ভিডিও

মে দিবস আসে যায়, শ্রমিক কী পায়?

রাহাত রূপান্তর

প্রকাশিত: মে ০১, ২০২৪, ০২:২৫ দুপুর
আপডেট: মে ০১, ২০২৪, ১১:৪৭ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

আজ মহান মে দিবস। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের ঐতিহাসিক দিন। বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশ শ্রমিকদের সম্মানে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পহেলা মে পালন করে। মে দিবস উদযাপনের উদ্দেশ্য থাকে শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা, মে দিবসের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্ক জানানো। কিন্তু মে দিবসের উদ্দেশ্য কতটা সফল হয়? শ্রমিকরা কী পায় এই দিনে?

গলা ফাটিয়ে, আঙুল উচিয়ে, মাইকে মে দিবসের আলোচনা হয়। অথচ শ্রমিক জানেই না আজ তাদের অধিকার আদায়ের দিবস। বরং মে দিবসে শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা বা রংবেরঙের আয়োজন করে কালো চশমা পড়া মালিকপক্ষ, রাজনৈতিক দল আর শ্রমিক সংগঠনের কোটিপতি নেতারা।

খুব জানতে ইচ্ছে হয়, অন্তত এইদিনে শ্রমিকরা মুক্তি পেয়েছে কি? মে দিবসে সব সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তবুও কিছু মানুষ রুটিরুজির সন্ধানে ভোর থেকে ছুটছে। অনেক শ্রমিকেরই ছুটি মেলেনি। অধিকার আদায়ের দিনেও তারা অধিকার বঞ্চিত। এমনও শোনা যায়, প্রভাবশালী একটি এনজিও মে দিবসেও শত শত নারী শ্রমিককে করায়। এই দিনের জন্য ওভারটাইমের পারিশ্রমিক তো দেওয়াই হয় না বরং কাজে যোগ না দিলে বেতন কর্তন করা হয়। শ্রমিকরা নিরুপায়। এক বেলা কাজ না করলে তাঁর পরিবারকে কাটাতে হবে অনাহারে।

দ্রব্যমূল্যে উর্ধ্বগতির বাজারে গত এক বছরে শ্রমিকের বেতন বাড়িয়েছে কয়টি প্রতিষ্ঠান? এমনকি বিভিন্ন অযুহাতে ঈদের বোনাস থেকেও বঞ্চিত হয় অসংখ্য শ্রমিক। কয়জন মালিক শ্রমিকের সাথে দেখা হলে মিষ্টিমুখে জিজ্ঞাসা করে ‘কেমন আছো?’ বরং মালিকের অফিসে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত।

অথচ মে দিবসের স্লোগানে বলা হয়, ‘মালিক শ্রমিক ভাই ভাই’। এই স্লোগানের যৌক্তিকতা কী? হ্যাঁ, যৌক্তিকতা তো একটা রয়েছে। এই স্লোগান দিলেই সরলমনা শ্রমিকরা আর অধিকারের বলবে না। ভাইয়ের(মালিক) বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে না। এদিকে মালিকপক্ষ যদি শ্রমিককে ভাই ভাবে, তাহলে বছরছুড়ে শ্রমিকের পরিবারে কোনো কষ্ট থাকার কথা নয়। কয়জন মালিক শ্রমিকের পারিবারিক খোঁজ নেয়? এক টেবিলে খেতে শ্রমিককে নিমন্ত্রণ করে?

প্রতিবছর মে দিবস আসে, চলে যায়। শ্রমিকদের ভাগ্যের দুয়ার খোলে না। বিপ্লবের এত বছর পরও শ্রমিকদের নায্য অধিকার কতটুকু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? শ্রমিকরা কি তাদের কর্মস্থলে কাজের উপযুক্ত পরিবেশ, সঠিক কর্মঘণ্টা কিংবা অধিক কর্মঘণ্টার জন্য বাড়তি কোনো মজুরি পাচ্ছে? বরং তাদের শ্রমকে পুঁজি করে একদল মুনাফাখোর কিংবা মালিকপক্ষ সুবিধা নিয়ে আরও ফুলে ফেঁপে উঠছে। শিল্প কারখানার মালিকরা সরকারের নানা সুযোগ-সুবিধা পায়। যেমন, করোনার সময় প্রণোদনা পেয়েছে। তারপরও অনেক কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বকেয়া বেতন না দেয়ার, শ্রমিক ছাঁটাই করার। তাই এত বছর পরও প্রশ্ন থাকে, শ্রমিকদের অবস্থার উল্লেখযোগ্য কী পরিবর্তন হয়েছে?

শ্রমিক দিবসে বড় বড় ব্যানার বানিয়ে যারা সামনের সারিতে দাঁড়ায়, তারা কেউ শ্রমিক নয়। শ্রমিকের ঘামের সাথে বেইমানি করা শ্রমিক সংগঠনের কোটিপতি নেতা। বলা যায়, মে দিবস পালন শ্রমিকদের জন্য বিলাসিতা!  

পরিশেষে প্রত্যাশা থাকবে, শ্রমিকদের মে দিবস হোক শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিন। তারা সংকোচবিহীন কথা বলুক। ভালো থাকুক শ্রমিকরা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS