ভিডিও

ফসলি জমি নষ্ট নয়

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ০৮:৪৬ রাত
আপডেট: এপ্রিল ২৯, ২০২৪, ০৮:৪৬ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

প্রতিনিয়ত কমছে কৃষিজমি। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, যেখানে-সেখানে কল-কারখানা স্থাপনের ফলে প্রতিনিয়ত কমে আসছে কৃষিজমি। আমাদের মোট ভূমির মাঝে কৃষি কাজে ব্যবহৃত হয় শতকরা সাড়ে ছেষট্টি ভাগ। অথচ প্রতিনিয়ত এই জমির পরিমাণ কমে আসছে।

সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক যুগে দেশের প্রায় সাতাশ লাখ একর কৃষিজমি চলে গেছে অকৃষি খাতে। এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। অন্য একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়, বাণিজ্যিক কারণে প্রতিদিন গড়ে ৬৯২ একর এবং নির্মাণকাজের কারণে এক হাজার হেক্টর জমি বিলীন হচ্ছে। দেশে কৃষিজমির পরিমাণ যদি এভাবে কমতে থাকে, তাহলে জমির অভাবে এক সময় কৃষিকাজের গতি থমকে যাবে।

দেশে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বাড়িঘর নির্মাণ এবং জলাভূমি ভরাট ও বনভূমি ধ্বংস করার আত্মবিলাসী প্রক্রিয়া। এভাবে চলতে থাকলে বসবাস উপযোগী পরিবেশই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, নিকট-ভবিষ্যতে সমগ্র জনগোষ্ঠী এক বিপর্যয়কর অবস্থায় গিয়ে পড়বে। বাংলাদেশ ছোট্ট একটি ভূখন্ড, অথচ জনসংখ্যা ১৬ কোটি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কৃষিজমি যদি এমন দ্রুত হারে কমতে থাকে, তাহলে এই জনসংখ্যার খাদ্যের জোগান দেয়া এক সময় কষ্টকর নয়, রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়বে।

এমনিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচু জমি নোনা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষিতেও তার বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ২০৫০ সাল নাগাদ উপকূলীয় অঞ্চলের একটি বড় অংশই নোনা পানিতে তলিয়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। নদী ও ভূগর্ভ নোনা পানি ক্রমে দেশের মধ্যাঞ্চলের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

ফসল, উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যে তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় মরুকরণের প্রভাব ক্রমেই বেশি করে দেখা যাচ্ছে। ভূগর্ভের পানির স্তর অত্যাধিক নিচে নেমে যাওয়ায় এখনই অনেক জায়গায় গভীর নলকূপেও পানি উঠে না। খাল-বিল, নদী-নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে যেতেও পারছে না।

এ অবস্থায় উত্তরাঞ্চলেও ফসল উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যেতে পারে। অথচ দেশের মোট জনসংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই ভূমির ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর বসবাসের লক্ষ্যেও জনবসতি পরিকল্পিত হওয়া প্রয়োজন।

ইটভাটাই বলি, আর অবকাঠামো বা আবাসন প্রকল্পই বলি, নানা উছিলায় যে কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে, এর প্রতিকার জরুরি। অবৈধ এবং নিয়মবহির্ভূত সব ইটভাটা বন্ধ করতে হবে। এটা সত্য, যতই দিন যাচ্ছে দেশের কৃষি জমি কমতে শুরু করেছে। ফলে দেশের সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, দেশে এখন কৃষিখানার সংখ্যা ১ কোটি ৬৮ লাখ ৮১ হাজার, যাদের অধীনে আবাদি জমি রয়েছে এক কোটি ৮৬ লাখ ৮১ হাজার একর। তবে ১১ বছরের ব্যবধানে দেশের মোট আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে চার লাখ ১৬ হাজার একর। এ হিসাবে গড়ে প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে ৩৭ হাজার ৮১৮ একর।

আমরা মনে করি, কৃষিজমি রক্ষায় সরকারের এখন কঠোর হওয়ার সময় এসেছে। জমির ব্যবহার বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি কৃষিজমি রক্ষায় প্রণয়ন করতে হবে সুনির্দিষ্ট আইন। একই সঙ্গে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে জমির অপব্যবহার রোধ করতে হবে। সর্বসাধারণের সচেতনতাও কৃষিজমি হারানোর সমাধানে সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করতে পারে। নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে জমির অপব্যবহার রোধ করতে হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS