ভিডিও

আসুন, সুন্দরবনকে ভালোবাসি

সাজেদুর রহমান

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪, ০৮:৪২ রাত
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪, ০৮:৪২ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। পাশাপাশি এই দিনটি সুন্দরবন দিবস। দুটি দিবসের সঙ্গে মিল হলো ভালোবাসা। ভালোবাসা সবার জন্য। আর সুন্দরবনকে ভালোবাসা যায়। সুন্দরবনকে ভালোবাসা কেন দরকার? এর উত্তর হলো, এই সুন্দরবন বহুবার ভালোবেসে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করেছে। বিপরীতে আমরা কিছুই করতে পারিনি সুন্দরবনের জন্য।

উপরন্ত প্রতিনিয়ত সুন্দরবনের গাছপালা উজাড় করে, চোরাই প্রাণী শিকারিরা বেপরোয়া হয়ে বনের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বিনষ্ট করছে। ফলে মানুষের মতোই সুন্দরবনকেও ভালোবাসা প্রয়োজন। সুন্দরবন বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যের আধার। কেবল নামে সুন্দর নয়, মুগ্ধ করার মতো গঠনশৈলী আর প্রাণিসম্পদের নিদর্শন এই সুন্দরবন। অসংখ্য পরিচিত-অপরিচিত বৃক্ষরাজি, প্রাণিকুল নিয়ে যুগ যুগ ধরে দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অবদান রেখে চলেছে।

সুন্দরবনের কথা শুনলেই মনের দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে গায়ে ডোরাকাটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার, গোলপাতা, জোয়ার ভাটা আর মৌয়ালদের কথা। বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম জোয়ারধৌত গরান বনভূমি। নানা ধরনের গাছপালার চমৎকার সমারোহ ও বিন্যাস এবং বন্যপ্রাণীর সমাবেশ এ বনভূমিকে করেছে আরো আকর্ষণীয়।

ভারতীয় উপমহাদেশ দুই ভাগে ভাগ হলে সুন্দরবনের দুই-তৃতীয়াংশ বাংলাদেশের এবং বাকিটা ভারতের অংশে পড়েছে। ১৮৭৫ সালে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ বনভূমির প্রায় ৩২ হাজার ৪০০ হেক্টর এলাকাকে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সুন্দরবনের নাম ঠিক কী কারণে সুন্দরবন হলো তা একেবারে স্পষ্ট বলা যায় না, তবে প্রচলিত এবং গ্রহণযোগ্য মত যে, এই বনের সুন্দরী বৃক্ষের নাম থেকেই করা হয়েছে।

সুন্দরবন পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এ বনের ৬২ শতাংশ বাংলাদেশে এবং বাকি ৩৮ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। বর্তমানে সুন্দরবনের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও বরগুনা জেলায় এ বনের অবস্থান। বাংলাদেশের অভ্যন্তরের তুলনায় সুন্দরবনের মাটি আলাদা ধরনের। জোয়ার-ভাটার কারণে এখানকার পানিতে জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা বেশি। এখানকার মাটি পলিযুক্ত দোআঁশ।

সুন্দরবন একটি একক ইকো সিস্টেম। সুন্দরবনে রয়েছে প্রায় ৫০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫০ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩২০ প্রজাতির পাখি, ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী ও ৪০০ প্রজাতির মাছ। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার পৃথিবী বিখ্যাত। এ ছাড়া রয়েছে চিত্রা ও মায়া হরিণ। সুন্দরবনের অধিকাংশ গাছপালা ম্যানগ্রোভ ধরনের। উদ্ভিদবিজ্ঞানী ডি প্রেইন সুন্দরবনে ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ আছে বলে উল্লেখ করেন। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত সন্ধানপ্রাপ্ত ৫০টি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের মধ্যে সুন্দরবনেই আছে ৩৫টি।

এ বিশাল বন ঘিরে বাংলাদেশের অর্থনীতি গড়ে উঠেছে। এ অর্থনীতির প্রথমেই রয়েছে চিংড়ি। যা সাদা সোনা নামে পরিচিত। প্রায় ২০ প্রজাতির চিংড়ির মধ্যে বাগদা চিংড়ি ও হরিণা চিংড়ি বাণিজ্যিকভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া সুন্দরবন ঘিরে একটি বিশাল অংশ মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। অর্থনৈতিকভাবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পেশার নাম মৌয়াল; যারা এ বনের মধু সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে ফুলের মৌসুমে তিন-চার মাস বন থেকে মধু সংগ্রহ করে। পর্যটনশিল্পেও এ বন গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর প্রচুর দেশি-বিদেশি পর্যটক এ বন দেখতে যায়। সেক্ষেত্রে এটি আমাদের অর্থনীতিতে সরাসরি ভূমিকা রেখে চলেছে। 
আমাদের দেশের জন্য এ বন আশীর্বাদস্বরূপ। এ বনের দিকে সতর্কদৃষ্টি না রাখলে তা আমাদের জন্য অভিশাপের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ নানা কারণে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে চলেছে। চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্যে প্রতিনিয়তই সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একটি বন কেবল একটি বন নয়, তার সম্পর্ক থাকে সেই জাতির সঙ্গে।

সুন্দরবনের পাশেই রামপালে কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই কেন্দ্র নির্মাণ সুন্দরবনকে ক্ষতিতে ফেলবে না। অন্যদিকে পরিবেশবাদীরা এ বিষয়ে ঘোর আপত্তি তুলেছে।

এমনিতেই আমাদের দেশে প্রয়োজনীয় বনভূমি নেই। কোনো দেশের জন্য শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা আবশ্যক। আমাদের তা নেই। যেটুকু আছে তাও যদি আমরা ধ্বংস করে ফেলি, তাহলে তা হবে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার মতো অবস্থা। সুন্দরবন রক্ষায় সরকারি মহলকে আরো কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।

বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় দিনটি। আশা করি সুন্দরবনের চেয়ে ভালোবাসা দিবসের গুরুত্বই বেশি পাবে। সেই ভালোবাসা সীমাবদ্ধ না করে আমাদের যে বনটি রক্ষা করে চলেছে, মায়া-মমতা দিয়ে আগলে রেখেছে, জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে সেই সুন্দরবনের প্রতিও একটু ভালোবাসা থাকা প্রয়োজন।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS