ভিডিও

দেশে নারী নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে

রাকিবুল ইসলাম

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৪, ০৭:৪২ বিকাল
আপডেট: এপ্রিল ২৮, ২০২৪, ১২:১৬ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

নারী যেন মানুষ নয়, নারীর সঙ্গে যা খুশি তাই করা যায়। এ কোন সমাজে বাস করছি আমরা, যেখানে কি-না মা-বোন-প্রিয়তমার সম্মানের দিকে কারো এতটুকু ভ্রুক্ষেপ নেই! নারী মানে দুর্বল, নারী মানে এতটাই সহজলভ্য যে, এখন জন্মদিনের উপহার হিসেবেও তাকে গছিয়ে দেওয়া যায়।

আমি ঠিক বুঝতে পারি না, কতটা নিচে নামলে তবে পশুর সঙ্গে আমাদের চরিত্রগত আর কোনো ফারাক থাকবে না। প্রাণী হিসেবে আমরা এখন উদ্বাহু হয়ে ভোগের নৃত্য করছি। সেখানে পছন্দের সামগ্রী হিসেবে বেশ বিকোচ্ছে আমাদের নারীরা।

সাম্প্রতিক সময়ে দৈনিক পত্রিকার পাতায় আর সোশ্যাল মিডিয়ায় যে বিষয়টি বার বার চোখে পড়ছে সেটি হলো ‘ধর্ষণ’। তিন অক্ষরের ছোট এই শব্দের ছায়া এতই কুৎসিত যা ব্যাখ্যা করতে গেলেও ভ্রুকুঞ্চন অনিবার্য। ভোগবাদী সমাজে নারীমুক্তির স্লোগানের আড়ালে নারীর অবস্থান আসলে কোথায়? গত কয়েক মাসে ধর্ষণের সংবাদ গুলো বিশ্লেষণে যে চিত্র উঠে এসেছে তা সত্যি ভয়াবহ। এক একটি ধর্ষণ ঘটনা পুরো জাতিকেই লজ্জার কাঁটাতারে বিদ্ধ করছে।

প্রতিদিনই আমাদের দেশের কোথাও না কোথাও মেয়ে শিশু, কিশোরী ও যুবতী নারীদের ধর্ষণের পর হত্যা বা হত্যার চেষ্টা চলছে। যে সব ধর্ষিতা কিশোরী বা যুবতী নারী প্রাণে বেঁচে যাচ্ছে তাদের জীবনে নেমে আসছে অমানিশা। পরিবার ও সমাজ তাদেরকে ভালোভাবে গ্রহণ করছে না। অথচ তাদের কোনোই অপরাধ নেই।

অনেক ক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার নারীরা আত্মগ্লানি সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। অনেক মেয়ে ধর্ষিত হওয়ার পর লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টা পিতামাতাকেও জানাতে ভয় পায়। ফলে ধর্ষকরা পার পেয়ে গিয়ে সমাজে বুক ফুলিয়ে বেড়ায় এবং তারা বারংবার মেয়েদের প্রতি অশালীন আচরণ করতে প্রলুব্ধ হয়।

আমরা বর্তমানে দাবি করছি- সমাজ এগিয়েছে, আধুনিকতা এসেছে। সমাজের কতিপয় মানুষের কর্মকান্ডে সমাজ ক্রমেই কলুষিত হয়ে উঠছে। এমনকি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নারী ও শিশুদের ওপর ধর্ষণ ও সহিংসতার মাত্রা লাগামহীনভাবে বেড়ে যাচ্ছে। বিদ্যমান সমাজব্যবস্থায় সহিংসতার শিকার অনেক নারী ও শিশু চাইলেও আইনের আশ্রয় নিতে পারে না। সহিংসতার শিকার হয়েও তারা তা সহ্য করতে বাধ্য হচ্ছে।

প্রতিনিয়ত ঘরে-বাইরে নানাভাবে নির্যাতিত-নিগৃহীত হচ্ছে নারী। পারিবারিক বিরোধ, প্রতিহিংসা, লালসা ও স্বার্থের বলি হচ্ছে শিশুরাও। বর্তমানে পরিবারের সদস্য, বন্ধু, প্রেমিক, শিক্ষক, কর্মস্থলের সহকর্মী ও গৃহকর্তা-কর্ত্রী, কারো কাছেই যেন নিরাপদ নয় নারী-শিশু।

নারী ও শিশু নির্যাতনের কঠিন আইন বাংলাদেশে বিদ্যমান। কিন্তু সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ নেই। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, আইনের শাসনের অকার্যকারিতা, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ প্রভৃতি কারণে আজও নারী ও শিশু ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের দেশে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হলেই সমাজের আঙ্গুলি থাকে নারীর দিকেই।

ফলে ধর্ষিতার ঠাঁই মেলে না সমাজ বা পরিবারে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কোনো ভাবেই মেনে নেয় না তাকে। অথচ মেয়েটির কোনো অপরাধই নেই। ফলে ধর্ষিতা নারী চরম দুর্ভোগে পড়ে হয় আত্মহননের পথ বেছে নেয়, নয়ত বিপথগামী হতে বাধ্য হয়। এছাড়া রয়েছে পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যর্থতা ও উদাসীনতা। অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতাকে আড়াল করতে আইনি জটিলতাকে দায়ী করা হয়।

বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা, তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এখন দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের উৎসব চলছে। সমাজের প্রত্যেক নারী, শিশু, কিশোরী বালিকা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে যে কোন জায়গায় যে কোন সময়। জাতিসংঘের বিশেষ রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশে ৬০ শতাংশ বিবাহিত নারী জীবনে কোনো না কোনো সময়ে স্বামী কিংবা তার পরিবার বা উভয়ের দ্বারা নির্যাতিত হন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যমতে চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ৪৩১ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭১ জন। এ ছাড়া ২৩ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এভাবে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন এর মধ্যে দিয়েই পার হচ্ছে একটির পর একটি নারী দিবস।

এর শেষ কোথায়? যেকোনো মূল্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। নারীর প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, অসংখ্য নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে গড়া এই স্বাধীন বাংলাদেশে আর কোনো মা-বোন-প্রিয়তমার আর্তচিৎকার শুনতে চাই না।

চাই না আর কোনো মা-বোন-প্রিয়তমার আর্তচিৎকারে কেঁপে উঠুক কারো বুক কিংবা সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা সৌন্দর্যে ভরা এই বাংলার আকাশ-বাতাস।


লেখক : সাংবাদিক, সাংস্কৃতিককর্মী

01775-991276



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS