ভিডিও

কিশোর গ্যাং ও আজকের বাংলাদেশ

এড. মোঃ মোজাম্মেল হক

প্রকাশিত: এপ্রিল ০১, ২০২৪, ০৪:৩৬ দুপুর
আপডেট: এপ্রিল ০২, ২০২৪, ১১:০৯ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

হাইস্কুলে পড়ার সময় ক্লাস সেভেনে ইংরেজী স্যার আমাদের ছোট ছোট ইংরেজী ট্রানসলেশন ধরতেন, ছাত্ররা না পারলে স্যার আবার বলে দিতেন। মনে আছে সেই সময় স্যার আমাদের শিখিয়েছিলেন, একদল পরী, একদল ডাকাতের ইংরেজী কি। একদল পরীর ইংরেজী শিখিয়েছিলেন এ গ্রুপ অফ ফেরিজ, একদল ডাকাতের ইংরেজী শিখিয়েছিলেন এ গ্যাং অফ ডকুয়েট।

তখন থেকে গ্যাং শব্দটার সঙ্গে পরিচয় ছিলো। কাঁচা বয়সে তখন ঐ গ্যাং শব্দটার যে অর্থ বুঝেছিলাম তাহলো গ্যাং মানে ধর্ম-মর্মহীন নিষ্ঠুর, নির্মম, বিভৎস, মায়া-দয়াহীন একদল লোক, যারা লোকচক্ষুর অন্তরালের বাহিনী এবং আইনের চোখে অপরাধী একটি গ্রুপ, যারা যে কোন সময় যে কোন লোককে খুন-জখম করতে পারে, মানুষের ধন সম্পদ লুটতারাজ করতে পারে, বাধা দিলে হেন কাম নাই যে তারা করতে পারে না।

কর্মজীবনের প্রথম পর্যায়ে এই শব্দটা শুনলেও পরে তার প্রয়োগ ছিলো না, অনেকদিন যাবৎ আর ডাকাতির মামলা মোকর্দ্দমা হয় না বললেই চলে অর্থাৎ ডাকাতির মতো অপরাধ প্রায় উঠেই গেছে বলা যায়, কালে ভদ্রে দুই একটা হয়ে থাকে। ইদানিং আবার এই গ্যাং শব্দটা সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়েছে বিশেষ করে কিশোর গ্যাং শব্দটি, কারণ এখন কিশোর অপরাধ ও কিশোর অপরাধী এতো বেড়ে গেছে যে কল্পনাও করা যায় না।

আগে এই কিশোর অপরাধী ছিলো না বললেই চলে, কদাচিৎ দুই একটি কিশোর অপরাধী চোখে পড়তো তাও কোন না কোন বিশেষ পরিস্থিতির কারণে কোন কোন কিশোর অপরাধী এইরুপ অপরাধ করতো, আর এখন কিশোর অপরাধ হরহামেশায় হচ্ছে, ফলে কিশোর অপরাধীর সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে। কিছুদিন পূর্বে ঢাকা শহরে কয়েক ঘন্টাব্যাপী দিনে দুপুরে ছিনতাই হয়, যে ছিনতাই এ নেতৃত্ব দেয় টিনএজের কিছু অপরাধী।

তারা নীরিহ পথচারীদের মারপিট করে তাদের মোবাইল, টাকা-পয়সা, ঘড়ি চশমা ছিনতাই করে নেয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বহু কিশোর গ্যাং এর সদস্যদের ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে এবং প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার করছেই। এই কিশোর অপরাধীদের বয়স সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ১৭ এর মধ্যে। শহরের এই সকল অপরাধীরা প্রায় একই ধরণের চুল কাটে, একই ধরণের পোশাক পরে, আবার অনেকে শরীরে ট্যাটুও আঁকে। এমন কোন অপরাধ নাই যা তারা করে না।

চুরি-ছিনতাই, বিভিন্ন মাদক ক্রয় বিক্রয়, মাদক সেবন, স্কুল কলেজের মেয়েদের ইভটিজিং, জমি দখল, চাঁদাবাজি, মস্তানি সহ সব ধরনের অপরাধ তারা করে থাকে। শহরের কিশোর অপরাধীদের আবার বড় ভাই আছে, এই সকল বড় ভাইয়েরা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ধরা পড়লে বড় ভাইয়েরা তাদেরকে আবার ছাড়িয়ে আনে।

জেল থেকে বের হয়ে দুই একদিন একটু-আধটু ভালো হওয়ার ভান করে, কয়েকদিন পর আবার একই অবস্থা, যাহাই বায়ান্ন তাহাই তিপান্ন বরং জেলখানা থেকে বের হয়ে জেলের ভয়টা আরো ভেঙ্গে যায়। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই মাদকের যে ছোবল তার মূলে হচ্ছে এই কিশোর অপরাধীরা, তারা নিজেরা মাদক সেবন করে এবং মাদক বিক্রি করে সমাজটাকে একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে।

দেশের অধিকাংশ পাড়া মহল্লায় এই কিশোর অপরাধীরা মদ-গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা সহ অন্যান্য মাদক দ্রব্য শুধু সেবনই করে না বরং তা বিক্রি করে সমাজকে কলুষিত করছে। আগে পাড়া মহল্লায় কোন টিনএজের বালকদের বেয়াদবি দেখলে পাড়ার কোন মুরুব্বি ধমক দিলে তারা সঙ্গে সঙ্গে সরে পড়তো আর এখন কোন অপ্রাপ্ত বালক কোন অপরাধ করলে এবং কোন মুরুব্বি শাসন করলে অপরাধী সঙ্গে সঙ্গে রিএ্যাক্ট করে, ফলে মানসম্মানের ভয়ে এখন আর কেউ কথা বলতে চায় না।

একটা গল্প মনে পড়ে গেল, বাবা কাজ করছে ছেলে সিগারেট ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে খাচ্ছে এবং বাবাকে বলছে, বাবা ৫০ টা টাকা দেন সিনেমা দেখতে যাবো, বাবা বলছে সিনেমা দেখার কোন টাকা নাই সঙ্গে সঙ্গে ছেলে বলছে সিনেমা দেখার টাকা না পেলে সিগারেট কেন লুকিয়ে লুকিয়ে খাবো, এইতো হলো বাস্তব অবস্থা, সমাজটা এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে গেছে।

একজন সমাজ বিজ্ঞানীর মতে সমাজের সমস্ত দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো যখন সরকারের লেজুড়বৃত্তি করে এবং তাদের কাজের জবাবদিহীতা করতে হয় না তখন সমাজের সর্বত্র ক্ষতের সৃষ্টি হয় তখন আস্তে আস্তে সামাজিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়ে। কি দেশ ও সমাজ ছিলো আর এখন কি হয়ে গেল। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের একটা গানের কথা মনে পড়ে গেল, গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু-মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম, আগে সুন্দর দিন কাটাইতাম --------।


লেখক- সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বগুড়া জেলা এ্যাডভোকেটস্ বার সমিতি

01711-197719



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS