ভিডিও

বেশি করে গাছ লাগান

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২৪, ১১:১৭ রাত
আপডেট: এপ্রিল ২৮, ২০২৪, ১১:১৭ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

বাংলাদেশকে এক সময় বলা হতো সবুজ নির্মলের দেশ। সে পরিচিতি ক্রমেই নি®প্রভ হয়ে পড়ছে আমাদের ভুলে। দেশের নগরগুলো থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে সবুজের চিহ্ন। বন কেটে বসত হয়েছে সভ্যতার আদিপর্বে। কিন্তু বসতের প্রয়োজনেই মানুষকে বন সৃষ্টি করতে হয়েছে।

মানুষ থাকলে তার নি:শ্বাস-প্রশ্বাস, ফলমূল-শস্যের জন্য চার পাশে গাছগাছাালি, ফসলের মাঠও থাকতে হবে-এক সময় মানুষ সেই প্রয়োজন অস্বীকার করেনি। তার ভেতরে পরিবেশ চেতনা ও সৌন্দর্যবোধও কাজ করেছে। সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য একটি দেশে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী এর পরিমাণ ১০ শতাংশের নিচে। কোনো কোনো সূত্রের দাবি, বাংলাদেশে এখন বনভূমির পরিমাণ ৫ শতাংশের নিচে নেমেছে এবং দ্রুত তা কমছে। গণমাধ্যমেই আমরা প্রায়ই এমন খবর দেখি যে, শুধু সংরক্ষিত বনাঞ্চলেই নয়, বরং সারা দেশেই চলছে গাছ কাটার মহোৎসব।

জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বিপন্ন ছয়টি দেশের একটি, তাই এখানে যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের আগে তার পরিবেশগত প্রভাব বিচার করা জরুরি। বৃক্ষ ও মানুষ একে অপরের পরিপূরক। বায়ু মন্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেনের ভারসাম্য রক্ষার যে পরিমাণ গাছপালা থাকা প্রয়োজন তা না থাকার কারণে বায়ু মন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড’র পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গাছ কাটার মহোৎসব চলে সুন্দরবন থেকে শুরু করে প্রায় সর্বত্রই। সুন্দরবনে দশ-বিশ বছর আগেও যে পরিমাণ বৃক্ষ ছিল, তার অনেকটাই ফাঁকা হয়ে এসেছে বনখেকোদের হাতে পড়ে। গত শনিবার একটি জাতীয় দৈনিকে খবর ছিল শরিয়তপুরে ১ হাজার ৭০০ বৃক্ষ নিধন, টেন্ডারে বন বিভাগের গাছ বিক্রি। খবরে বলা হয়, শরীয়তপুরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই। তীব্র তাপপ্রবাহে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত।

ঠিক সেই সময় গাছ কেটে সাবাড় করছে বন বিভাগ। তীব্র তাপপ্রবাহ ও কম বৃষ্টিপাতের কারণে গ্রীষ্মকাল দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। ফলে বছরের বেশির ভাগ সময়ই জেলায় বিপজ্জনক মাত্রায় উত্তাপ থাকছে। উন্নয়নের নামে প্রায় বৃক্ষ শূন্য করে ফেলা হচ্ছে শরীয়তপুরের গুরুত্বপূর্ণ জনপদগুলোকে।  জানা যায়, গত কয়েক বছরে সরকারি ভাবে কাটা হয়েছে প্রায় কয়েক হাজার গাছ।

এত গাছ কাটা হলেও রোপণে নেওয়া হয়নি তেমন কোনো উদ্যোগ। গত অর্থ বছরে একটি গাছও রোপণ করেনি বনবিভাগ। বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বর্ষার ভরা মৌসুমেও স্বাভাবিক বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ নির্ভর হয়ে পড়েছে চাষাবাদ। এক সময় এখানে ছিল পর্যাপ্ত গাছপালা ও ঝোপঝাড়। এগুলো এখন প্রায় নি:শেষ। এ ছাড়া শরীয়তপুর সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নে জেলা পরিষদের শতবর্ষী বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলায় রোদে পুড়ছে পুরো জেলা। তপ্ত রোদে খাঁ খাঁ করছে জেলা শহর শরীয়তপুর।

উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এখন স্পষ্ট। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে নিয়মিতভাবে দাবদাহ, ঘূর্নিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগও বাড়ছে। এ ছাড়া অবাধে গাছ কেটে ফেললে সেটিও জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। কারণ গাছ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং বিপুল পরিমাণে বন উজাড় হলে বায়ুতে ক্ষতিকর এই গ্যাসের  পরিমাণ বেড়ে যায়।

অর্থাৎ বন ধ্বংস, গাছ ধ্বংস করে মানুষ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির পথ আরও উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। ব্যাপক শিল্পায়নের শুরু থেকে জীবাষ্ম জ্বালানির ব্যবহার যত বেড়েছে, পৃথিবীর বায়ু মন্ডলে বেড়েছে কার্বন গ্যাসের ঘনত্ব। আর এর প্রভাবে বাড়ছে বিশ্বের তাপমাত্রা, যা বদলে দিচ্ছে জলবায়ু। ডেকে আনছে বিপর্যয়। জলবায়ু পরিবর্তনের এই গতিকে আরও ত্বরান্বিত করছে বৃক্ষনিধন।

আমাদের বনায়নের জোরদার উদ্যোগ নেই, কিন্তু নানাভাবে বন ধ্বংসের অপক্রিয়া চলছেই। বিভিন্ন প্রভাবশালী গোষ্ঠী কিংবা অপশক্তির কুঠারাঘাতে নির্বিচার, নিষ্ঠুর কোপে বনসম্পদের বিনাশ ঘটছে। সংকুচিত হচ্ছে। মানুষের বসতির প্রসার ঘটায় এবং জমির ওপর মানুষের চাপ বাড়তে থাকায় জীবিকার প্রয়োজন, ভোগ-বিলাস, বিত্তের লালসা মানুষকে তাড়িত ও অন্ধ করে ফেলতে থাকলে এক শ্রেণির আত্মঘাতী মানুষ বন দখল ও তা উজাড় করে শিল্প-কারখানা, বাড়িঘর নির্মাণ, কৃষি জমির পরিমাণ বাড়ানোতে উন্মক্ত হয়ে ওঠে।

নানাভাবেই দেশের অতি মূল্যবান বনভূমি, বনজসম্পদ লুন্ঠিত হয়ে চলেছে। বনভূমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় দিন দিন প্রকৃতি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। আমরা বারবার বলছি, দেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধ করতে হলে বনভূমি রক্ষা করতে হবে।

তারপরও গাছকাটা এবং দখলবাজি কমছে না। এটা রোধে প্রশাসনিক তৎপরতার পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানোর কাজও করতে হবে। বৃক্ষ নিধন, জায়গা-জমি, বনভূমি দখলের সংস্কৃতির অবসান হওয়া দরকার।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS