঁরা রিক্রুটিং এজেন্সিতে মাইগ্রেশনসহ খরচ আড়াই লাখ টাকা জমা দিয়েও বলেন, ৭২ হাজার টাকা দিয়েছেন। এখানেই শেষ নয় রয়েছে ধাপে ধাপে দালাল খরচ, আইনী বেড়াজাল, ভিসা জটিলতা সহ নানা অব্যবস্থাপনা, এভাবেই জীবনকে আঙ্গুলের ডগায় নিয়ে তারা পাড়ি দেয় হাজার লক্ষ মাইল সমুদ্রপথ। হাত বদলে এদের অনেকাংশই আবার মানব পাচারের শিকার। অথচ তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স, আমাদের মাথা উঁচু করে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের স্পর্ধা দেয়।

যারা আবার সব বাধা পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে পা রাখেন তাদের একটি অংশ কর্মসংস্থান সংকটে ভুগছেন। সবশেষে শূন্য হাতে বিপর্যস্ত বেকার পরিচয়ে দেশে ফেরত। অগ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেন নিজ পরিবারের কাছেই। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রামরুর এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশ কয়েকটি কারণে কর্মীরা দেশে ফিরে এসেছেন। কাজ না পেয়ে ফিরেছেন একটি বড় অংশ। এর মধ্যে বিদেশে গিয়ে কোনো কাজ পাননি ১৫ শতাংশ।

আর ২০ শতাংশ তাদের চুক্তি অনুসারে কাজ পাননি। কম বেতন দেয়ায় ফিরেছেন ১৪ শতাংশ। আটক হয়ে দেশে ফিরতে হয় ১৬ শতাংশ কর্মীকে। বৈধ ভিসা না থাকায় সাড়ে ১০ শতাংশ ও শারীরিক অসুস্থতায় ফিরেছেন ১২ দশমিক ৮ শতাংশ কর্মী। মাত্র ৩ শতাংশ কর্মী স্বেচ্ছায় দেশে ফিরেছেন। হয়তো প্রবাসজীবন তাদের ভালো লাগেনি। যারা আটক হয়ে ফিরেছেন, তাদের ৪৭ শতাংশের কাজ করার বৈধ অনুমতিপত্র (ইকামা) ছিল না।

মেয়াদ পূর্তির আগে দেশে ফিরে আসায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ৭২ শতাংশ ব্যক্তি ক্ষতিপূরণ পাননি। অনেকে ফিরে এসে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর সমাধান কোথায়? দেশে বড় বড় প্রশিক্ষণ কর্মশালা থাকলেও তা শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নেই সীমাবদ্ধ, নেই যথাযথ ব্যবহার। দক্ষ প্রবাসী শ্রমিক সৃষ্টিতে অবহেলা একসময় আমাদের দেশকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিবে। দেশের নারী অভিবাসী কর্মীদের মর্যাদা, সামাজিক সুরক্ষা ও সম্মান সমুন্নত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টিও আমাদের উপেক্ষা করা চলবে না।

সেইসাথে শ্রমিকদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সম্প্রতি সৌদি আরবে কর্মরত নারী শ্রমিক নিয়ে যে অভিজ্ঞতা, তা যেন অদূর ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সেখানে হাউজ কিপিং মানে নারীকে টর্চার সেলের মধ্যে ফেলে দেওয়া, নারী শ্রমিক মানেই একটি দাস ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তি এসব দিকে দূতাবাস, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাকে আরো বেশি দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে।

আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় না থাকার কারণে অভিবাসীকর্মীরা নির্যাতন ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সঠিক মজুরি না পাওয়াও একটি বিরাট সমস্যা। মজুরি শোষণের একটি প্রধান রূপ দেখা যায় ওভারটাইম ছাড়াই গৃহকর্মীদের দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করানোর মাধ্যমে। অন্যদিকে অভিবাসী শ্রমিকরা মৃত্যুর পরেও তাদের মজুরি এবং প্রাপ্য অধিকার কেড়ে নেওয়া থেকে রেহাই পান না। ক্ষতিপূরণের ওপর কর আরোপ করা শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের জন্য মজুরি চুরির আরেকটি রূপ।

এমন ঘটনাও ব্যাপকভাবে দেখা যায়, যেখানে নিয়োগ কর্তারা শ্রমিক সংগ্রহের জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করেন তা তাদের মজুরি থেকে অবৈধভাবে কেটে নেন। এই পরিমাণটি একজন শ্রমিকের তিন থেকে চার মাসের মজুরির সমান হতে পারে। এই সমস্যা বিরামহীন গতিতে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে শ্রমিকদের একটি বড় অংশকে প্রবাস বিমুখ করবে।

মজুরি চুরি শুধু অভিবাসী কর্মীদেরই নয় বরং তাদের পরিবার এবং দেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করে। প্রবাসী কর্মীদের যথাযথ মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ অভিবাসন সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। অভিবাসী শ্রমিকদের হয়রানি, প্রতারণা আর নির্যাতন থেকে পরিত্রাণে নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করতে হবে।

অভিবাসী কর্মীদের সেবা প্রদানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-বিষয়ক সংসদীয় কমিটি এবং অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সমন্বয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সকল সমস্যার দ্বার উন্মোচন হলেই প্রবাসী শ্রমিকরা হাসি মুখে রেমিট্যান্স পাঠাবে দেশে, সচল থাকবে দেশের অর্থনীতির চাকা।


লেখক : শিক্ষার্থী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

eyasinarafatbijoy124@gmail.com

01792-107491



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS