ভিডিও

একুশ মানে মাথা নত না করা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪, ০৬:৪৪ বিকাল
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪, ০৬:৪৪ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি“। এই মাস ভাষার। প্রতি বছর এই মাস আমাদের মাঝে বিরাট তাৎপর্য নিয়ে উপস্থিত হয়ে থাকে। আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলে জানে এবং বোঝে এই মাসের গুরুত্ব। আজ থেকে ৭২ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা আজও ঠিক একইভাবে অনেক সম্মানের সাথে আমরা স্মরণ করি।

স্মরণ করি সেইসব ভাষা সৈনিকদের যাদের নিঃস্বার্থ ত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি আমার মায়ের ভাষা বাংলা ভাষা। ৭২ বছর ধরে একই ভাবে আমরা বাঙালিরা বাংলা ভাষায় কথা বলি, গান গাই, ছবি আঁকি, মনের সমস্ত কথা অকপটে ব্যক্ত করি। আজও আমাদের ধ্যানে জ্ঞানে ইশারায় এবং সর্বোপরি আমাদের রক্তে মিশে আছে বাংলা। আমরা বাঙালিরা বিশ্বাস করি আমাদের রক্তের কণিকাতেও বাংলা ভাষা প্রবাহিত হয়।

কিন্তু বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আমরা ভালোভাবে অবলোকন করছি বাংলা ভাষার প্রতি যথেষ্ট আগ্রাসন। যেখানে সকল ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার অপরিহার্য ছিল সেখানে এখনও চলছে বাংলা ভাষাকে নিয়ে রীতিমত হলিখেলা। বাংলা ভাষার ব্যবহার আমাদের সর্বোচ্চ আদালতে আজও ব্যবহার হয় না। সেখানে আজও বিচার কাজসহ অন্যান্য সকল কাজ অন্য এক ভাষায়, অন্য এক সংস্কৃতিতে পরিচালিত হয়ে আসছে।

শুধু বাংলা ভাষা নয়, পৃথিবীর সব ভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা আমাদের মৌলিক দায়িত্ব । আমরা যদি অন্য ভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করি, তাহলে অন্যরাও আমাদের বাংলা ভাষাকে সম্মান করবে না। মাতৃভাষা দিবস উদযাপন আমাদের এসব কথাই মনে করিয়ে দেয়।

জাতিসংঘের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, প্রায় প্রতি দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পৃথিবী থেকে একটি ভাষা হারিয়ে যায়। যখন একটি ভাষা হারিয়ে যায়, তখন ঐতিহ্য, স্মৃতি, অভিজ্ঞতা, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ এই সব কিছু থেকে পুরো পৃথিবী বঞ্চিত হয়। অথচ একেকটি ভাষা আমাদের সমাজের সাংস্কৃতিক ও প্রথাগতজ্ঞান বৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে।

ইউনেসকোর সাম্প্রতিক হিসাব মতে, সমস্ত পৃথিবীতে ছয় হাজারের অধিক ভাষার মধ্যে অন্তত ৪৩ শতাংশ ভাষা সংকটাপন্ন। আর তাছাড়া বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে পৃথিবীর প্রায় ১০০ ভাষা ডিজিটাল বিশ্বে ব্যবহৃত হচ্ছে। মাত্র কয়েক শত ভাষা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় । কাজেই ভাষা হারিয়ে যাওয়ার এ ধারা ভবিষ্যতে আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভাষাবিদ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ যথার্থ বলেছিলেন, ভারতবর্ষে তিনটি ভাষা রাষ্ট্রভাষা হওয়ার যোগ্যতা ও সম্ভাবনা থাকলেও সবার আগে বাংলা ভাষার অবস্থা অগ্রগণ্য। তাঁর বক্তব্য অত্যন্ত বাস্তবসম্মত ছিল তা আজ প্রমাণিত। আমরা সকলে জানি যে, পৌনে দুই শত বছরের বৃটিশ-শাসিত ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে।

বৃটিশরা আমাদের সব কেড়ে নিয়ে যেতে পারলেও আমাদের মাতৃভাষাকে নিয়ে যেতে পারেনি। আমরা আজও বীর দর্পে আমাদের মায়ের ভাষায় কথা বলি। আজ শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

আমাদের জেনে রাখা ভালো যে, ভাষা কেবলমাত্র একটি ভাষা নয়, এটি একটি অঞ্চলের মানুষের মাঝে ঐক্য সৃষ্টিতে সাহায্য করে। প্রত্যেকটি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠায় সর্বপ্রথম শর্ত হলো ভাষাগত ঐক্য । বাংলাভাষা আমাদের মাতৃভাষা, আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা । বাংলাদেশের জাতি গঠনের অন্যতম সংগঠক হিসেবে কাজ করেছে ভাষা, আমাদের বাংলা ভাষা।

জাতির পরিচয় ও সংজ্ঞা নিয়ে মতপার্থক্য ও মতের ভিন্নতা গড়ে উঠলেও শেষ পর্যন্ত আমাদের জাতিসত্তা বিনির্মাণে ভাষাই প্রধান ভূমিকা পালন করেছে । আর এ ভাষা বাঙালিদের ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হিন্দু-মুসলিম খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মের লোকদের যুদ্ধ করতে বাধ্য করেছিল।

যার ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছি স্বাধীন দেশ, একটি স্বতন্ত্র পতাকা। স্বাধীনতা ও স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বাংলা ভাষা মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল। আজ গর্বের সাথে বলতে পারি আমরা বাঙালি, আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের অহংকার। একুশ মানে একখন্ড মুক্ত আকাশ। একুশ মানে মাথা নত না করা।


লেখক : শিক্ষক-কবি
বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজ, বগুড়া



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS