ভিডিও

মধুর আমার মায়ের হাসি

মাহমুদ হোসেন পিন্টু

প্রকাশিত: মে ১২, ২০২৪, ০৭:২৩ বিকাল
আপডেট: মে ১২, ২০২৪, ০৭:২৩ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

আজ বিশ্ব 'মা' দিবস। 'মা' শব্দের মধ্যেই পৃথিবীর সব ভালবাসা আবেগের সম্মিলন। পৃথিবীর সব মানুষের বুকের গহীনে রয়েছে মায়ের অপরিসীম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। মায়ের অনুগ্রহ ছাড়া কোনো প্রাণীরই প্রাণ ধারণ করা সম্ভব নয়। সন্তানের জন্য মায়ের আবেগ অনন্তকালের। অন্যদিকে সন্তানের কাছে মায়ের কোল পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়।

'মা' ছোট শব্দের আড়ালে লুকিয়ে আছে অনেক কষ্ট, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের গল্প। মা'র তুলনা 'মা' নিজেই। পৃথিবীর সব মায়া, মমতা, স্নেহ, আদর, শাসন একীভূত হয়েই যেন গড়ে উঠে মা নামের এক অদ্ভুত উদার সত্তাটি, যিনি নিঃস্বার্থ ভাবে অকৃত্রিম ভালোবাসায় সারাজীবন আগলে রাখেন সন্তানকে। যার সব দুঃখ-বেদনা নিমেষেই মিলিয়ে যায় সন্তানের মুখে শোনা একটি বাক্য- 'মা, তোমাকে ভালবাসি'!

'মা' একটি সর্বজনীন শব্দ। শিশুর দুটি ঠোঁট ফাঁক করে যে শব্দটি প্রথম বের হয়, এটি হলো 'মা'। সন্তানের কাছে 'মা' মানে হলো তার দুনিয়া। সমগ্র পৃথিবী যেন হাতের মুঠোয়, জন্মের আগে যখন মায়ের গর্ভে শিশু বড় হয়, তখন সে অবচেতনেই মাকে তার সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মেনে নেয়। এরপর যখন পৃথিবীর আলো দেখে তখন বুকে টেনে নেন মা। ক্ষুধায় বুকের দুধ খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখেন মা।

শীতে নিবিড় পরশে উষ্ণতা দেন মা। বাবা বাইরের দুনিয়াটা দেখেন, পরিবারের অন্যরা নিজ নিজ কাজ করেন; কিন্তু শিশুটির কাছে মা-ই হলো তার পৃথিবী। আমার মা এর ব্যতিক্রম নন। আমার বালকবেলার সব স্মৃতিই মাকে নিয়ে।

ছোটবেলায় আমি ঘুমাতাম দাদির ঘরে দাদির সাথে, ঘুম ভাঙত মায়ের কোলে মায়ের ঘরে। এটা কীভাবে হলো! সংসারের যাবতীয় কাজ শেষ করে  আসলে মা ঘুমন্ত অবস্থায় কোলে করে বেয়ে নিজের ঘরে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিতেন। অর্থাৎ মাকে ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। মা'র শরীরের একটা শুদ্ধ পবিত্র ঘ্রাণ আমাকে আপ্লূত করতো। একটু বড় হওয়ার পরই হাহাকার লেগে গেল।

বাড়িতে শিশুশিক্ষার গন্ডি পেরোনোর পর আমার বাবা আমাকে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করিয়ে দিলেন তৎকালীন বিখ্যাত অমৃত পাঠশালায়। আমার নিজেকে সুতো ছেঁড়া ঘুড়ির মতো মনে হতে লাগল। আমি যেন বাঁধনহারা উদ্দেশ্যহীন কোনো ঘুড়ি। আমি মাতৃহারা। অর্থাৎ মা থেকে দূরে চলে যাওয়া হলো এক ধরনের মৃত্যুর মতো। পাঠশালায় নিরবে চোখের পানি গড়িয়ে পরতো টুপটাপ।

আমি পাঠশালা হতে না ফেরা পর্যন্ত মাযের কী যে অস্থিরতা। বাড়ির সদর দরজায় অপেক্ষায় থাকতেন। অসুস্থ হলে রাত জেগে সেবা করতেন, গরমে ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলে ‘লোডশেডিং’ হাতপাখা দিয়ে  বাতাস করা মায়েদের অনন্য এক ধর্ম। সন্তান বড় করতে মা-দের যে ত্যাগ ও সতর্কতা পৃথিবীতে সব কিছুর উর্ধ্বে। মা মুরগী যেমন ডানার নিচে একপাল বাচ্চাকে আশ্রয় দিয়ে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।

মা ঠিক তেমনি বড় আশ্রয়। শিক্ষার ক্ষেত্রে মা-দের ভুমিকা  সবচেয়ে বেশি। বাবারা শুধু বেতন বই পত্রে অর্থ দিয়েই খালাস। মা সঙ্গে লেগে থেকে স্কুলে কোচিং এ আনা নেয়া প্রাইভেট শিক্ষক নিয়োগ দেয়া। পড়াশুনা আদায় করে নেয়া মনিটরিং করা সব কিছু করেন মা।

আমরা ছিলাম তিন ভাই, এক বোন। মাছ, মাংস, ফলমূলসহ সব খাবারই ৫ ভাগ হতো। একটু বড় হয়ে হিসাব কষলাম- আমরা তো ৬ জন ছিলাম, সেখানে মা ছিলেন। তাঁরও তো খাবারের দরকার। তাঁর কোনো ভাগ নেই কেন? ভাগ তো হওয়া উচিত ছিল ছয়টা। মা নিজের ভাগের জন্য কিছু রাখতেন না। এটা যখন বুঝতে পারলাম, তখন খুব কষ্ট হতো। কান্না পেত।

পৃথিবীতে 'মা দিবস' কিভাবে এলো তা একটু দেখা যাক, অ্যানা জার্ভিস নারীদের স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করতেন। তাঁর মেয়ে ছিল  নাম এনা মারিয়া রিভস তিনি তাঁর মায়ের কাজকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য মা দিবস  প্রবর্তন  করেন। একদিন অ্যানা জার্ভিস তার ছোট মেয়ের সামনে হাতজোড় করে বলেছিল, "আমি প্রার্থনা করি কোন একদিন কেউ না কেউ এসে কোন মায়ের জন্য একটা দিন উৎসর্গ করুক।

কারণ তারা প্রতিদিন মনুষ্যত্বের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে চলেছেন। এটি তাদের অধিকার"। মায়ের এই প্রার্থনা এনার হৃদয় কে নাড়া দেয় তাই এনা তার মায়ের মৃত্যুর এই দিনটি বিশ্বের সকল মায়ের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। ১৯০৫ সালে এনা তাঁর সানডে স্কুলে প্রথম মাতৃ দিবস হিসেবে এই দিনটি পালন করেন। মায়েদের সম্মানে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস বা যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উইড্র উইলসন মে মাসে দ্বিতীয় রবিবারকে "মা দিবস" হিসেবে ঘোষণা করেন। আর এইভাবে সারা বিশ্বে মা দিবসের যাত্রা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি এখন বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব দেশে মা দিবস পালিত হয়ে আসছে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি বিশ্বাস করি মায়ের আদর, স্নেহ, ত্যাগ,কোন দিবসে বা একটা বিশেষ দিনে আবদ্ধ করতে চাই না। প্রতিদিন প্রতিমুহূর্ত আমার মা দিবস।

প্রিয় কণ্ঠশিল্পী জেমস এর মা কে নিয়ে একটি গানের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে মা দিবসের এ লিখা সমাপ্তির চেষ্টা করছি, "১০ মাস ১০ দিন ধরে গর্ভে ধারণ/কষ্টের তীব্রতায় করেছে আমায় লালন/মা হঠাৎ কোথায় না বলে হারিয়ে গেল।/ জন্মান্তরের বাঁধন কোথা হারাল?/সবাই বলে ওই আকাশে লুকিয়ে আছে /খুঁজে দেখ, পাবে দূর নক্ষত্র মাঝে/রাতের তারা আমায় কি তুই বলতে পারিস /কোথায় আছে?

কেমন আছে মা?/ভোরের তারা রাতের তারা/মাকে জানিয়ে দিস/অনেক কেঁদেছি আর কাঁদতে পারি না/মায়ের কোলে শুয়ে হারানো সে সুখ/ অন্য মুখে খুঁজে ফিরি দেই প্রিয় মুখ/অনেক ঋণের জালে মাগো বেঁধেছিলে তাই/বিষাদের অভয়ারণ্যে ভয় তবু পাই/ সবাই বলে ঐ আকাশে লুকিয়ে আছে/খুঁজে দেখ দূর নক্ষত্র মাঝে /রাতের তারা......কাঁদতে পারি না!"মধুর আমার মায়ের হাসি



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS