ভিডিও

গণহত্যা দিবস

প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৪, ০৫:২৪ বিকাল
আপডেট: মার্চ ২৬, ২০২৪, ১২:১৬ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

গণহত্যা দিবস আজ। ১৯৭১ সালে মানবসভ্যতার ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরতম গণহত্যার সূচনা হয়েছিল ২৫ মার্চের এদিনে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের এমন রাতে কাপুরুষোচিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালিদের ওপর। শুরু করে অপারেশন সার্চলাইট নামের হত্যাযজ্ঞ।

১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পাকিস্তানের দুই যুগের ইতিহাসে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী বাঙালিদের প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। সেই সম্ভাবনা নস্যাৎ করতে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে সামরিক জান্তা।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ) স্বাধীনতা আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার জন্য নিরীহ জনগণের ওপর নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। রাজারবাগ, পিলখানা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অগণিত লাশ পড়ে থাকে।

বাঙালির জীবনে এমন নৃশংস কালরাত আর আসেনি। ঘুমিয়ে থাকা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ট্যাংক, কামান, মেশিনগান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। নিরীহ, নিরপরাধ মানুষ হত্যায় মেতে উঠেছিল।

বাঙালির ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদার প্রতি আঘাত করা হয়েছিল ২৫ মার্চ রাতে। বাঙালি জাতি নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য দীর্ঘ দুইযুগ লড়াই করেছে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায়।

মূলত সেদিন থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। আলোচনার নামে প্রহসন করতে ঢাকায় এসেছিলেন ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো। এ দেশের মানুষকে নির্বিচারে হত্যার নির্দেশ দিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেন তারা।

রাতে শুরু হয় গণহত্যা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চালানো হয় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। একটি জাতিকে চিরতরে বিধ্বস্ত করে দেওয়ার চেষ্টা ছিল তাদের। বাঙালি জাতির প্রতি পাকিস্তানিদের ঘৃণা ও প্রতিহিংসার বহি:প্রকাশ ঘটেছে ওই হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে।

দু:খজনক ঘটনা হচ্ছে, এদেশেরই কিছু মানুষ সেদিন পাকিস্তানিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। গড়ে তুলেছিল সশস্ত্র বিভিন্ন বাহিনী। এরা পাক হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে কাজ করেছে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সারা দেশে যে হত্যাযজ্ঞ শুরু হয় তা অব্যাহত থাকে। ‘৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগিরা বাংলাদেশে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ যেসব মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল তা সুস্পষ্টভাবে যুদ্ধাপরাধ।

তাই ২০১৭ সালে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞে নিহতদের স্মরণে গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব গৃহিত হয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের আহবান জানানো হয়।

৩০ লাখ শহীদদের আত্মত্যাগ আর আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আসে কাক্সিক্ষত মুক্তি। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে।

তবে ওই গভীর ক্ষত বাঙালি কোনো দিনও ভুলতে পারবে না। একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে বাঙালি জাতি দীর্ঘ সংগ্রামের ভেতর দিয়ে এগিয়েছিল সেই জাতিকে তো এক রাতে নিধন করা সম্ভব নয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ভেবেছিল, এক রাতেই বাঙালিরা স্বাধীনতার স্পৃহা মিটিয়ে দেবে।

আত্মসমর্পণ করবে বাঙালি। কিন্তু বাঙালি তখন অকুতোভয়। ধ্বংসস্তুপ আর মৃত্যুপুরী থেকে নতুন জীবনের জয়গান গেয়ে চলে যায় যুদ্ধের ময়দানে, শত্রুর মোকাবিলায়।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS