ভিডিও

শিশুরা যেভাবে জাতীয় শিশু দিবস পেয়েছে

এড.মোঃ মনতেজার রহমান মন্টু

প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৪, ০৪:৩১ দুপুর
আপডেট: মার্চ ১৭, ২০২৪, ০৪:৩১ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে। ১৯৯৬ সালের ২৯ আগষ্ট ছোটদের কাগজ পত্রিকাটির প্রথম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন তখনকার সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানটি হচ্ছিল ঢাকা যাদুঘর মিলনায়তনে। সেই অনুষ্ঠানে ছোট্ট বন্ধু সাবরিনা নদী তার বক্তৃতায় বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করেছিল। নদী বলেছিল “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি অনেক ব্যস্ত। তবুও বছরে একটি দিন চাই-যেদিন আপনি সারাদিন ছোটদের সঙ্গে থাকবেন। শুধু ছোটদের অনুষ্ঠানে যাবেন”।

শুধু ওদের কথা চিন্তা করবেন। বিশ্ব শিশু দিবসের মতো ওই দিনটা হবে বাংলাদেশ শিশু দিবস। আশা করি আমার মতো একজন ছোট্ট বন্ধুর দাবিগুলো আপনি মেনে নেবেন। কারণ, ছোটদের কাগজ লিখেছে-আপনি ছোটদের বন্ধু। বন্ধুর কথা বন্ধুকে রাখতেই হয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন-আর আমি চেষ্টা করবো অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে যেন একটি দিন সুন্দরভাবে কাটাতে পারি। শুধু ছোটদের জন্য, সেই দিনটি থাকবে কেবলমাত্র ছোটদের জন্য। ছোট্ট ছোট্ট সুন্দর সোনামণিদের জন্য। আমি তোমাদেরই.....।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহামানবের কিছু গুণাবলি লাভ করেছিলেন। দেশপ্রেম, মানবপ্রেমের যে সমস্ত উদহারণ তিনি রেখে গেছেন আমাদের সমাজে তা অতি বিরল। সমাজের অবহেলিত, নিপীড়িত শিশুদের প্রতি তাঁর মমত্ব ছিল অসাধারণ। তার একটি উদাহরণ হলো, ১৯৭৩ সালে নির্বাচনী প্রচারণায় বঙ্গবন্ধু পাবনার এক জনসভায় যোগদান করতে এসেছিলেন।

জনসভা শুরু হওয়ার আগে স্থানীয় নেতাদের সাথে মতবিনিময় করতে গিয়ে এক পর্যায়ে দেখা গেল শেখ সাহেব বেশ গম্ভীর হয়ে পড়লেন। হঠাৎ তিনি গর্জে উঠলেন। সামিয়ানার কাছাকাছি বেশ কিছু গ্রাম্য ছেলে পেলে বঙ্গবন্ধুকে দেখার জন্য এলে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে থাকা সেবকেরা ওই গ্রাম্য ছেলেদের ধাক্কাতে ধাক্কাতে সরিয়ে নিয়ে যেতেই তাদের একজন মাটিতে মুখ থুবরে পড়ে নাকে মুখে রক্ত দেখেই বঙ্গবন্ধু গর্জে ওঠে মঞ্চ থেকে নেমে দৌঁড়ে গিয়ে ওই ছেলেটিকে কোলে তুলে এনে তার চেয়ারে বসে দিয়ে হাত বুলিয়ে আদর করলেন এবং তার নাক মুখ রুমাল দিয়ে মুছে দিলেন।

অন্যান্য ছেলেদের ডেকে এনে সামনে সারিতে বসে দিলেন। ছেলে-পেলেরা বঙ্গবন্ধুকে দেখে খুশি হয়ে শপথ নিলেন তারা যতদিন বেঁচে থাকবে ততোদিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে মানুষ হবে। ঐ মিটিং এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গ্রন্থের লেখক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মাযাহারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁর গ্রন্থে এই বিবরণ তুলে ধরেছেন।

জাতির পিতার শিশুদের প্রতি ভালবাসার শিক্ষা নিয়ে এবং শিশুদের দাবির মুখে সরকারি ঘোষণায় আমরা পেলাম একটি দিনকে ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে। ভারতে জওহরলাল নেহরুর জন্ম দিনটিই সেই দেশের শিশু দিবস। 

বিশ্বে অনেক দেশের জাতির পিতাদের জন্ম দিবসে বহুমাত্রিক দিবস পালিত হয় এবং অনুষ্ঠানাদি হয়। আমেরিকার জাতির পিতা জর্জ ওয়াশিংটনের জন্মদিন ২২ ফেব্রুয়ারি। ঐদিন আমেরিকার টেক্সাস ও ভার্জিনিয়ার আকাশে মধ্য রাতে ঝাঁকে ঝাঁকে বিমান থেকে বোমার শব্দ এবং ঝলমলে রঙিন আলো ছড়ানো হয়। মাস ব্যাপী আনন্দ মেলা হয়। প্রায় ৪ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী। তাঁর জন্মদিন ২ অক্টোবর। ভারতের জনগণ এ দিবসটিকে ‘গান্ধী জয়ন্তী দিবস’ পালন করে থাকে। এই দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস’ হিসাবে জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে বহু পূর্বে।

তুরস্কের জাতির পিতা কামাল আতাতুর্ক। তাঁর জন্মদিন ১৯ মে তারিখে তুরস্কে সরকারি ছুটির দিন। এই দিবসটি জাতীয় যুব ও ক্রিড়া দিবস ঘোষিত হওয়ায় শিশু-কিশোর, ছাত্র-যুবক খেলাধূলা ও আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে। 
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু মুজিব পাকিস্তান কারাগার থেকে স্বাধীন দেশে এসেছিলেন। মাত্র এক সপ্তাহ পরেই ১৮ জানুয়ারি আমেরিকা ভিত্তিক W-NEW টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক ডেভিড ফ্রষ্ট বাংলাদেশে এসে বঙ্গবন্ধুকে তাঁর জন্মদিন সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন-আমার আবার জন্মদিন।

সারা জীবনটাইতো কেটে গেছে কারাগারে জন্মদিন পালন করলাম কবে। দেখছেন তো চতুর্দিকে আমার মানুষ কী অসহায়, তাদের কতো যন্ত্রণা। বঙ্গবন্ধু তাঁর জন্মদিন ঘটা করে পালনা না করলেও আজকে উৎসবমূখর আনন্দঘন পরিবেশে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সর্বস্তরের বাঙালি তাঁর জন্মদিন পালন করছে।

আজকের দিনে শিশু কিশোররা জাতির পিতার সংগ্রামী চেতনা ও সততা থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ পরিচালনার কাজে নিয়োজিত থাকবে-এটাই জাতি আশা করে।


লেখক: আইনজীবী ও কলামিষ্ট

01711-425981



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS