ভিডিও

দীর্ঘ সময় ধরে ডলার সংকট

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৪, ০৬:২৫ বিকাল
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৪, ০৬:৩৭ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

দীর্ঘদিন ধরে দেশে চলছে ডলার সংকট। এ সংকট উত্তরণের অন্যতম উৎস রপ্তানি আয়। কিন্তু সেখানেই নেই সুসংবাদ। কারণ চলতি অর্থ বছরে অক্টোবর-নভেম্বরের পর ডিসেম্বর মাসেও রপ্তানি আয় কমেছে। চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাস পণ্য রপ্তানি বেড়েছিল। কিন্তু এরপর থেকেই ধারাবাহিক কমছে। গেল অক্টোবর রপ্তানি আয় কমে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ হয়েছে।

পরের মাস নভেম্বরে কমেছে ৬ শতাংশ। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় কমেছে এক দশমিক শূন্য ২৬ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৫৩০ কোটি ডলারের, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম। এর আগে গত জুলাইয়ে ৪৫৯ কোটি, আগষ্টে ৪৭৮ কোটি এবং সেপ্টেম্বরে ৪৩১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়।

সব মিলিয়ে গত জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ২ হাজার ৭৫৪ কোটি ডলার। এই রপ্তানি গত অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। তবে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ কম। অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানির লক্ষ্য ঠিক করা ছিল তিন হাজার ১১ কোটি ডলার। সম্প্রতি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত পরিসংখ্যানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ডলার সংকট সৃষ্টি হলে তা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগের। সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে যে, দেশে ডলার সংকট চরমে পৌঁছেছে। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, চাহিদা ও সরবরাহে সামঞ্জস্য না থাকায় দুই বছরেরও কম সময়ের ব্যবধানে ৮৫ টাকার ডলারের দর এখন ১১০ টাকা। এরপরও বাজারে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ী, বিদেশে উচ্চ শিক্ষা ও চিকিৎসা প্রার্থী সবাই ডলারের জন্য হাহাকার করছেন বলে জানা গেছে।

সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা আমদানির জন্য চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না। এমনকি ব্যাংক বা অনুমোদিত মানি এক্সচেঞ্জগুলো চাহিদা মতো খুচরা ডলারও সরবরাহ করতে পারছে না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থ পাচার, বিদেশি  বিনিয়োগে স্থবিরতা, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া এবং মেগা প্রকল্পগুলোর ঋণের কিস্তি পরিশোধের কারণেই এই সংকট তৈরি হয়েছে।

ব্যাংক নির্ধারিত হারের চেয়ে খোলা বাজারে বেশি দামে ডলার বিক্রি হওয়ায় মূল্যস্ফীতিতে মদদ জোগাচ্ছে। গম, চিনি, ভোজ্য তেল, ডাল, পিঁয়াজসহ ভোগ্য পণ্যের এক বড় অংশ আমদানি নির্ভর। অথচ ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির জন্য ব্যাংকে গিয়ে চাহিদামতো ডলার পাচ্ছেন না। একেক ব্যাংক একেক দামে ডলার বিক্রি করছে। পরিণতিতে আমদানি পণ্যের খরচ বাড়ছে।

বাড়ছে শিল্পের উৎপাদন খরচ। বাংলাদেশে ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রার সংকট হওয়ার কথা নয়। দেশের রপ্তানি আয় ক্রমেই বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার আরেকটি প্রধান উৎস জনশক্তি রপ্তানিও বাড়ছে। ফলে কোনো যুক্তিতেই ডলার সংকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানোর ফলে সংকট দেখা দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাংক নির্ধারিত ডলারের দাম খোলা বাজারের বাড়তি চাহিদা তৈরিতে সহায়তা করছে।

গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮৫ জন শ্রমিক কাজ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন। ২০২২ সাল থেকে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর রেকর্ড সৃষ্টি হলেও প্রবাসী আয় কমছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদও কমছে। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে প্রবাসীরা ২১০ কোটি ডলার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন। গত ৭ মাসের মধ্যে যা সর্বাধিক।

রেমিট্যান্স বাড়লেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। জরুরি আমদানিতে সহায়তা দিতে ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রির কারণে মূলত রিজার্ভ কমেছে। যদিও আমদানি নিয়ন্ত্রণে রাখার নানা পদক্ষেপ চলমান।

এখন সবচেয়ে জরুরি ডলার সংকট দূরীকরণের উদ্যোগ নেয়া। দেশের মানুষের সংকট নিরসনে এটা খুবই জরুরি। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নেবে- এ প্রত্যাশা আমাদের।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS