ভিডিও

ফসলি জমি কমছে

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪, ০৭:১০ বিকাল
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪, ০৭:১০ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

বৈশ্বিক জলবায়ুর প্রভাবে নদী ভাঙন, লবণাক্ততা, নগরায়ন, ইটভাটা, শিল্পকারখানা, যেখানে-সেখানে বসতভিটা, সড়ক নির্মাণ, অবকাঠামো নির্মাণ ও তিন ফসলি কৃষি জমিতে শিল্প কারখানা নির্মাণের কারণে সারাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮২ হাজার হেক্টর আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়ে প্রতিদিন জমি অনাবাদি হচ্ছে।

এগারো বছরে আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে ৪ লাখ ১৬ হাজার একর। ২০০৮ সালে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল এক কোটি ৯০ লাখ ৯৭ হাজার একর জমি। ২০১৯ সালে কমে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৮৬ লাখ ৮১ হাজার একর। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কৃষি শুমারি-২০১৯ জরিপ প্রকাশ করা হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রকৃতি- এমন বিষয় এর আগেও আলোচনায় এসেছিল। আর সম্প্রতি জানা গেল, জলবায়ুর প্রভাবে অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে আবাদি জমি। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। প্রতি বছর এ দেশে ২২ থেকে ২৪ লাখ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। জনসংখ্যা ১৮ কোটি ছুঁই ছুঁই করছে।

যেখানে এখনই মাথাপিছু আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ অতি সামান্য- তারপরও যদি কৃষি জমি দ্রুত কমতে থাকে, তাহলে এই জনসংখ্যার খাদ্যের জোগান দেওয়া রীতিমতো অসম্ভব হতে পারে-এমন আশংকাও সামনে আসছে। জানা গেছে, বর্তমানে দেশে সর্বোচ্চ বছরে সাড়ে চারকোটি টন খাদ্য শস্য উৎপাদন হচ্ছে। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর চেয়ে বেশি উৎপাদন সম্ভব নয়।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা অক্সফামের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্য শস্যের দাম ২০৪০ সালে প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়বে। আর এমন হলে গরিব মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশের তিন-চতুর্থাংশ মানুষ সরাসরি কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে অপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প, শিল্পায়ন এবং নগরায়নের ফলে ক্রমশ কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। বাংলাদেশে ১৭৬০০৮০৪ কৃষক পরিবার রয়েছে। তাদের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগই প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক। এই প্রান্তিক কৃষকেরা অপেক্ষা করে ধানের ফলনের জন্য আর ধানের আয়ের ওপর নির্ভর করে তৈরি হয় তাদের সংসারের আয়-ব্যয়ের বাজেট।

কৃষি জমি অকৃষি জমিতে রূপান্তরিত হওয়ায় এই প্রান্তিক কৃষকেরা সংসারের হিসাব মেলাতে পারছে না। ক্রমশ কৃষি জমি কমে যাওয়ায় দেশের মোট শ্রমশক্তিতে প্রভাব ফেলছে। এক হিসাবে দেখা গেছে-আর্থিকভাবে সক্ষম গ্রামীণ ২৫ দশমিক ১ মিলিয়ন শ্রম শক্তির ২৪ মিলিয়ন কর্মে নিয়োজিত এবং ১ দশমিক ১ মিলিয়ন বেকার।

এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে সেই বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। মূল্যস্ফীতির কারণে অন্য খাতগুলোর মতো  কৃষি উৎপাদনেও কৃষকের খরচ বাড়ায় এখন কৃষকদের কৃষি কাজে আগ্রহ বাড়ানো সরকারের জন্য এখন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।

এক সময় দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ কৃষি কাজে জড়িত থাকলেও পর্যায়ক্রমে তা কমে ৪৮ শতাংশে নেমে এসেছে। মূলত নতুন প্রজন্ম ও কৃষক গোষ্ঠীর পরিবার নানা প্রতিকূলতায় এ খাত থেকে ফিরিয়ে নেওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

ফলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় উৎপাদন বাড়ানো জরুরি। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে যে বিষয়গুলোকে সামনে এনেছেন তা আমলে নিতে হবে, আবাদি জমি সংরক্ষণ, উৎপাদন বৃদ্ধি সহ সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি প্রত্যাশিত।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS