ভিডিও

আইন-শৃঙ্খলায় নজর দিন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪, ০৬:৫৪ বিকাল
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪, ০৮:৩১ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

সমাজ যেন ক্রমেই বর্বরতার চরমে চলে যাচ্ছে। পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণের পর বিভৎস কায়দায় খুন, দখলবাজি, চাঁদাবাজি এ যেন নিত্যকার চিত্র। অপরাধ এত বেড়ে গেছে যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এসব ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

নোয়াখালীতে এক সিএনজি চালককে পিটিয়ে এবং ফেনীতে ঘরে আগুন দিয়ে দুই শিশুকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার ঘটনা দুটি ঘটেছে। নোয়াখালীর চাটখিলে রাস্তায় এলোমেলোভাবে গাড়ি রেখে যানজট সৃষ্টির প্রতিবাদ করায় সিএনজি চালিত এক অটোরিকশা চালককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এ ছাড়া ফেনীতে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ফেনী পৌরসভার বিরিঞ্চি এলাকায় ঘুমন্ত অবস্থায় দুই শিশুকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এবং এ ঘটনায় শিশু দুটির মা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য থেকে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে সারা দেশে ৩১৭ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে।

একই সময়ে নানা কারণে মারা যাওয়া ১১৮ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে পাঁচ শিশুর। অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৫ শিশুকে। গত ৯ মাসে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩২ জনকে। এ সময়ের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৬৭ জন নারী। ১০৫ জন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন ৬২ জন।

পারিবারিক বন্ধন স্নেহ-ভালোবাসা মায়া-মমতা আত্মার টান সবই যেন আজ স্বার্থ আর লোভের কাছে তুচ্ছ। সামাজিক মূল্যবোধ তথা ধৈর্য্য, উদারতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ন্যায়-পরায়ণতা, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যাবসায়, নান্দনিক সৃষ্টিশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণবোধ, পারস্পরিক মমত্ববোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি লোপ পাওয়া, বেকারত্ব, সাংসারিক চাপ ইত্যাদি নানা কারণেই সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। যা বর্তমান সমাজে প্রকট।

চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাস করছে মানুষ। অপরাধ আশংকাজনক হারেই বেড়েছে। অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সাম্প্রতিক অবনতিকে সমাজ বিজ্ঞানীরা দেখছেন এক ধরনের ধারাবাহিক অবক্ষয়ের ফল হিসেবে।

একটি সময়ের পর থেকে দেশে এক ধরনের রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দিয়েছে বলে সমাজ বিজ্ঞানীদের অভিমত। ফলে রাজনীতিতে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে বেড়েছে অশুভ প্রতিযোগিতা সম্পদ অর্জন থেকে শুরু করে সামাজিক অবস্থান তৈরি করার এই প্রতিযোগিতা থেকেও অপরাধপ্রবণতা তৈরি হতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। অনেক ক্ষেত্রে সংঘটিত অপরাধকে রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

ফলে প্রশাসনের দিক থেকেও এক ধরনের শৈথিল্য লক্ষ্য করা যায়। অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার এটাও একটা কারণ হিসেবে বিবেচিত। অপরাধ করলে রাজনৈতিকভাবে পার পাওয়া যায় বলে একটি ধারনা তৈরি হয়েছে। এই ধারনাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অপরাধ সংঘটনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

অপরাধ করেও রাজনৈতিক আশ্রয়ে ক্ষমা পেয়ে যাওয়ার উদাহরণ আছে সেই অতীত থেকে সব আমলেই। সন্ত্রাস দেখতে দেখতে বেড়ে ওঠা একটি প্রজন্ম সন্ত্রাসের দিকে ঝুঁকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রশ্ন আছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক শ্রেণির সদস্যের ডেডিকেশন, মোটিভেশন, কমিটমেন্ট ও মানসিক গঠন নিয়ে।

যে কোনো দেশে বা সমাজেই অপরাধ রয়েছে এবং থাকবেও। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু অন্যান্য দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাও লক্ষ্যণীয়। সেখানে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন যথাযথভাবে করা হয়। ফলে সমাজে দুষ্টের আধিপত্য তৈরি হতে পারে না। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি এবং অপরাধের মাত্রা ও পরিমাণ দেখে তাই শঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই এই সমাজের বসবাসযোগ্যতা বিনষ্ট হবে।

সরকার কঠোর হাতে অপরাধীদের দমন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হলেই জন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি। অপরাধীদের রাজনৈতিক প্রশ্রয় বন্ধ করতে হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS