ভিডিও

সাগরপথে মানব পাচার

প্রকাশিত: জুন ০২, ২০২৪, ১১:০৬ রাত
আপডেট: জুন ০২, ২০২৪, ১১:০৬ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

অভিবাসীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সীমান্ত ভূমধ্যসাগর। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করতে গিয়ে গত ১০ বছরে কমপক্ষে ৬৪ হাজার অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে।

অভিবাসন বিষয়ক জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) এ রিপোর্ট দিয়েছে। এই হিসাবে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৩৬ হাজার। রিপোর্টে বলা হয়েছে, পানিতে ডুবে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগই সমুদ্রে ডুবেছেন। এর মধ্যে আবার ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা গেছেন কমপক্ষে ২৭ হাজার অভিবাসী প্রত্যাশী।

উত্তর আফ্রিকা থেকে ইউরোপের দক্ষিণে পৌঁছানোর জন্য এই সাগরকে দেখা হয় গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে। আইওএম বলেছে, তারা যে সংখ্যা উপস্থাপন করেছে তা প্রকৃত সংখ্যার ভগ্নাংশ মাত্র। বার্লিনে আইওএমের ডাটা এনালিস্ট আঁন্দ্রে গারসিয়া বোরজা বলেন, ভূমধ্যসাগর হলো চরম ভয়াবহ এলাকা। এই পথে যাত্রা চরমমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ।

তিনি বলেন কোনো রকম নিরাপত্তা ছাড়া এসব মানুষ যুদ্ধ কবলিত এলাকা থেকে পালাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে তারা কী নির্মমতার মুখোমুখি। এর মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে তারা কী নির্মমতার মুখোমুখি। ২০২৩ সালে বিশ্ব জুড়ে অভিবাসন রুটে মারা গেছেন কমপক্ষে ৮৫০০ মানুষ। এক দশক আগে আইওএম ডাটা সংগ্রহ শুরু করে। তখন থেকে এটাই ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর। এখন পর্যন্ত এ বছর যে পরিমাণ মানুষ এভাবে মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা কম উদ্বেগের নয়।

উন্নত জীবনের আশায় প্রবল ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশের চেষ্টা করেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা। অনেকেরই ইউরোপে ঢোকার স্বপ্ন উত্তাল সমুদ্রে ডুবেই শেষ হয়। এর আগে গত নভেম্বরে ভূমধ্যসাগরের সিরিয়া উপকূল থেকে এক অপ্রাপ্ত বয়স্ক সহ ৩০ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে ফরাসি দাতব্যসংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের (এমএসএফ) উদ্ধাকারী জাহাজ জিও ব্যারেন্টস।

সেখান থেকে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা জানান, বাংলাদেশ থেকে প্লেনে বাহরাইন ও ইস্তাম্বুল হয়ে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি পৌছান তারা। সমুদ্র যাত্রার আগে মানব পাচারের দালালদের কাছে তিন-চারদিন বন্দি থাকতে হয়। খাবার ও পানির কষ্ট ছাড়াও সইতে হয় অবর্ণনীয় নির্যাতন। ইউরোপ পৌছে যাওয়া বা বিভিন্ন সময় নৌকা থেকে উদ্ধার পাওয়া অনেকেই নির্যাতনের শিকার হওয়া ঘটনা জানিয়েছেন।

সাধারণত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো থেকেই উদ্বাস্তুু যাওয়ার সংখ্যাই বেশি। এর যায়  প্রাণ বাঁচাতে। আর এশিয়া আফ্রিকা থেকে বাকিরা যায় উন্নত জীবনের আশায়। মানবপাচার বাংলাদেশের অন্যতম শিরপীড়ায় পরিণত হয়েছে। জল, স্থল ও আকাশপথে প্রতিদিন মানবপাচার চলছে। মূলত জীবন ও জীবিকার কারণে দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে, দারিদ্র্যের পীড়নে মানুষ পাড়ি জমাচ্ছেন বিদেশে।

এসব মানুষের বেশির ভাগই প্রতারিত হচ্ছে, হচ্ছে সর্বস্বান্ত। একটা সময় শুধু রোহিঙ্গা পুরুষরা কাজের তাগিদে সাগর পাড়ি দিতেন। এখন কিন্তু নারী ও শিশু পাচারও বাড়ছে। অবৈধভাবে দেশের বাইরে যাওয়ায় বাংলাদেশে অনেক অভিবাসী মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছেন। চলাচল সীমাবদ্ধতা, ঋণের চক্রে পড়া, জোরপূর্বক শ্রম, যৌন নির্যাতন, জোরপূর্বক বিয়ে এবং দাসত্বের শোষণমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন অভিবাসীরা।

দরিদ্র ও প্রান্তিক নারী-পুরুষ এবং শিশুরাই মানব পাচারকারীদের লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছেন। বাংলাদেশ থেকে যেসব মানুষ পাচারের শিকার হন, তাদের ৫১ শতাংশই পাচারকারীদের ফাঁদে পড়ে ভাগ্য ফেরাতে গিয়ে বা অর্থনৈতিক কারণে। অবৈধভাবে বিদেশ গমনের ভয়াবহতা আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক-এমনটি কাম্য।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS