ভিডিও

আইন শৃঙ্খলায় নজর দিন

প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২৪, ১০:০২ রাত
আপডেট: মে ১৮, ২০২৪, ১০:০২ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

যতই দিন যাচ্ছে সমাজে নারী নির্যাতন-ধর্ষণ, খুন বাড়ছে। দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির পাশাপাশি হানাহানি, খুন, ধর্ষণ, হামলা বেড়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী-পুরুষ হত্যার ঘটনা ঘটছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৭ জনকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এসব অপরাধের বাইরেও আরও যে সব ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে-তার সবই পত্র-পত্রিকায় আসে না।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবির) এক ছাত্রীকে লোকাল বাসে শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে গত সোমবার উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। ২৪ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে না পারায় সাত দফা দাবিতে টায়ার জ্বালিয়ে পাঁচ ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে ঘটনার দিন গতকাল রোববার অভিযুক্তকে গ্রেফতারসহ বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

উল্লেখ্য, গত রোববার সকাল ১০টার দিকে তিনি যশোর শহর থেকে লোকাল বাসে করে ক্যাম্পাসে আসছিলেন। এ সময় তাকে মাসুদ নামের এক যুবক (যাত্রী) গায়ে স্পর্শ করে শ্লীলতাহানি করেন। পরে ঘটনা জানাজানি হলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য উপস্থিত হয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা ফিরে যান। তবে ২৪ ঘন্টা পরও অভিযুক্ত গ্রেফতার না হওয়ায় গত সোমবার দুপুরে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল বুধবারের একটি পত্রিকার শিরোনামগুলো উল্লেখ করলে বোঝা যাবে-আমরা কোথায় চলেছি। ‘বগুড়ায় ছুরিকাঘাতে যুবক খুন’, ‘নাইট ডিউটিতে স্বামী, ঘরে ঢুকে পোশাককর্মীকে ধর্ষণ’, ‘স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা’, ‘খালু ও খালাতো ভাই গ্রেফতার’, ‘গাজীপুরে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ডাকাতি’, ‘চীনা নাগরিক আহত’ ‘আসামির স্ত্রীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মারধরের ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ আদালতের’, ‘বেতাগীতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ চেয়ারম্যান প্রার্থী ও চালক ‘আটক’, ‘চেতনানাশক খাবার খেয়ে ৭ জন অচেতন, মালামাল লুট, ‘ধর্ষণের পর শিশু হত্যা দোষীদের ফাঁসির দাবি’, ‘বগুড়ায় বন্ধুর ছুরিকাঘাতে যুবক খুন’, ‘গোমস্তাপুরে কলেজ ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার’, ‘নারীর শ্লীলতাহানি যুবককে গাছে বেঁধে মারধরের ঘটনায় তোলপাড়’, ইত্যাদি।

আইন শৃঙ্খলার সামগ্রিক অবস্থা আর যাই হোক স্বস্তিদায়ক নয়। হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণসহ নানা অপরাধ বেড়েই চলছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলতে হবে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা ও আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণেও খুনের ঘটনা ঘটে। তার অনেক উদাহরণও পাওয়া যাবে।

আমরা নানা রকম সামাজিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছি। পা পিছলে ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছি। কি সামাজিক ক্ষেত্রে, কি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, সর্বক্ষেত্রেই অবক্ষয়। সামাজিক মূল্যবোধ তথা ধৈর্য, উদারতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়নতা, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, নান্দনিক সৃষ্টিশীলতা, দেশপ্রেম, কল্যাণ বোধ ও পারস্পরিক মমতাবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলি লোপ পাওয়ার কারণেই সামাজিক অবক্ষয় দেখা দেয়-যা বর্তমান সমাজে প্রকট।

আরেকটা কথা উল্লেখ না করলেই নয়, রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় না পেলে কিন্তু সহজেই দমন করা যায় এসব অপরাধীদের। কিন্তু এসব অপরাধীরা থাকে কোনো না কোনো রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়ে। যার দরুন সহজেই এসব অপরাধীদের স্পর্শ করা যায় না। আমাদের এ কথাও ভাবতে হবে সামাজিক নিরাপত্তা আজ ভুলুন্ঠিত।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, দেশের সামগ্রিক যে অবক্ষয়ের চিত্র এর থেকে পরিত্রাণের কোনো পথই কি আমাদের খোলা নেই? যারা সমাজকে, রাষ্ট্রকে পদে পদে কলুষিত করছে, সমাজকে ভারসাম্যহীন ও দূষিত করে তুলছে, সমাজের মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার ক্ষুন্ন করছে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। চারদিকে যে সামাজিক অবক্ষয় চলছে, চলছে তারুণ্যের অবক্ষয়- এর প্রতিষেধক বের করতে হবে।

এখন পেশাদার সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের ছত্র ছায়ায় লালিত সন্ত্রাসীরাও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক পরিচয়ধারী অপরাধীরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকেও তোয়াক্কা করছে না। এ অবস্থাকে যদি আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করা হয়, তাহলে নিয়ন্ত্রণের অর্থই বদলে যায়।

আমাদের মতে, অপরাধী যেই হোক আইন প্রয়োগে আইন শৃৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় হয়ে উঠলে অনেক অনভিপ্রেত ঘটনা এড়ানো যাবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা সচেতন হবেন- এমনটিই কাম্য।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS