ভিডিও

পানিতে আর্সেনিক সমস্যা

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৪, ১১:২৩ রাত
আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২৪, ১১:২৩ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

বাংলাদেশ পানির দেশ হিসেবে পরিচিত  হলেও গত দুই দশক ধরে এখানে পানি সংকটই প্রকট হয়ে উঠেছে। একদিকে যেমন নদ-নদীগুলো প্রবাহ স্বল্পতায় ভুগছে, অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমে নিচে নেমে যাচ্ছে। বিসবুজীকরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নদীসহ ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন জলাশয়ে এখনও সারাবছর যে পানি থাকে, তার বড় অংশ সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হয় না দূষণ ও অব্যবস্থাপনার কারণে। এ ছাড়াও রয়েছে পানিতে আর্সেনিক সংকট।

বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক পানীয় জলেই বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে। বিজ্ঞানীদের একটি দল বলছেন, প্রায় ৮ কোটি বাংলাদেশি ক্ষতিকর মাত্রায় আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানভি্িত্তক পিএলওএস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে আসে।

আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও জাতিসংঘ শিশু তহবিলের ২০১৯ সালের গুচ্ছ জরিপের তথ্য বলছে, দেশের ১১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে। সে হিসাবে প্রায় ২ কোটি মানুষ এই পানি পান করছে। আর্সেনিকের বিষক্রিয়ায় মানুষের ত্বক, মুত্রাশয় এবং ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। অর্থাৎ আর্সেনিক দূষণ ঠিকই গুপ্ত ঘাতকের মতো মানুষের ক্ষতি করে যাচ্ছে।

গবেষকরা আর্সেনিক নিসরণের পেছনের গতিশীলতা বোঝার জন্য অক্সিজেনের ঘনত্ব, পিএইচ এবং তাপমাত্রা পরীক্ষার করার জন্য সমগ্র বাংলাদেশের কূপ থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তারা দেখেছেন, বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানির প্রায় ৪৯ শতাংশে আর্সেনিকের ঘনত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত নিরাপদ সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

নিরাপদ মান ধরা হয় প্রতি লিটার পানীয় জলের জন্য ১০ মাইক্রোগ্রাম কিন্তু কিছু নমুনায় আর্সেনিকের ঘনত্ব পাওয়া গেছে ৪৫০ মাইক্রোগ্রাম। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকার ৪৫ গুণ। বাংলাদেশে নিয়মিত প্রবল বন্যা হয় এবং এটি জলবায়ু সংকটের প্রভাবের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। ২০১৮ সালে ঘুর্ণিঝড় আম্পানের পরে দেশের এক -তৃতীয়াংশ পানিতে তলিয়ে যায়।

বর্ষার  তীব্র বৃষ্টিপাতের কারণে বছরে গড়ে ২১ শতাংশ এলাকায় বন্যা হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে জলবায়ু সংকটের কারণে বাংলাদেশে এ শতকের মাঝামাঝি সময়ে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা গড়ে প্রায় দেড় ফুট বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকার উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৫ ফুটেরও কম। প্রতি বছর বন্যা নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী সাড়ে ১৬ কোটি বাংলাদেশির জন্য নিরাপদ পানীয় জলকে দুর্লভ করে তুলবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

গবেষকরা ভূগর্ভস্থ পানির দূষণ রোধে পরিশোধন প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোসহ সম্ভাব্য সমাধানগুলো দ্রুত উন্নয়নের আহবান জানিয়েছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠে উচ্চতা বৃদ্ধি, অনাকাক্সিক্ষত বন্যা এবং জলবায়ু উত্তপ্ত হওয়ার কারণে সৃষ্ট চরম আবহাওয়া দেশের পানীয় জলে আর্সেনিকের বিপজ্জনক মাত্রার নির্গমনকে ত্বরান্বিত করবে। বিজ্ঞানীরা জানান, আর্সেনিক বিষক্রিয়া বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি অন্যতম প্রধান হুমকি।

আর্সেনিক একেবারে উধাও হয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই নিয়মিত আর্সেনিক পরীক্ষা করা দরকার। সংশ্লিষ্টরা জানান, নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার পর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ‘বাংলাদেশ আর্সেনিক মিটিগেশন ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্টের (বিএএমডব্লিউএসপি) আওতায় ২৭১ উপজেলার ৫৭ হাজার ৪৮২টি গ্রামে আর্সেনিক পরীক্ষা করে।

৪৯ লাখ ৫০ হাজার নলকূপের পানি পরীক্ষা করে এর মধ্যে ২৯ শতাংশে আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। আর্সেনিকের এত বেশি উপস্থিতি পাওয়ার পরও আর কখনও বড় পরিসরে পরীক্ষা করা হয়নি। পত্র পত্রিকার খবরে জানা যায়, ২০১৮ সালে প্রকল্প শেষ হওয়ার পর নতুন করে কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। তবে এখন আর্সেনিক নিয়ে নতুন করে কাজ করার সময় হয়েছে।

তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র বলছে, তারা সময়ে সময়ে নতুন নলকূপ হলে তা পরীক্ষা করে দেখেন। ২০২২ সালে তাদের একটি ক্লিনিং শেষ হয়েছে। নিরাপদ পানির জন্য আমাদের প্রচেষ্টা সব সময় অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের পান করার জন্য আর্সেনিকমুক্ত পানি চাই।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS