ভিডিও

‘মা’ পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম ডাক

রবিউল ইসলাম রবীন

প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৪, ০৬:২৯ বিকাল
আপডেট: মে ১৪, ২০২৪, ০৬:২৯ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

মা অসুস্থ, কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাড়ি যেতে হবে। অফিসের বড় কর্তার কাছে ছুটি চেয়ে  ছুটি পেলেন না। তাই চাকুরি ছেড়ে দিতে হলো তাঁকে। মায়ের চিঠি, বাড়ি যেতে হবে। তখন সন্ধা নেমে এসেছে। শুরু হয়েছে ভীষণ ঝড়-বাদল। দামোদরের তীরে পোঁছে  ঈশ্বরচন্দ্র দেখলেন নদী পার হবার মতো একটি নৌকাও ঘাটে নেই। কিন্তু তাঁকে মায়ের কাছে যেতেই হবে। মা ডেকেছে।

সেই ঝড়ের রাতে তিনি খরস্রোতা দামোদোর নদী সাঁতরে পাড়ি দিলেন। একটা সময় ক্লান্ত শরীরে মা ভগবতি দেবীর কাছে পৌছালেন। ছেলে আসবে, মা জানতেন। এই হলো মা’য়েদের আত্মবিশ্বাস সন্তানকে ঘিরে। পৃথিবীতে এই আত্মবিশ্বাসের চেয়ে আর কোন বড় আত্মবিশ্বাস নেই। তাই জগতে ’ মা’ই শ্রেষ্ঠ। ’মা’ পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম ডাক। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম একটি সম্পর্কের নাম।

মা শব্দের অতলে লুকোনা থাকে গভীর স্নেহ, অতল শ্রদ্ধা। সুখে-দুঃখে সারাজীবন পাশে কেউ থাকুক না থাকুক, মা কিন্তু কাউকে ছেড়ে যান না। তাই আমাদের সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে আছেন মা। পৃথিবীতে ভুমিষ্ঠ হওয়ার পর আমাদের প্রথম পরিচয় হয় মায়ের সাথে। মায়ের কারণেই মানবশিশু সুন্দর এই পৃথিবীর দেখা পায়। তাই মা’ই শ্রেষ্ঠ সব দিক থেকে।

আমাদের সকল চাওয়ার ঠিকানা মনে হয় মা’য়ের কাছে। মা’কে সবচেয়ে ভরসা করা যায়। যিনি নিজের জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঢেলে দিয়ে সন্তানের জীবন রক্ষা করে। সব সম্পর্ক আলগা হয়ে গেলেও মা’র সাথে সম্পর্ক আলগা হয় না। বাবার চেয়ে দায়ত্বশীল কোন পুরুষ হয় না আর মায়ের চেয়ে যত্নবান কোন নারী হয় না।

পৃথিবীর সকল মায়েদের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য প্রতি বছর মে মাসের ২য় রবিবার মা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এইদিন যথাযোগ্য ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মা দিবস পালিত হয়ে থাকে। প্রতিটি সন্তানের কাছে সবচেয়ে প্রিয় হলো তার মা। মায়ের কাছে তার ঋণও অপরিশোধ্য। দীর্ঘ এক সময়ে মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠে মানবশিশু। ভুমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে সে মায়ের একজন সন্তান মায়ের কোলে আশ্রয় গ্রহণ করে। সে আশ্রয় নিরাপদের।

সে আশ্রয়ের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। সব সময় মা একজন সন্তানের মঙ্গল নিয়ে ভাবে। তাকে সংসার দেখতে হয়, নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে। মায়েদের কাজের কোন সীমারেখা নেই। মায়েদের ছুটি নেই, বিশ্রাম নেই, আরাম নেই, ক্ষুধা নেই, ঘুম নেই। শুধু নেই আর নেই। এত কিছুর পর তার নিজস্ব কোন চাওয়াও নেই। কোন অভিযোগ নেই, অনুরোধ নেই,অভিমান নেই।

এত ভার কেমন করে তিনি নেন? আমরা কি তা অনুভব করি? আমরা কি তা বুঝতে চেষ্টা করি। আমাদের সব চাওয়া মায়ের কাছে, বাবা থাকলেও। আমাদের সব আশ্রয় মায়েদের কাছে। সে আশ্রয়ে কি যে শান্তি। আর মায়ের গায়ের গন্ধ যেন জগতের সব গন্ধ থেকে উৎকৃষ্ট। যাঁরা তা জীবনে অনুভব করেছে, সেই-ই জানে, কি তা। কি শান্তি! আহা-হা! মা থাকা এক অনুভূতি না থাকা যেন অরেক অনুভূতি।

মহান মুক্তিযুদ্ধের একটি সত্য ঘটনা বলি। ’মা কতদিন ভাত খাই না।। আমার জন্য ভাত নিয়ে এসো।’ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদের এটিই ছিল তার মায়ের কাছে শেষ অনুরোধ। বীর মুক্তিযোদ্ধা  আজাদ পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে। বন্দি আছেন সে। মাকে জানিয়েছেন ভাত খাওয়ার কথা। মা ভাত নিয়ে থানায় যান। গিয়ে দেখেন ছেলে নেই। ঘাতকরা তাঁকে হত্যা করেছে।

সেই থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আজাদের মা ভাত খান নি। ১৯৭১ সালের ৩০ আগষ্ট। সেই রাতে পাক সেনারা গেরিলা আজাদের বাড়িতে হামলা চালায়। ধারা পড়েন ক্র্যাক প্লাটুনের একদল তেজি মুক্তিযোদ্ধা। সেই দলের বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদকে ধরে নিয়ে গিয়ে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS