ভিডিও

সময় এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার

মোহাম্মাদ নজাবত আলী

প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৪, ০৫:৩৫ বিকাল
আপডেট: মার্চ ২৪, ২০২৪, ০৫:৩৫ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

স্বাধীনতার ’৫২ বছরে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের সারিতে পা দিয়েছে। এটা বাঙালি জাতির গর্ব ও আনন্দের বিষয়। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতি এক কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছিল। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

আমাদের স্বাধীনতার সার্থক রূপকার ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসাবে ৫৩বছরে পদার্পণ করছে। এ দীর্ঘ সময় একটি জাতির ইতিহাসে একেবারে কম সময় নয়। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সংঘাত, গণতান্ত্রিক দৈন দশার মধ্যে দিয়েও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থেমে নেই।

আমাদের লক্ষ্য ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত। শোষণমুক্ত সমাজ ন্যায় বিচার, মানবিক মূল্যবোধ ও সমতাভিত্তিক একটি সমাজ। সর্বোপরী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। উল্লেখযোগ্য এ আদর্শগুলোকে সামনে রেখে একাত্তরে এ দেশের মুক্তিপাগল জনতা এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে জয়ী হয়।

বঙ্গবন্ধুর অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাত্রা মানেই মুক্তির পথ- কল্যাণের পথ। এ মুক্তি কল্যাণ অবশ্যই জনগণের অথনৈতিক মুক্তি। এ কারণেই বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ শেষ করেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

মূলত বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন এবং তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে অর্থনৈতিকভাবে দেশকে সমৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে এবং বিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। এই ৫৩ বছরে আমাদের অর্জন একেবারে কম নয়। কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা, তথ্য প্রযুক্তি নারী শিক্ষার প্রসার ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে উজ্জল দৃষ্টান্ত। নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের অংশীদার।

প্রকৃত অর্থেই বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার দেশ। কিন্তু তবুও কিছু সমস্যা রয়েছে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি আমাদের প্রধান শত্রু। সন্ত্রাসী দুর্বৃত্ত চক্র লুটেরা আমাদের অর্থনীতির গতিকে মন্থর করছে। দুনীতিবাজ, লুটেরাদের শৃঙ্খল ভাঙতে হবে। প্রতিষ্ঠা করতে হবে সমতাভিত্তিক সমাজ। প্রান্তিকচাষী, হতদরিদ্র মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে নির্দিষ্ট মান অতিক্রম করায় বিজয়ের ৫০বছরের শুভক্ষণে বিগত ২০২১ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণের সুপারিশ পায়।

২০২৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়শীল দেশের আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে এ অর্জন অবশ্যই আমাদের গর্বিত করলেও এখনো দরিদ্র মানুষের সংখ্যা রয়েছে যথেষ্ট। এই সংখ্যাকে শূন্যের কোঠায় নামাতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হবে। বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।

বর্তমান সরকার সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে। একাত্তরে লাখো শহীদের স্বপ্ন, একটি উন্নত, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সেই স্বপ্ন পূরণে আরো এগোতে হবে। রাজনীতিকে অবশ্যই জনকল্যাণমুখী হতে হবে। তাহলে এদেশের কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের ভাগ্যের পারিবর্তন ঘটবে। স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারবে ১৭ কোটি মানুষ। তাই আত্ম বিশে¬ষনের মধ্যে দিয়ে আমাদের আরও এগোতে হবে।

একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল গণতন্ত্র। সেই গণতন্ত্রকে সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। গণতন্ত্রের চর্চা, সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তি, সে ভিত্তি হিসাবে আজও গণতন্ত্রকে দাঁড় করানো যায়নি। প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

স্বাধীনতার ৫২বছরে আমরা একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা নির্মাণ করতে পারিনি। মুক্ত প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে না উঠার কারণে সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি আজ দানা বেঁধেছে। ফলে দুর্নীতি সর্বব্যাপী রূপ নিয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে ঠিকই কিন্তু নারী নির্যাতন বন্ধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি।

শিক্ষায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আসলে আমাদের রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে রাষ্ট্রের সর্বত্র  রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংঘাত, হানাহানি, অনৈক্যের কারণে রাজনীতি হয়েছে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিনির্ভর যা স্বাধীন দেশ হিসাবে তা কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত নয়।

স্বাধীনতার ’৫২বছরে এদেশের রাজনীতিবিদরা যতটুকু দেশের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করেছে তার চেয়ে বহুগুণে বেশি নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য প্রয়োজন একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ঐক্য।

এটা গড়ে না উঠার কারণে দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো শুধু নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে চলেছে। আমরা যতক্ষণ নিজেদের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারবো ততক্ষণ কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ও স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে পারবো না। কেননা আমাদের পিছনে ফিরে তাকানোর কোনো সময় নেই। সময় এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার।

এক সময় বাংলাদেশকে যারা তলাবিহীন ঝুড়ি বলতো কালের পরিক্রমায় তারাই এখন বাংলাদেশকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছে। প্রকৃতপক্ষে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আয় বেড়েছে, জীবন যাত্রার মান ক্রমশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে গেছেও কিন্তু সব শ্রেণীর মানুষের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হয়নি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিল্প, কৃষিসহ অন্যান্য দিক থেকে দেশ বিগত কয়েক দশকের চেয়ে অনেকটা এগিয়েছে।

কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে। খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসর্ম্পূতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রেও বিপ্লব ঘটেছে। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা নারী পুরুষের সমতা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে।

নারী শিক্ষার প্রসার নারীর ক্ষমতায়ন এ বিষয়গুলো এখন সারা পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমাদের সামনের দিকে এগোতে হলে সততা, দক্ষতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দুর্নীদি দমন, সুশাসন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ধনী দরিদ্রের বৈষম্য কমানোর কোনো বিকল্প নেই।

বাস্তবমূখী ও সঠিক পরিকল্পনার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দেশে এখনো একটি অংশ দারিদ্্র সীমার নিচে বাস করছে, দুর্নীতির ভয়াল থাবা, রাজনৈতিক বিরোধ, সামাজিক বৈষম্য, চরম বেকারত্ব, এসব নেতিবাচক দিকগুলো সমাধান করতে পারলে ভবিষ্যতে আমাদের কাক্সিক্ষত উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া সহজ হবে। তবুও দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশকে বলা হয় তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্রতম দেশ। আসলে কি বাংলাদেশ কোনো কালে দরিদ্র ছিল ? এক সময় বাংলাদেশে গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ ছিল। বলা হতো মাছে ভাতে বাঙালি। আবার বাংলাদেশকে বলা হয় অপার সম্ভাবনার দেশ।

কৃষির অপার সম্ভাবনা, শিল্প, প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপূর, ঐহিত্য সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বহুবার উচ্চারিত হয়েছে সম্ভাবনার দেশ হিসাবে। আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, মানব সম্পদ উন্নয়ন, দুনীতি রোধ, ঘটিয়ে এ দেশ অনেক আগেই উন্নয়শীল দেশের সারিতে পৌঁছে যেত।

দুর্নীতি, ন্যায় বিচার, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে দেশের প্রত্যাশিত উন্নয়ন হবে না। আর এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এদেশের রাজনীতিবিদরা। কৃষক শ্রমিক তো দুর্নীতি করে না বরং কৃষি উৎপাদনে তারা দেশকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পর্ণূতা অর্জন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবদান রাখছে। অথচ তারা অধিকাংশ সময় কৃষি পন্যের উপযুক্ত মূল্য পান না।

অন্যদিকে শ্রমিকরা কলে কারখানায় উৎপাদন কাজে নিয়োজিত। অথচ তারাও যথোপযুক্ত বেতন ভাতাদি পান না। সুতরাং একাটি সমাজ, রাষ্ট্র উন্নতির দিকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ঘুষ, দুর্নীতি সহ যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা কাটিয়ে সক্ষমতা অর্জন করতে পারলে স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীর আগেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের সিঁড়িতে পা রাখতো এতে কোনো সন্দেহ নেই।

বর্তমানে দেশে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার রয়েছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ঘুষ না দিলে চাকুরী হয় না। বেকারত্ব একটি অভিশাপ, এ অভিশপ্ত জীবন থেকে তারা মুক্তি পাচ্ছে না। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় তাদের জীবনে চরম হতাশা নেমে আসে।

তাই আমরা বলতে চাই চরম সামাজিক বৈষম্য, বেকারত্ব, নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতি অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ, (২০২১) দেশের সর্বশ্রেণীর মানুষের আয় বৃদ্ধি, জীবন যাত্রার সমতা ভিত্তিক  উন্নয়ন ঘটানোর কোনো বিকল্প ন্ইে। তবে আগেই উল্লেখ করা হয়েছে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।

সততা, দক্ষতা, দুর্নীতি প্রতিরোধ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুষ্ঠু পরিকল্পনা, ন্যায় বিচার, সুশাসন, সর্বব্যাপী দুর্নীতিরোধ, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে।  তাই আমাদের অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যার যার অবস্থান থেকে দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নে কাজ করতে হবে।


লেখক : সাবেক শিক্ষক ও কলামিস্ট
সহকারি শিক্ষক (অবঃ)

tnalichs@gmail.com

01719-536231



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS