ভিডিও

ভবিষ্যৎ প্রজন্মই একমাত্র ভরসা

তপন কুমার ঘোষ

প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৪, ০৮:০৬ রাত
আপডেট: মে ২৯, ২০২৪, ০৮:০৬ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

একটা ছেলে-মেয়ে কেন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়? অনেকেই হয়তো বলবেন প্রকৃতির নিয়ম তাই। আমার মনে হয় শুধু প্রকৃতির নিয়ম নয়, প্রত্যেকটা মানুষই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় কিছু স্বপ্ন আর ভবিষ্যতের চিন্তা করে। কারণ, যৌবন কারো চিরস্থায়ী নয়। সমাজে আজ যারা প্রবীণ আছে, তাঁরাও একসময় শিশু ছিল। তারপর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শিশু থেকে কিশোর, কিশোর থেকে যুবক, যুবক থেকে বৃদ্ধ। এভাবেই একসময় বিদায় জানাবে পৃথিবীকে।

মানুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পরে সন্তান জন্ম দেয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার কারণ কি? হয়তো অনেকেই বলবেন বংশ রক্ষা করার জন্যই মানুষ সন্তানের জন্ম দেয়। আমার মনে হয়, শুধু বংশ রক্ষা করার জন্য কেউ সন্তান জন্ম দেয় না। প্রত্যেকটা মানুষই বৃদ্ধ বয়সে পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

তাই শেষ বয়সে যাতে কারো অবহেলার শিকার হতে না হয়, সেই ভেবেই সন্তানের জন্ম দেয়। সন্তানকে ঘিরেই থাকে বাবা-মায়ের স্বপ্ন। কিন্তু বর্তমান সমাজে অধিকাংশ বাবা-মায়ের জীবনে এই সুখের স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে নেমে আসছে বাস্তব জীবনে।

আজকাল শহরের অলিতে গলিতে দেখা মেলে অসংখ্য বাবা-মায়ের। শুধু শহরে বললে ভুল হবে, গ্রামগঞ্জে ও এদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। যে বয়সে ছেলে-ছেলে বউয়ের সেবা যত্ন, নাতি-নাতনির ভালোবাসা, নাতি-নাতনিদের নিয়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে থাকার কথা। সেই বয়সে তাঁরা শহরের অলিতে গলিতে, ফুটপাতে, ফুটওভার ব্রিজের উপর বসে ভিক্ষা করছে।

শরীর না চললে ও পেটের জ্বালা রোজ তাঁদের রাস্তায় এনে দাঁড় করাচ্ছে। তিন বেলা পেট ভরানোর জন্য রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করছে। এদের কথা ভাবলে মনে হয়, শেষ বয়সে ভিক্ষা করবে বলেই কি সৃষ্টিকর্তার কাছে সন্তান চেয়ে এনেছিল? শেষ বয়সে ভিক্ষা করবে বলেই কি 'মায়েরা' দশমাস দশদিন গর্ভে ধারণ করে, প্রসব বেদনা সহ্য করে সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছিল?

শেষ বয়সে ভিক্ষা করবে বলেই কি নিজেদের শখ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে ছেলে-মেয়েকে মানুষ করেছিল? এদের কথা ভাবলেই চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসে। 'কিন্তু করার তো কিছু নাই, কারণ আমিও যে অসহায়'। 
জানি লেখাটা পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পরে, হয়তো কিছু লোক এটা পড়বে। তারপর পুরাতন পত্রিকার মাঝে এটাও নিজের নাম লেখাবে।

কয়েকদিন পরে ফেরিওয়ালার কাঁধে চড়ে পুরাতন কাগজ ফ্যাক্টরীতে গিয়ে আবার নতুন রূপ নেবে। আমার রাত জেগে লেখা কথাগুলো ও হয়তো কেউ মনে রাখবে না। তবুও না লিখে পারলাম না। কারণ, যদি কারো মনে থাকে বা কেউ যদি পড়ে এদের নিয়ে একটু ভাবে।

আমি একা হয়তো এদের জন্য কিছুই করতে পারবো না। কিন্তু যদি আমরা চেষ্টা করি তাহলে হয়তো এই অসহায় মানুষগুলোকে তিন বেলা পেট ভরানোর জন্য আর রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করতে হবে না।

সর্বশেষ একটা কথা বলবো, মনে রাখবেন, আজ যারা বয়সের ভারে পেটের তাগিদে ভিক্ষা করছে, একসময় তারা ও কর্মক্ষম যুবক ছিলেন। আর আজ যারা যৌবনের বলে নিজেদের সুখের জন্য, এই মানুষগুলোকে রাস্তায় বের করেছি, আমাদেরও এক সময় এদের মতো বার্ধক্য বরণ করে নিতে হবে।


লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি মুকসুদপুর কলেজ, গোপালগঞ্জ।

taponghosh960@gmail.com

01748-149210



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS